দু’পক্ষেরই দাবি যে, সমঝোতায় আসতে আলোচনার টেবিলে বসতে রাজি তারা। কিন্তু তা সত্ত্বেও পণ্য-পরিষেবা করের (জিএসটি) বিল নিয়ে ছায়াযুদ্ধ অব্যাহত মোদী সরকার আর কংগ্রেসের মধ্যে। বহাল স্নায়ুর লড়াই।
বৃহস্পতিবার সনিয়া ও রাহুল গাঁধী ফের স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, জিএসটি নিয়ে যে তিন শর্ত তাঁদের দল রেখেছে, তা নিয়ে দর কষাকষির কোনও প্রশ্ন নেই। শর্তগুলি হল—(১) জিএসটি-র হার ১৮ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখা। (২) শিল্পোন্নত রাজ্যগুলির জন্য প্রস্তাবিত বাড়তি ১ শতাংশ কর তুলে দেওয়া। (৩) জিএসটি নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য বিবাদ মীমাংসার জন্য নিরপেক্ষ ব্যবস্থা তৈরি করা। কংগ্রেসের দাবি, জিএসটি নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা চাইলে, এই তিন শর্ত মানতেই হবে মোদী সরকারকে। নইলে সমঝোতার প্রশ্ন নেই।
কিন্তু উল্টো দিকে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি মনে করেন, সব শর্ত মানতে গেলে আখেরে অর্থনীতির লাভের থেকে ক্ষতি হবে বেশি। তাই তেমন ত্রুটিপূর্ণ জিএসটি চালু করার কোনও মানে হয় না। অর্থ মন্ত্রকের সংশ্লিষ্ট সূত্রের মতে, আপাতত ১৮ শতাংশের ঊর্ধ্বসীমা যদি বা স্থির করা যায়, বিলের অংশ হিসেবে তা পেশ করা শক্ত। কারণ, তখন ভবিষ্যতে ওই হার বাড়াতে বা কমাতে গেলেই সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হবে। নতুন করে বিল পাশ করাতে হবে সংসদ ও বিধানসভায়। যা যথেষ্ট ঝক্কির।
মোদী সরকারের দাবি, জিএসটি পাশ করাতে তারা কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলতে তৈরি। কিছুটা সুর নরম করেছে কংগ্রেসও। কারণ, তৃণমূল কংগ্রেস, জেডিইউ, এনসিপি-র মতো আঞ্চলিক দলগুলি জিএসটির পক্ষে থাকায়, তার একবগ্গা বিরোধিতা সংস্কারের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর তকমা সেঁটে দিতে পারে কংগ্রেসের গায়ে। কিন্তু তা সত্ত্বেও অন্তত আলোচনায় বসার আগে পর্যন্ত নমনীয় হতে রাজি নয় দুই শিবিরই।
রাহুল-সনিয়ার বক্তব্য, সরকারের তরফ থেকে কেউ তাঁদের সঙ্গে কথা বলেননি। জেটলি গত সপ্তাহে রাহুলের সঙ্গে দেখা করেছিলেন ঠিকই। কিন্তু কারণ ছিল মেয়ের বিয়ের নিমন্ত্রণ। জিএসটি নিয়ে কথা হয়নি। আবার জেটলির পাল্টা যুক্তি, তিনি সংসদে কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে জিএসটি নিয়ে কথা বলেছেন। আলোচনা করেছেন দুই কক্ষেরই সংসদীয় দলের নেতার সঙ্গে। কিন্তু কংগ্রেস ইতিবাচক মনোভাব দেখায়নি।
তবে ছায়াযুদ্ধ চললেও দুই শিবিরই টের পাচ্ছে যে, শিল্পমহল প্রবল ভাবে জিএসটি-র পক্ষে। এর দিকে প্রায় চাতক পাখির মতো তাকিয়ে ছোট ও মাঝারি শিল্প। ফলে সরকারের কাছে যেমন আলোচনায় বসে ঐকমত্য তৈরির দাবি রয়েছে, তেমনই কংগ্রেসের উপরেও যথেষ্ট চাপ রয়েছে সমঝোতায় যাওয়ার। অ্যাসোচ্যামের নতুন প্রেসিডেন্ট সুনীল কানোরিয়া যেমন এ দিন বলেন, ‘‘জিএসটি চালু হলে ২০১৮-’১৯ সালের মধ্যেই বৃদ্ধির হার ৯% ছুঁতে পারে। কিন্তু তার জন্য বিরোধিতার ঊর্ধ্বে উঠতে হবে রাজনৈতিক দলগুলিকে।’’ শিল্পোন্নত রাজ্যগুলির জন্য ১ শতাংশ বাড়তি কর তুলে দেওয়ার পক্ষপাতী কানোরিয়া। জিএসটি-র হার ১৮ শতাংশের কম হলে, তাতে শিল্পের ভাল বলেও অভিমত।
শিল্পমহলের এই দাবি বিলক্ষণ জানেন বলেই রাহুল বলছেন, কংগ্রেস সংস্কারে বাধা দেওয়ার পক্ষপাতী নয়। রাহুলের দাবি, তাঁরা জিএসটি চান। তা নিয়ে কথা বলতেও রাজি। কিন্তু ঠেলে সরিয়ে দেওয়া হলে, তা-ও মেনে নেবেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy