নরেন্দ্রচন্দ্র দেববর্মা
লালগড়়ে বাঘ বেরোনো! নাকি আদিবাসী এলাকায় গেরুয়া প্রভাব একচ্ছত্র হয়ে পড়়া? কোনটায় রহস্য বেশি?
ত্রিপুরার সিপিএম নেতৃত্বকে প্রশ্ন করলে তাঁরা চোখ বুজে দ্বিতীয়টাই বাছবেন! রাজ্যের উপজাতি সংরক্ষিত ২০টি আসনের মধ্যে ১৯টি ছিল যাদের দখলে, সেই বামেদের ঝুলিতে এ বার মাত্র দুই! আর বিজেপি-আইপিএফটি জোট জিতে নিয়েছে ১৭টি আসন। তার মধ্যে আইপিএফটি ৯টি আসনে লড়়ে ৮টিতেই জয়ী! তা-ও আবার সংরক্ষিত আসন চড়়িলামে নির্বাচন বকেয়া আছে ১২ মার্চ। পরিস্থিতি যা, তাতে ওই কেন্দ্রেও বিজেপি-র জয় সময়ের অপেক্ষা!
উপজাতি এলাকার স্বশাসিত জেলা পরিষদের (এডিসি) ২৮টি আসনই যাদের হাতে, সেই বামেরা এমন বিপর্যয়ে স্বভাবতই বিহ্বল। আবার জিতেও খুব স্বস্তিতে নেই বিজেপি। কারণ, আইপিএফটি সভাপতি এন সি দেববর্মা টাকারজলায় রাজ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যবধানে (১২,৬৫২) জিতে জানিয়ে দিয়েছেন, পৃথক তিপ্রাল্যান্ডের দাবিতে তাঁদের আন্দোলন চলবে! ভোটের আগেও এই মর্মেই তাঁদের প্রচার ছিল। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় বিজেপি-র সরকার চালানোর সঙ্কট নেই ঠিকই। কিন্তু বাঘের পিঠে সওয়ার হওয়ার মতো রাজ্য ভাগের দাবি সামাল দিতে হবে তাদের!
আরও পড়ুন: ত্রিপুরা জুড়ে সন্ত্রাসের আবহ, লেনিনের মূর্তি ভাঙতে বুলডোজার
এন সি আজ আনন্দবাজারের কাছে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘‘সরকারে যোগ দেওয়ার সঙ্গে আন্দোলন বন্ধ করার তো কোনও সম্পর্ক নেই! বিজেপি হাইকম্যান্ডের দুই প্রতিনিধি কাল এলে তাঁদের কাছে আমাদের প্রস্তাব জানিয়ে দেব। প্রথমত, পৃথক রাজ্যের দাবি বিবেচনা করতে কেন্দ্রের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি দ্রুত গঠন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, উত্তর-পূর্বের বহু রাজ্যের প্রথা মেনে জনজাতি কাউকে মুখ্যমন্ত্রী করতে হবে।’’
পৃথক রাজ্য নিয়ে এখনকার টানাপড়়েনের সঙ্গে অনেকে বাংলায় গোর্খাল্যান্ড সংক্রান্ত পরিস্থিতির মিল পাচ্ছেন। সেখানে পরিবর্তনের সময়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চাকে পাশে নিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে বিমল গুরুঙ্গেরা গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে হুঙ্কার শুরু করতে রাজ্য সরকারের সঙ্গে তাদের সংঘাত বাধে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা অবশ্য তাঁর রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কৌশলে গুরুঙ্গদের কোণঠাসা করে মোর্চার মধ্যে থেকে বিনয় তামাঙ্গদের কাছে টেনেছেন। ত্রিপুরায় বিজেপি-কেও কৌশলেই আইপিএফটি-র মোকাবিলা করতে হবে।
বিজেপি-র পর্যবেক্ষক সুনীল দেওধরের বক্তব্য, ‘‘আলাদা রাজ্যের দাবি মানব, আমরা কখনও বলিনি। দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলবে।’’ তবে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুব্রত চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘আমাদের এখানে একটা কথা আছে, কামান চাইলে বন্দুক মিলবে! আইপিএফটি এ সব করে উপ-মুখ্যমন্ত্রীর পদ আদায় করতে চাইছে।’’
বিপর্যয়ের প্রাথমিক পর্যালোচনা করতে আজই সিপিএমের রাজ্য দফতরে দু’দফায় আলোচনায় বসেছে দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী। বাঙালি ও উপজাতি মিলিয়ে লাখখানেক নতুন ভোটারদের সমর্থন যে তাঁরা পাননি, বুঝতে পারছেন সিপিএম নেতৃত্ব। উপজাতি যুবকদের হাতে স্মার্টফোন রাখার মতো আর্থিক সঙ্গতি অনেক বছরের চেষ্টায় অর্জন করা গিয়েছিল। সেই স্মার্টফোনেই ‘চলো পাল্টাই’য়ের স্রোত ঢুকে কখন যে পৃথক রাজ্যের আবেগে মগজ ধোলাই হয়ে গিয়েছে, তা-ও সুব্রতবাবুরা টের পাননি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy