কংগ্রেসের প্লেনারি অধিবেশনের মঞ্চ থেকে তীব্র আক্রমণ শানালেন রাহুল গাঁধী। ছবি: পিটিআই।
লক্ষ্য ২০১৯। লক্ষ্য সরকারে ফেরা। লক্ষ্যে পৌঁছনোর পথ কী? পথ নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ, বিজেপি এবং আরএসএস-এর ‘অল আউট’ বিরোধিতা। পথ যুব সম্প্রদায়কে সামনের সারিতে নিয়ে আসা। পথ দলে প্রত্যেকের সম্মান এবং দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রেখে ঐক্যবদ্ধ ভাবে নির্বাচনে যাওয়া। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ৮৪তম অধিবেশনের (প্লেনারি) মঞ্চ থেকে এটাই বার্তা এআইসিসি সভাপতির।
রবিবার নয়াদিল্লিতে ইন্দিরা গাঁধী ইনডোর স্টেডিয়ামে শেষ হল কংগ্রেসের দু’দিনের প্লেনারি অধিবেশন। প্রথা মতোই সমাপ্তি ভাষণ দিলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। আর সেই ভাষণে তীব্র আক্রমণ, কটাক্ষ ও শ্লেষে বিঁধলেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ জুটিকে, বিঁধলেন বিজেপি-আরএসএসের আদর্শকে।
২০১৯-এ লোকসভা নির্বাচন। কেন্দ্রীয় সরকারের মেয়াদ এখনও অন্তত এক বছর তো বটেই। কিন্তু ভোটের দামামা বেজে যাবে তার কয়েক মাস আগেই। প্লেনারি অধিবেশনের মঞ্চ থেকে কংগ্রেস সভাপতি স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন, ভোটের দামামা বাজা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে না দল। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের জন্য এখন থেকেই সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাবে কংগ্রেস।
বিজেপির বিরুদ্ধে আগামী মাসগুলোতে কংগ্রেসের আক্রমণের সুরটা ঠিক কতটা চড়া হবে, তাও এ দিনই বেঁধে দিলেন রাহুল। বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি পদে যে ব্যক্তি রয়েছেন, তিনি ‘খুনে অভিযুক্ত’, কংগ্রেসে এমনটা হলে কিন্তু দেশবাসী মেনে নেবেন না, কারণ কংগ্রেসের কাছ থেকে দেশবাসীর প্রত্যাশা অনেক বেশি— অমিত শাহ সম্পর্কে এ দিন এতটাই কঠোর মন্তব্য করলেন কংগ্রেস সভাপতি। বিজেপি কৌরবদের মতো, শুধু ক্ষমতার জন্য লড়ছে— মন্তব্য রাহুলের। নীরব মোদী এবং ললিত মোদীর সঙ্গে পদবীর মিলের কথা উল্লেখ করে খোঁচা দিলেন নরেন্দ্র মোদীকে। ২০১৯ সালে যে বিজেপির জয় হবে না, তা নরেন্দ্র মোদী এখন থেকেই বুঝতে পারছেন বলে রাহুল দাবি করলেন।
আর কী কী বললেন রাহুল গাঁধী? দলকে কী বার্তা দিলেন? শাসক সম্পর্কেই বা কী কী মন্তব্য করলেন? দেখে নিন এক ঝলকে:
আরও পড়ুন: পাকিস্তান-সহ মোদীর সার্বিক বিদেশনীতিতে উদ্বিগ্ন মনমোহন
They (people) will accept a man accused of murder as the President of the BJP, but they will never ever accept the same in the Congress Party because they hold Congress in the highest regard: Congress President Rahul Gandhi #CongressPlenarySession pic.twitter.com/GZfdDoGAvr
— ANI (@ANI) March 18, 2018
• ঝগড়া করতে চান? কিছুদিন পরে। ঝগড়া ভোটের পরে করবেন। আপাতত ছ-সাত মাস একটু কড়া অনুশাসন চলবে, একটু ধাক্কা লাগবে। সবাই মিলে, ভালবেসে নির্বাচনটা লড়তে হবে।
• ‘একদিকে রাফাল যুদ্ধবিমান, এক দিকে অমিত শাহের পুত্র। মাঝখান থেকে মোদীজি গাড়ি নিয়ে আমেরিকা চলে গেলেন।’
• নেতা আর কর্মীদের মধ্যে যে দেওয়াল রয়েছে, তা আমরা ভেঙে দেব। দেশে বদল আনার জন্য যুবসমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।
• কংগ্রেস এবং বিজেপি দু’টো আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি। নির্বাচনে কংগ্রেসের দৃষ্টিভঙ্গি জয়ী হবে।
• বিজেপি একের পর এক নির্বাচনে হারছে। মোদীজির মুখটা অন্য রকম হয়ে গিয়েছে। এখন আর স্যুট করেন না।
• মোদীজি ভাবছেন, গুজরাতে তো কোনও মতে বেরিয়ে গিয়েছি। ২০১৯-এ বোধহয় আর বেরতে পারব না, মনে হয় ফেঁসে যাব।
• সংবাদমাধ্যম আমাদের বিরুদ্ধেও খারাপ কথা বলে। কখনও কখনও ভুল কথাও লেখা হয় আমাদের বিরুদ্ধে।
• কিন্তু আমরা সংবাদমাধ্যমকে রক্ষা করব। আমাদের বিরুদ্ধে যত লিখতে চান লিখুন, আমরা আপনাদের রক্ষাই করব।
• যখন আরএসএস আপনাদের মারবে-কাটবে, তখন এই হাত আপনাদের রক্ষা করবে।
• বিজেপির রাজনীতি শুধুই ক্ষমতা দখলের জন্য। আমাদের রাজনীতি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।
• কোটি কোটি যুবকের রোজগার নেই। মোদী সরকারের উপরে আর তাঁদের ভরসা নেই।
• কোটি কোটি মুসলিম, যাঁরা পাকিস্তান যাননি এবং ভারতকে সমর্থন করেছিলেন, বিজেপি তাঁদের বলে, ভারত তাঁদের নয়।
• ওঁরা তামিলদের বলেন, তাঁদের সুন্দর ভাষা বদলে ফেলতে।
• ওঁরা উত্তর-পূর্ব ভারতের মানুষকে বলেন, তোমাদের খাদ্যাভ্যাস আমরা পছন্দ করি না। ওঁরা মহিলাদের বলেন, ঠিক করে পোশাক পর।
• গৌরী লঙ্কেশকে, কালবুর্গীকে ওঁরা বলেছিলেন, প্রশ্ন করলে মরতে হবে।
• কংগ্রেসের কাছ থেকে দেশের মানুষের অনেক প্রত্যাশা।
• খুনে অভিযুক্ত একজন ব্যক্তি বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি পদে বসলে, দেশের মানুষ মেনে নেবেন। কিন্তু কংগ্রেসের তেমনটা হলে দেশবাসী মানবেন না।
• বিজেপি একটা সংগঠনের কণ্ঠস্বর। কংগ্রেস গোটা দেশের কণ্ঠস্বর।
• আমাদের নেতারা স্বাধীনতার জন্য জেলে ছিলেন। তাঁদের নেতা সাভারকর ব্রিটিশের কাছে ক্ষমা চেয়ে চিঠি লিখেছিলেন।
• নীরব মোদীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নামের মিল রয়েছে। ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত যিনি, তাঁর সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রীর পদবী মেলে। আপনারাই ভেবে দেখুন, ‘মোদী’ মানে তা হলে কী?
• ‘অচ্ছে দিন’, ‘স্বচ্ছ ভারত’ হল কাল্পনিক জগতের কথা।
• ‘দেশ কি মিথ্যেকে মেনে নেবে?’
• মহাভারতের যুদ্ধের সময় যে প্রশ্ন সামনে ছিল, এত বছর পরে আবার সেই প্রশ্নটাই সামনে এসেছে।
• বিজেপি-আরএসএস এর লড়াই ক্ষমতার জন্য। কংগ্রেসের লড়াই সত্যের জন্য।
• হাজার হাজার বছর আগে কুরুক্ষেত্রে একটা যুদ্ধ হয়েছিল। কৌরব এবং পাণ্ডহদের মধ্যে। কৌরবদের অর্থ ছিল, সংখ্যা ছিল, তারা সাংঘাতিক ভাবে সংগঠিত ছিল। বিপরীতে ছিলেন পাণ্ডবরা। তাদের ছোট সেনাদল ছিল, তাঁরা বেশি কথা বলতেন না। কিন্তু কৌরবদের লড়াই ছিল ক্ষমতার জন্য, পাণ্ডবদের লড়াই ছিল সত্যের জন্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy