সংসদের গাঁধী মূর্তির সামনে মানবশৃঙ্খলে পাশাপাশি কংগ্রেস-তৃণমূল। হাতে হাতে ‘হ্যাশট্যাগ’ স্লোগান। বিষয়— দলিত বিক্ষোভ, নীরব মোদী, প্রশ্ন ফাঁস। সনিয়া গাঁধীর পাশে তৃণমূলের সাংসদরা। ১৮টি দলের ঐক্যের ছবিতে রয়েছেন রাহুল গাঁধীও। সংসদের অধিবেশনের শেষ লগ্নে সকলের হাতে হাত।
তেইশ দিনে তেইশ ঘণ্টাও সংসদ চলেনি। লোকসান প্রায় দু’শো কোটি টাকার কাছাকাছি। এডিএমকে, টিডিপি-র বিক্ষোভে বাজেট অধিবেশনের গোটা দ্বিতীয় ভাগটিই অচল রইল। আর বিজেপি রোজ বলে চলল, কংগ্রেসই দায়ী। আজ মুখ খুলে সনিয়া বললেন, ‘‘খোদ সংসদীয় মন্ত্রীই সংসদে দাঁড়িয়ে এমন অসত্য বলছেন। কংগ্রেস শান্ত হয়ে বসে আলোচনার দাবি জানিয়েছে। শাসক দল আর তার শরিকরাই সংসদ চলতে দেয়নি।’’
সংসদীয় মন্ত্রী অনন্ত কুমার অবশ্য এ দিনও বলে গেলেন, ‘‘রাহুলই যত নষ্টের গোড়া। বাজেট অধিবেশনের প্রথম ধাপ নির্বিঘ্নে চলেছে। রাহুল কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার পর থেকেই সংসদে যত হট্টগোল।’’ কিন্তু তরজা যাই হোক, সংসদের এই অধিবেশনই একজোট করে ফেলল বিরোধীদের। এমনকী আজ সকালের ধর্নায় টিডিপি, এডিএমকের দাবিতে সহমত হয়ে বিরোধীরা তাদেরও সঙ্গ নিল।
পাশাপাশি কালকের মতো আজও রাজ্যসভায় বিরোধীদের সম্মিলিত চাপে গায়ের জোরে বিল পাশ করাতে পারল না সরকার। ডেপুটি চেয়ারম্যান প্রতিবাদী সাংসদদের সাসপেন্ড করার হুমকি দিলেও সভা মুলতুবি করেই ক্ষান্ত হলেন। বিরোধীদের সম্মিলিত চাপের কাছে নতিস্বীকার করতে হল তাঁকে। খালি হাতেই ফিরতে হল সরকারকে।
কংগ্রেস-তৃণমূলের বক্তব্য সাফ। সরকার যত ক্ষণ না নীরব মোদী থেকে দলিত আইন পর্যন্ত জ্বলন্ত সমস্যাগুলি নিয়ে সংসদে আলোচনা করতে দেবে, তত ক্ষণ গায়ের জোরে বিলও পাশ করাতে দেওয়া হবে না। অনাস্থা প্রস্তাব থেকে যাবতীয় জ্বলন্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা এড়াতে বন্ধু দলগুলিকে দিয়ে সংসদে হট্টগোল পাকিয়ে রেখেছে বিজেপি। আগামিকাল সংসদের অধিবেশন শেষ হলে এ বারে একজোট বিরোধীদের লক্ষ্য, সংসদের বাইরে এই ঐক্যকে নিয়ে যাওয়া।
লোকসভা ভোটের আগে এই ঐক্য ধরে রাখাটা বিরোধী দলের কাছেও বড় চ্যালেঞ্জ। মোদী-বিরোধী এই জোটের নেতৃত্ব নিয়ে তাঁদের একটি অংশের মধ্যে টানাপড়েন রয়েছে। এর মধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাহুল গাঁধীর ফোন করাটা মোদী-বিরোধী লড়াইয়ে আরও কাছাকাছি আসার বার্তা বলে মনে করা হচ্ছে। এর পর আজ সকালের ধর্নায় তৃণমূলের মহিলা সাংসদদের সঙ্গে সনিয়ার স্বাচ্ছন্দ্যের ছবিটাও ধরা পড়ল। তৃণমূলের অন্য নেতারাও সারাদিন ব্যস্ত থাকলেন কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে যৌথ কৌশল রচনায়।
আর দিল্লিতে সনিয়া-রাহুল তৃণমূলের কাছাকাছি আসায় প্রদেশ কংগ্রেসের লড়াই যে আরও কঠিন হল, সন্দেহ নেই। এর ফলে পঞ্চায়েত ভোটের আগে আর এক দফা দল ছাড়ার হিড়িক পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস নেতৃত্বের। সে ক্ষেত্রে লাভবান হতে পারে বিজেপি। আবার বিপাকে সিপিএম-ও। তৃণমূল, বিজেপি আর কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে কোনও জোট তৈরি তাদের পক্ষে ক্রমশ অসাধ্য হয়ে উঠছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy