গুরুদাসপুরের সীমানা ছাড়িয়ে রাজনাথ সিংহ গতকাল হিন্দু সন্ত্রাসের তর্কে ঢুকে পড়তেই রাজনীতির গন্ধ বেরোতে শুরু করেছিল ভুর ভুর করে! সন্দেহ তৈরি হয়েছিল, তবে কি বিতর্কের মুখ ঘোরাতে চাইছে বিজেপি? বিহারে ভোট যখন এগিয়ে আসছে তখন ফের ধর্মীয় মেরুকরণের চেনা গর্তে আশ্রয় নিচ্ছে শাসক দল!
কংগ্রেস আজ অভিযোগ করল, ‘ঠিক তাই।’ নরেন্দ্র মোদী-র পাক নীতি নিয়ে আজ তীব্র সমালোচনা করেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম। তার পর বলেন, ‘‘গুরুদাসপুরের ঘটনার নেপথ্যে কেন্দ্রের গোয়েন্দা ব্যর্থতা তো রয়েছেই। কিন্তু হিন্দু সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ উস্কে দিয়ে আসলে দৃষ্টি ঘোরাতে চাইছে সরকার।’’ তাঁর কথায়, ‘‘প্রথমত ‘হিন্দু সন্ত্রাস’ শব্দটি কখনও সংসদে ব্যবহার করেননি ইউপিএ-র কোনও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। যেহেতু মালেগাঁও ও সমঝোতা এক্সপ্রেসে বিস্ফোরণে সঙ্ঘ পরিবারের অনুগামী কয়েকটি সংস্থার যোগাযোগ পাওয়া গিয়েছিল, তাই দক্ষিণপন্থী সন্ত্রাসের কথা বলা হয়েছিল।’’ অন্য দিকে রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ বলেন,‘‘ভোটের আগে উন্নয়নের কথা বলছিলেন না নরেন্দ্র মোদী! এ বার বিজেপি-কে তাদের প্রকৃত চেহারায় দেখা যাচ্ছে। যে ভাবে জম্মু কাশ্মীরে ভোটের আগে ধর্মীয় মেরুকরণের পথে হেঁটেছিল বিজেপি, এখন সেটাই করছে। আর সেই কারণেই ত্রিপুরার রাজ্যপাল ধর্মীয় উস্কানিমূলক মন্তব্য করা সত্ত্বেও কেন্দ্রে সরকার নীরব।’’
গুলাম নবি আজও জানিয়ে দেন, পাক মদতে পুষ্ট সন্ত্রাসবাদ নিয়ে সংসদে তখনই আলোচনা হবে, যখন প্রধানমন্ত্রী সেই বিতর্কের জবাব দিতে রাজি হবেন এবং দেশকে জানাবেন সম্প্রতি ইসলামাবাদকে তিনি কী আশ্বাস দিয়েছেন! সংসদের অচলাবস্থা কাটাতে সোমবার সর্বদল বৈঠক ডেকেছে সরকার। কংগ্রেস যে সেই বৈঠকে উপস্থিত হবে না তা-ও আজ বুঝিয়ে দেন রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা। তাঁর কথায়, শুধু চা খেতে গিয়ে কী লাভ? সুষমা স্বরাজ, বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া ও শিবরাজ সিংহ চৌহানের ইস্তফা নিয়ে কংগ্রেস যে দাবি জানাচ্ছে সে ব্যাপারে যদি আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী রাজি থাকেন তবেই সর্বদল বৈঠকে যোগ দেবে কংগ্রেস। নইলে নয়।
সুষমা-বসুন্ধরার বিষয়টি সামনে রেখে সনিয়া গাঁধী যে এ বার সংসদ অচল রাখতে বদ্ধপরিকর তা বিজেপি-ও বুঝতে পারছে। এ-ও বুঝতে পারছে, অন্তত বাদল অধিবেশনে অচল সংসদ আর সচল হওয়ার আশা নেই। ঠিক সেই কারণেই গতকাল হিন্দু সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ কৌশলে তোলেন রাজনাথ সিংহ। গুরুদাসপুরের ঘটনা নিয়ে তাঁর কেবল একটি বিবৃতি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার বাইরে গিয়ে রাজনাথ হিন্দু সন্ত্রাসের প্রশ্ন তুলে ধরেন।
বিজেপি-র এক শীর্ষ সারির নেতা বলেন, ইয়াকুব মেমনের ফাঁসির পর কংগ্রেসই মালেগাঁও বিস্ফোরণের কথা টেনে এনেছিল। কিন্তু এতে আমাদের অসুবিধা নেই। হিন্দু সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ কংগ্রেস যত খোঁচাবে, তত বেশি মেরুকরণের পরিবেশ তৈরি হবে। বস্তুত সেই কারণেই, চিদম্বরম ও গুলাম নবির বক্তব্য নিয়ে পাল্টা মুখ খোলেন বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ। তাৎপর্যপূর্ণ হল, তথাগত রায়ের মন্তব্য নিয়েও আজ বিজেপি কোনও বিরোধিতা করেনি। রবিশঙ্কর বলেন, ‘‘রাজ্যপাল হওয়ার পর উনি আর বিজেপি-র সদস্য নন। তিনি সাংবিধানিক পদে রয়েছেন। তাঁর হাতে যাবতীয় তথ্য রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy