আলোচনা: কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে বৈঠক জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির। শনিবার দিল্লিতে। পিটিআই
অমরনাথ-কাণ্ডের চার দিন পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে দেখা করলেন জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি। বৈঠক সেরে জানালেন, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়াতেই ওই হামলা হয়েছে। ওই ঘটনায় রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে সমর্থনের জন্য সব রাজনৈতিক দলকে ধন্যবাদ জানালেন। সেই সঙ্গেই নাম না করে পাকিস্তানকেও বিঁধলেন।
এগুলো খুব অপ্রত্যাশিত ছিল না। কিন্তু এর পরে তিনি যা বললেন, চমকটা সেখানেই। এই প্রথম তাঁর মুখে শোনা গেল চিনের কথা। মেহবুবার বক্তব্য, কাশ্মীরের ব্যাপারে চিনও এখন নাক গলাতে শুরু করেছে।
আজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরে মেহবুবা বলেন, ‘‘এই লড়াই আইন-শৃঙ্খলার নয়। বাইরের শক্তিও সামিল। অনুপ্রবেশ হচ্ছে। বাইরে থেকে জঙ্গি আসছে রাজ্যে অস্থিরতা ছড়াতে। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে চিনও এখন হস্তক্ষেপ করতে শুরু করেছে।’’
চিন ঠিক কী ভূমিকা পালন করছে, সেটি নিয়ে প্রথমে মুখ না খুললেও দিনভর বিতর্কের মুখে রাতে একটা যুক্তি সাজানোর চেষ্টা করেন মেহবুবা। বলেন, গোটা দেশ যে ভাবে সন্ত্রাসের নিন্দা করছে, সেখানে চিনের মতো দেশের নীরবতায় তিনি অবাক। আসলে মেহবুবা এমন সময় এই মন্তব্য করলেন, যখন চিন-ভারত স্নায়ুযু্দ্ধ তুঙ্গে। ভুটানের ডোকলাম উপত্যকা নিয়ে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মধ্যেই ক’দিন আগে ভারতের উপর চাপ বাড়াতে কাশ্মীর প্রশ্নে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে চিন। সব মিলিয়ে চিন নিয়ে প্রবল চাপের মুখে নরেন্দ্র মোদী সরকার সংসদের অধিবেশনের ঠিক আগে বিরোধী দলগুলির সঙ্গে বৈঠক করছেন। আগামিকালও আর এক দফা বৈঠক হবে। থাকবেন মোদী।
আজ মেহবুবা যে ভাবে চিনের প্রসঙ্গে টানলেন, তাতে অনেকেরই ধারণা, এটি তাঁর ঘুরে দাঁড়ানোর কৌশল। বিজেপির চাপে এখন কোণঠাসা মেহবুবা। কারণ, বিজেপির উগ্র জাতীয়তাবাদী অবস্থানের জন্য উপত্যকায় তাঁকে আপস করতে হয়েছে অবস্থানের সঙ্গে। আপস করতে হয়েছে জনপ্রিয়তার সঙ্গেও ।
অস্বস্তিতে পড়ে আজ চিনের কথা বলে মেহবুবা আসলে কৌশলে কেন্দ্রকেই মনে করাচ্ছেন, যাতে তারা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গেও কথা বলে। পাকিস্তান-চিন জুটি যখন কাশ্মীরে অস্থিরতা তৈরি করছে, তখন উপত্যকার সকলকেই সঙ্গে নিতে হবে। বিজেপি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ব্যাপারে কড়া অবস্থান নিয়েছে। ফলে সমস্যা বেড়েছে মেহবুবার। আজ দিল্লি আসার আগে এক সাক্ষাৎকারে মেহবুবা বলেন, ‘‘অমরনাথের ঘটনার বেনজির নিন্দা করেছে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। তাদের সঙ্গেও কথা বলা উচিত। তার জন্য দরকার উপযুক্ত পরিবেশ।’’
অমরনাথের ঘটনার পরও জম্মুতে তাদের প্রচারকদের সভা বাতিল করেনি আরএসএস। আগামী সপ্তাহেই তা শুরু হচ্ছে। পিডিপি সূত্রের বক্তব্য, এখন কাশ্মীর নিয়ে সঙ্ঘ উগ্র অবস্থান নিলে ফের হিতে বিপরীত হতে পারে। অমরনাথের পরে তারা সভা পিছিয়ে দিতে পারত। তাতে উপত্যকায় স্বস্তি পেতেন মেহবুবা। কিন্তু সঙ্ঘ সেটা না করায় কৌশলী মেহবুবা ঘুরপথে চাপ বাড়ালেন কেন্দ্রের উপরেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy