খানাপিনা: প্রাতরাশ সারছেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী। শনিবার গাঁধীনগরের চন্দ্রলা গ্রামে। ছবি: পিটিআই।
গুজরাত ভোটের মুখে যা করা হল, সেটাই ৪ মাস আগে করা হল না কেন!
আমজনতার মন জয়ে ২০০-রও বেশি পণ্যে জিএসটি-র হার কমানোর পর প্রশ্ন উঠেছে, মোদী সরকার প্রথম থেকেই এই সিদ্ধান্ত নেয়নি কেন? বিরোধী শিবির তো বটেই। একই প্রশ্ন অর্থনীতিবিদদেরও।
শুক্রবারই ১৭৮টি পণ্যে জিএসটি-র হার ২৮% থেকে কমিয়ে ১৮% করেছে কেন্দ্র। অর্থ মন্ত্রকের একটি সূত্র বলছে, মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যমই তো তাঁর রিপোর্টে সুপারিশ করেছিলেন, করের হার ১৭ থেকে ১৮ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখা হোক। ১৮% হারে জিএসটি-র কথা বলেছিল অর্থ মন্ত্রকের সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসি (এনআইপিএফপি)-ও। প্রশ্ন হল, তা সত্ত্বেও কার ইচ্ছায় রোজকার প্রয়োজনের হরেক জিনিসেও ২৮% কর চাপানো হয়েছিল?
রাহুল গাঁধী আজ গুজরাতে গিয়ে বলেছেন, ‘‘আমরা এখনও খুশি নই। পাঁচ রকম আলাদা আলাদা কর চাই না। একটাই কর চাই।’’ যত দিন না ‘গব্বর সিংহ ট্যাক্স’ শুধরে ‘জেনুইন সিম্পল ট্যাক্স’ চালু হবে, তত দিন কংগ্রেস লড়াই চালাবে বলেও রাহুলের হুঁশিয়ারি।
অর্থনীতিবিদদের মতে, সরকার এখন যা করছে, তা আসলে নিজের ভুল শোধরানো। এনআইপিএফপি-র অধ্যাপক পিনাকী চক্রবর্তীর মতে, ‘‘যে সব ত্রুটি ছিল, তার কিছু দূর হয়েছে। কিন্তু আদর্শ কর কাঠামোয় এখনও পৌঁছনো যায়নি।’’
আরও পড়ুন: বোনের অপমানই বদলে দিয়েছে হার্দিকের জীবন
কোথায় এখনও ত্রুটি রয়েছে? অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সিমেন্ট ও রংয়ের উপর এখনও ২৮% জিএসটি চাপছে। অথচ ইস্পাত, কংক্রিট, কাঠের মতো বাড়ি তৈরির অন্য উপকরণে ১৮% জিএসটি ধার্য হয়েছে। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের দাবি, ‘‘জিএসটি-তে করের হার ১৮ শতাংশেই বেঁধে রাখার দাবির যুক্তি এত দিনে সরকার বুঝল। কাণ্ডজ্ঞান তৈরি হতে ৪ মাস ১০ দিন লাগল।’’ তিনি বলেন, এ বার অধিকাংশ পণ্যের জন্য একটি করের হার ঠিক করার দাবি তোলা হবা। তার সঙ্গে জরুরি পণ্যের জন্য কিছুটা কম ও বিলাস দ্রব্যের জন্য কিছুটা বেশি হার থাকবে।
করের বোঝা কমানোয় ও কর জমার প্রক্রিয়া সরল করায় ভোটের আগে গুজরাতের ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ মিটবে বলে বিজেপির আশা। কিন্তু কংগ্রেসের অভিযোগ, বস্ত্র শিল্পে এখনও সমস্যা রয়েছে। কারণ সিন্থেটিক তন্তুতে জিএসটি এখনও ১২%। অথচ তা দিয়ে তৈরি কাপড়ে জিএসটি ৫%। এতে বড় সংস্থার লাভ হবে। ছোট তাঁত মালিকদের নয়।
জিএসটি-র বোঝা কমায় কি রাজস্ব আদায় বাড়বে? অরুণ জেটলির তেমনই দাবি। কর বিশেষজ্ঞ অর্চিত গুপ্তর মতে, ‘‘কর জমার প্রক্রিয়া সরল করতে গিয়ে রিটার্ন ফাইলের সময়সীমা এত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, কর আদায় বাড়তে অনেক সময় লাগবে। করদাতাদের উপর চাপ থাকবে না। তাই প্রক্রিয়া সরল করেও রাজস্ব আদায় বাড়ানো কঠিন হবে।’’
অর্থ মন্ত্রকের একাংশ বলছে, করের বোঝা কমায় কেনাকাটা বাড়বে। ফলে এই সিদ্ধান্ত অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার দাওয়াই হতে পারে। বণিকসভা অ্যাসোচ্যামের মহাসচিব ডি এস রাওয়াতের মতে, ‘‘এই সিদ্ধান্তে চাহিদা বাড়বে। ব্যবসার পরিবেশ ভাল হবে।’’ কিন্তু পিনাকীবাবুর যুক্তি, ‘‘আমি একে অর্থনীতির স্টিমুলাস বলে ধরছি না। যদি পরোক্ষে অর্থনীতির লাভ হয়, তা হলে ভাল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy