সুষমা স্বরাজ ও সুস্মিতা দেব
নাগরিকত্বের যে তাস হাতে রেখে বিজেপি অসমের বাঙালি ভোট নিজেদের পক্ষে টানতে চাইছে, সেই একই তাসকে হাতিয়ার করে উল্টে বিজেপিকে ঘায়েল করতে চাইছে কংগ্রেস। ১৯৭১ সালের পরেও যাঁরা ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে এ দেশে এসেছেন— তাঁদের বিতাড়িত করা হবে না বলে কেন্দ্রীয় সরকার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল। ওই বিজ্ঞপ্তি বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির বড় হাতিয়ার। আবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার পরেও নাগরিকত্ব নিয়ে আইন না আনায় বিজেপিকে কাঠগড়ায় তুলে ফায়দা লুঠতে চাইছে কংগ্রেস।
বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ আগামী কাল শিলচরে আসছেন। দক্ষিণ অসমের বুথভিত্তিক দলীয় কর্মকর্তাদের সম্মেলনে তিনি ভাষণ দেবেন। তাঁর আলোচনায় কেন্দ্রের ওই বিজ্ঞপ্তি বিশেষ জায়গা নিতে চলেছে। তা আঁচ করেই শিলচরের সাংসদ সুস্মিতা দেব আজ সাংবাদিক সম্মেলন করে বিদেশমন্ত্রীর উদ্দেশে পাঁচ দফা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্রাক্তন সাংসদ কমলেন্দু ভট্টাচার্য, বিধায়ক এনামুল হক, জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদর পার্থরঞ্জন চক্রবর্তী।
তাঁর জিজ্ঞাসা, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরেও কেন এখনও বিদেশি অপবাদে হিন্দুদের জেল খাটতে হচ্ছে? কেউ প্রকৃতই ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে এ দেশে ঢুকলেন কি না— তা কী ভাবে নির্ধারণ করা হবে? কেন্দ্রের ওই বিজ্ঞপ্তি কার্যকর করার ‘অপারেশনাল গাইডলাইন’ কী?
সুষমা স্বরাজের বাংলাদেশ সফরের প্রসঙ্গ টেনে সুস্মিতা দেবের চতুর্থ প্রশ্ন, সুষমাদেবী কি বাংলাদেশের সঙ্গে বন্দি-প্রত্যর্পণ চুক্তি নিয়ে কথা বলেছেন? বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মের লোকেরা ভারতে থেকে গেলেও, বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে? বন্দি-প্রত্যর্পণ চুক্তি ছাড়া যে তাঁদের স্বদেশে ফেরত পাঠানো যাবে না— সুষমাকে সে কথা স্মরণ করিয়ে সুস্মিতাদেবী বলেন, ‘‘তবে কি তাঁরা রাষ্ট্রহীন হবেন? ললিত মোদির স্ত্রীর অসুস্থতার কথা ভেবে তাঁকে পাসপোর্ট সংগ্রহে সাহায্য করেছিলেন সুষমাদেবী। তা হলে ওই সব লোকেদের জন্যও কি তাঁর দয়া হবে না?’’
শিলচরের মত শহরে বিদেশমন্ত্রীর সফরকে ‘ঐতিহাসিক’ ঘটনা বলে উল্লেখ করে সুস্মিতাদেবী বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার তৃতীয় ব্যক্তিত্ব সুষমাদেবী। এমন তাবড় ব্যক্তিত্বের সফরে স্থানীয় মানুষের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ মেলে। আমি নিজে সেখানে যেতে পারছি না। তাই মন্ত্রীর জন্য প্রশ্নমালা সাজিয়ে দিলাম।’’ নাগরিকত্ব সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি নিয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজুর সঙ্গে দেখা করেছিলেন সুস্মিতাদেবী। তাঁর দাবি, রিজিজু ওই বিজ্ঞপ্তি কী ভাবে কার্যকর হবে— সে ব্যাপারে কিছুই বলতে পারলেন না। এ নিয়ে অসম সরকারও ধন্দে। একই কারণে আইনি প্রক্রিয়াতেও এই বিজ্ঞপ্তির কোনও স্বীকৃতি নেই। তাই জেলে থাকা ব্যক্তিরা ছাড়া পাচ্ছেন না। নতুন করে অনেককে বাংলাদেশি সন্দেহে গ্রেফতার করা হচ্ছে।
আইনজীবী সাংসদের কথায়, ‘‘সংসদে আইন প্রণয়ন করে সরকার হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, খ্রিস্টান, শিখ, পার্সিদের পাশে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু আন্তরিকতার অভাবেই তা করা হচ্ছে না। বিধানসভা ভোটের আগে আর তা সম্ভবও নয়। কারণ ফেব্রুয়ারি থেকেই নির্বাচনী আচরণবিধি কার্যকর হতে পারে। এখন একমাত্র অর্ডিন্যান্স জারি করতে পারে কেন্দ্র।’’
বিজেপি অভিযোগ করেছিল, কংগ্রেসের বাধাপ্রদানের ফলেই নাগরিকত্ব বিল পেশ করা যায়নি। এই অভিযোগ উড়িয়ে সুস্মিতাদেবী লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজনের ভাষণ তুলে ধরে বলেন, ‘‘শীতকালীন অধিবেশনের সমাপ্তি ভাষণে স্পিকার জানান, এ বার ১১৭ ঘণ্টা ২০ মিনিট অধিবেশন চলেছে। বিচারপতিদের বেতন-ভাতা বিল, জলপথ বিল, ‘জুভেনাইল জাস্টিস’ বিল ইত্যাদি পাস হয়েছে। তবে কেন নাগরিকত্বের বিলটি পেশ করা হল না?’’ বিদেশমন্ত্রীর সফরের আগের দিন সুস্মিতাদেবী শিলচরে পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্র স্থাপনের জন্যও ফের দাবি তোলেন। চলতি বছর ২২ এপ্রিল তিনি চিঠি লিখে সুষমা স্বরাজের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy