Advertisement
০৫ মে ২০২৪

অমরনাথ হামলার নিন্দায় সরব গোটা বিশ্ব, চুপ শুধু চিন ও পাকিস্তান

গোয়েন্দাদের ধারণা, আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণে কাশ্মীরে বড়সড় হামলার পরিকল্পনা নিয়েছে জঙ্গিরা। তাঁদের এ-ও ধারণা, তীর্থযাত্রীদের উপরে হামলায় মদত রয়েছে পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের।

প্রতিবাদ: অমরনাথে জঙ্গি হামলার নিন্দায় জ্বালানো হচ্ছে পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ছবি। বুধবার ইলাহাবাদে। পিটিআই

প্রতিবাদ: অমরনাথে জঙ্গি হামলার নিন্দায় জ্বালানো হচ্ছে পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ছবি। বুধবার ইলাহাবাদে। পিটিআই

অগ্নি রায় ও অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৭ ০৩:৪৪
Share: Save:

অমরনাথ যাত্রীদের উপরে জঙ্গি হামলার নিন্দায় সরব সমস্ত প্রতিবেশী রাষ্ট্র। এমনকী আমেরিকাও। মুখে কুলুপ শুধু দু’টি দেশের। চিন ও পাকিস্তান। হামলার তদন্ত যে পথে এগোচ্ছে তাতে সন্দেহের তির লস্কর-ই-তইবার দিকেই। রাষ্ট্রপুঞ্জ এই জঙ্গি গোষ্ঠীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও পাকিস্তানে তাদের ডালপালা বেড়েই চলেছে।

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা মোটামুটি নিশ্চিত, হামলা চালিয়েছে লস্কর জঙ্গিরাই। যাদের মধ্যে দু’জন পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বাসিন্দা। আজ আবার হিজবুল মুজাহিদিন একটি ভিডিও ছড়িয়েছে। তাতে এক জঙ্গিকে ভারতীয় সেনা-আধাসেনার উপরে রাসায়নিক হামলার হুমকি দিতে দেখা গিয়েছে। ভিডিওটিতে সে বলেছে, ‘‘এত দিন আমরা গ্রেনেড লঞ্চার দিয়ে ভারতীয় সেনার উপরে হামলা চালিয়েছি। কিন্তু এ বার বড়সড় ক্ষয়ক্ষতির লক্ষ্যে রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করব।’’ ওই জঙ্গির দাবি, পাকিস্তানের সাহায্যেই তাদের হাতে রাসায়নিক অস্ত্র আসবে। পাকিস্তানের সবুজ সঙ্কেত পেলেই তা ব্যবহার করা হবে। এবং এই কাজে তাদের সাহায্য করবেন ‘পির সাহেব’ অর্থাৎ লস্কর প্রধান হাফিজ সইদ।

গোয়েন্দাদের ধারণা, আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণে কাশ্মীরে বড়সড় হামলার পরিকল্পনা নিয়েছে জঙ্গিরা। তাঁদের এ-ও ধারণা, তীর্থযাত্রীদের উপরে হামলায় মদত রয়েছে পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের। সন্ত্রাসের পাক-যোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আজ প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ বলেন, ‘‘আমরা পাকিস্তানের সব রকমের হামলা রুখতে প্রস্তুত।’’

আরও পড়ুন: এক ঘণ্টাতেই অমরনাথে হামলার প্রস্তুতি নিয়েছিল জঙ্গিরা

সন্দেহের ঊর্ধ্বে নেই চিনের ভূমিকাও। কারণ, মাত্র ক’দিন আগে ডোকা লা-য় দু’দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা যখন চরমে, তখন চিনের সরকারি মুখপত্র গ্লোবাল টাইমস-এ রীতিমতো হুমকি দিয়ে লেখা হয়েছিল, ‘ভুটান নিয়ে ভারত বাড়াবাড়ি করলে কাশ্মীরে তার জবাব দেওয়া হবে।’ এ-ও বলা হয়েছিল, নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে চিনা সেনা ঢুকতে পারে কাশ্মীরে।

এই হুমকিকে হাল্কা ভাবে নিচ্ছে না সাউথ ব্লক। অমরনাথ কাণ্ডে চিনের ইন্ধন আছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আজ ফের কাশ্মীর সমস্যায় নাক গলানোর অভিপ্রায় জানিয়েছে বেজিং। চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র গেং সুয়াং বলেছেন, ‘‘কাশ্মীর পরিস্থিতি বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলি ওই অঞ্চলে শান্তি-শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টা করবে, সেটাই আশা করি। ভারত-পাক সম্পর্কের উন্নতির জন্য গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে চায় চিন।’’

বেজিং বিলক্ষণ জানে, কাশ্মীর সমস্যায় তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করবে না ভারত। চাপ বাড়ানোর জন্যই তারা বিষয়টি খুঁচিয়ে দিতে চাইছে বলে কূটনৈতিক শিবিরের মত। তবে দিল্লিকে স্বস্তি দিয়েছে হোয়াইট হাউসের প্রেসসচিবের দফতরের বিবৃতি। তাতে অমরনাথের ‘কাপুরুষোচিত’ হামলার নিন্দা করেছে আমেরিকা। বলা হয়েছে, ‘ধর্মাচরণের স্বাধীনতার উপরে হামলার অর্থ, স্বাধীনতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধিকারে আঘাত। ভারত ও আমেরিকা জোট বেঁধে বিশ্বের সর্বত্র সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই
চালিয়ে যাবে।’

ভারতে নিযুক্ত বিদায়ী পাক হাইকমিশনার আব্দুল বসিত সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘ভারতের সঙ্গে আলোচনার জানলা ক্রমশই ছোট হয়ে আসছে।’’ অথচ জানলা খোলার চেষ্টাটাই মোদী করেছিলেন। বাড়িয়েছিলেন বন্ধুত্বের হাত। কিন্তু পাকিস্তানে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ক্রমশই খর্ব হচ্ছে। পানামা কাণ্ড বেশ নড়বড়ে করে দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে। মোল্লাতন্ত্র, আইএসআই তথা পাক সেনার কর্তৃত্ব বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। ভারতকে চাপে ফেলাটাই যাদের কৌশল।

কাশ্মীরও তাই অশান্ত। নিয়ন্ত্রণ রেখায় রোজকার গোলাগুলির সঙ্গেই চলেছে সীমান্তপারের সন্ত্রাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE