‘ইমপিচমেন্ট’ প্রস্তাব আনার ৪৮ ঘণ্টার মাথায় কংগ্রেস আজ দাবি তুলল, সুপ্রিম কোর্টের কাজকর্ম থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে ভাবা উচিত প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর। তাদের বক্তব্য, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ এতটাই গুরুতর যে তাঁরই উচিত স্বেচ্ছায় তদন্তের মুখোমুখি হওয়া।
উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডুর কাছে শুক্রবার ‘ইমপিচমেন্ট’ প্রস্তাব জমা পড়লেও তিনি এ বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেননি। তবে রাজ্যসভার সচিবালয়ের একটি সূত্রের যুক্তি, চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেওয়ার পরেই কংগ্রেস ও বিরোধী দলের নেতারা ওই প্রস্তাবের বিশদ তথ্য সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়ে দেন। নিয়ম অনুযায়ী, কোনও নোটিস গৃহীত না হওয়া পর্যন্ত তা প্রচার করা যায় না। সংসদের নিয়মাবলিতে এমন কথা রয়েছে বলে দাবি করে সংশ্লিষ্ট কিছু নথিও তাঁরা সামনে এনেছেন।
কংগ্রেস অবশ্য এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে দাবি করে, ‘ইমপিচমেন্ট’ প্রস্তাবের বিষয়ে জানাতে বাধা রয়েছে, এমন কোনও নিয়ম নেই। কংগ্রেসের মঞ্চ থেকে প্রবীণ আইনজীবী কে টি এস তুলসী বলেন, ‘‘২০০৯-এ বিচারপতি পি ডি দিনকরনের বিরুদ্ধে ‘ইমপিচমেন্ট’ প্রস্তাব জমা দিয়ে এসেই রাজ্যসভার তৎকালীন বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলি ও সীতারাম ইয়েচুরি সংবাদমাধ্যমকে সব কিছু জানিয়ে দিয়েছিলেন।’’
নায়ডু ইতিমধ্যেই আইনি পরামর্শ নিতে শুরু করেছেন। তার জন্য তেলঙ্গানা সফর কাটছাঁট করে তিনি দিল্লিতে ফিরেছেন। ইতিমধ্যেই অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল, সুভাষ কাশ্যপ, প্রাক্তন আইনসচিব পি কে মলহোত্র, সঞ্জয় সিংহ, সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি সুদর্শন রেড্ডির মতো আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছেন বেঙ্কাইয়া। এবং আরও বলবেন বলে সূত্রের খবর। কংগ্রেস বলছে, উপরাষ্ট্রপতি যদি বাইরে জানানোর কারণে বা এই ধরনের কোনও যুক্তি দেখিয়ে ‘ইমপিচমেন্ট’ প্রস্তাব নাকচ করে দেন, তবে প্রয়োজনে তারা আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথাও ভাবছে।
প্রথা অনুযায়ী, ‘ইমপিচমেন্ট’ প্রস্তাব গৃহীত হলেই বিচারপতিরা বিচারের কাজ থেকে নিজেদের সরিয়ে নেন বা তাঁদের সরে যেতে বলা হয়। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ভি রামস্বামীর বিরুদ্ধে ‘ইমপিচমেন্ট’ প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি তাঁকে বিচারের কাজকর্ম থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র এখনও কাজ থেকে না সরার অবস্থানে অবিচল রয়েছেন বলে মনে করছেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা।
কংগ্রেসের নেতা বিবেক টাঙ্খার যুক্তি, ‘‘প্রধান বিচারপতির নিজের বিবেককে প্রশ্ন করা উচিত, সুপ্রিম কোর্টের অন্য বিচারপতির বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ এলে তিনি তাঁর বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নিতেন!’’ উদাহরণ হিসেবে কংগ্রেস নেতাদের যুক্তি, প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রই ইলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি নারায়ণ শুক্লকে ‘ইমপিচমেন্ট’-এর সুপারিশ করেছেন সরকারের কাছে। তার পরেই তাঁকে আদালতের কাজকর্ম থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিজেপি নেতাদের অভিযোগ, কংগ্রেস আসলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতির উপর চাপ তৈরি করতে চায়। যাতে তিনি রামমন্দিরের মতো স্পর্শকাতর মামলায় এখনই না এগোন। কংগ্রেস নেতা টাঙ্খার পাল্টা যুক্তি, ‘‘বিজেপি রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রধান বিচারপতির পাশে দাঁড়িয়ে ওই পদের গরিমাই নষ্ট করছেন। এর মধ্যে কংগ্রেস বনাম বিজেপি লড়াই আনা উচিত নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy