নীতি আয়োগের বৈঠকে বসুন্ধরা রাজে। ছবি: পিটিআই।
নীতি আয়োগের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে খোদ নরেন্দ্র মোদীর সামনেই বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজের গলায় সমালোচনার সুর! আর তাতেই তোলপাড় শুরু বিজেপিতে। এই অস্বস্তির মধ্যে আরও একটি প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে দেশের মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে। তা হল, ভবিষ্যত অর্থনীতির রূপরেখা ঠিক করার বৈঠকে কেন থাকলেন না অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি!
গত কাল নীতি আয়োগের পরিচালন পর্ষদের বৈঠকে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজেকে নিয়ে তুমুল অস্বস্তিতে পড়েছে মোদী সরকার তথা বিজেপি। কেননা, বসুন্ধরা খোদ নীতি আয়োগের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন। বলেছেন, আন্তঃরাজ্য পর্ষদ আর নীতি আয়োগের ভূমিকার মধ্যে স্পষ্ট বিভাজন থাকা উচিত। এ নিয়ে বিভ্রান্তি থাকা ঠিক নয়। আন্তঃরাজ্য পর্ষদ এমন থিঙ্কট্যাঙ্ক হওয়া দরকার, যার কাজ হওয়া উচিত রাজ্যগুলির মধ্যে দ্বন্দ্ব মেটানো ও আর্থিক বিষয়ে আলোচনা। আর কেন্দ্র-রাজ্যের বিভিন্ন মন্ত্রকের মধ্যে সমন্বয় করে উন্নয়ন, সামাজিক বিষয়, প্রতিযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য থাকুক নীতি আয়োগ। একটি অন্যের ঘাড়ে আছড়ে পড়া কাম্য নয়।
বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীরা যখন মোদী সরকারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ, তখন বসুন্ধরার সমালোচনার সুরে তোলপাড় হয় বিজেপি শিবির। তড়িঘড়ি রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতিও আনানো হয়। পরে বিষয়টিকে লঘু করে বলা হয়, আসলে লিখিত বিবৃতিতে ওই সব কথার উল্লেখ রয়েছে। নিজের বক্তৃতায় এমন কথা বলেননি মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপির যুক্তি, বক্তৃতা সাধারণত লিখে দেন আমলারা। তা ছাড়া বসুন্ধরা তো কেন্দ্রের সমালোচনা করেননি। বরং দুটি পর্ষদ যাতে সুষ্ঠু ভাবে কাজ করতে পারে, তার পথ বাতলেছেন।
বসুন্ধরার সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তেমন সুসম্পর্ক নেই। অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েও সময় পান না মহারানি। সামনের বছর রাজস্থানে বিধানসভা ভোট। তার আগে বসুন্ধরাকে সরানো নিয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী পাল্টা কোনও বার্তা দিতে চাইলেন কি না, তা-ও বোঝার চেষ্টা করছেন দলের নেতারা। বসুন্ধরা-ঘনিষ্ঠ ভূপেন্দ্র যাদবকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যদিও দলের দাবি, বসুন্ধরা ও বিজেপি শাসিত মুখ্যমন্ত্রীরা গত কাল মোদী, অমিত শাহের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। তখন তিক্ততার কোনও প্রকাশ ঘটেনি।
বসুন্ধরাকে নিয়ে বিজেপির অস্বস্তির মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে জেটলির অনুপস্থিতি নিয়েও। কারণ, পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ভেঙে নতুন ধাঁচের ‘অ্যাকশন প্ল্যান’, ১৫ বছরের আর্থিক বৃদ্ধির হার, অর্থনীতির সব ক’টি ক্ষেত্র নিয়েই আলোচনা হয়েছে নীতি আয়োগের বৈঠকে। বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, এমন বৈঠকে কেন হাজির নেই দেশের অর্থমন্ত্রী! তবে এমন নয় যে জেটলি স্বেচ্ছায়
ওই বৈঠকে যোগ দেননি। বা তাঁকে ডাকা হয়নি। পাঁচ দিন আগেই আমেরিকা রওনা হয়েছেন জেটলি। বিশ্ব ব্যাঙ্ক, আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের বৈঠকে যোগ দিয়েছেন। ভিসা সমস্যা, অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে কথা বলেছেন ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে। সোমবার সন্ধেতেই মস্কো গিয়েছেন তিনি। দেশে ফিরবেন বৃহস্পতিবার।
আরও পড়ুন: সুকমায় ফের মাওবাদী হানা, হত ২৫ জওয়ান
জেটলির এই সফর আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল। প্রশ্ন উঠেছে, এই সময়েই আয়োগের বৈঠক ডাকা হল কেন? মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যেও এ প্রশ্ন উঠেছে। তবে সরকারি সূত্রের দাবি, জেটলি বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ কাজে গিয়েছেন। তাঁর গুরুত্ব কমছে, এমন ভাবার প্রশ্নই নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy