Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ইয়েচুরির নাক কেটে কংগ্রেসের যাত্রাভঙ্গ

পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভার ৬টি আসনে ভোট আগামী ৮ অগস্ট। তার মধ্যে পাঁচটি আসনে তৃণমূলের জয় নিয়ে কোনও সংশয় নেই। ষষ্ঠ আসনটি নিয়েই এখন চলছে যাবতীয় অঙ্ক কষা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৭ ০৫:২১
Share: Save:

সিপিএমের হাত ধরেই বিধানসভা নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল হিসাবে ভেসে উঠেছিল কংগ্রেস। এক বছরের মধ্যে সেই সিপিএমের দৌলতেই রাজ্যসভা নির্বাচনে আতান্তরে পড়েছে কংগ্রেস!

পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভার ৬টি আসনে ভোট আগামী ৮ অগস্ট। তার মধ্যে পাঁচটি আসনে তৃণমূলের জয় নিয়ে কোনও সংশয় নেই। ষষ্ঠ আসনটি নিয়েই এখন চলছে যাবতীয় অঙ্ক কষা। সিপিএম ওই আসনে তাদের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিকে প্রার্থী করলে তাঁকে সমর্থন করতে তৈরি ছিলেন রাহুল গাঁধীরা। কিন্তু কংগ্রেসকে রাজনৈতিক অস্পৃশ্য মনে করে তাঁকে প্রার্থী করছে না। কংগ্রেস কোনও প্রার্থী দিলে তাঁকেও সমর্থন করছে না! একে তো নিজেদের বিধায়ক-সংখ্যার জোরে এ রাজ্যে কংগ্রেসের পক্ষে কাউকে রাজ্যসভায় জেতানো সম্ভব নয়। উপরন্তু সিপিএম বিধায়কেরা ভোটদানে বিরত থাকলে আরও বিপদ কংগ্রেসের এবং আরও সুবিধা তৃণমূলের!

সিপিএমের অন্দরের টানাপড়েন এবং রাজ্যসভা ভোটের অঙ্কই এ বার তৃণমূলকে বাড়তি সুবিধা এনে দিচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের ৬টি আসনে এক এক জন প্রার্থীর নির্বাচিত হতে দরকার ৪২টি করে ভোট। কিন্তু ২৯৪ জন বিধায়কের মধ্যে বিজেপি ও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার ৬ বিধায়ক তাঁদের কোনও প্রার্থী নেই বলে ভোট দেবেন না ধরে নেওয়া যায়। আর সদ্যপ্রাক্তন বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার নামও ভোটার তালিকায় থাকবে না। ওই ৭ বিধায়ককে বাদ দিয়ে হিসাব করলে এক এক জন রাজ্যসভা প্রার্থীকে জেতাতে লাগবে ৪১টি করে ভোট। মোট ৩৬ জন বিধায়ক নিয়ে কংগ্রেস বা ৩১ জন বিধায়ক নিয়ে বামফ্রন্ট, কারও পক্ষেই একক ভাবে রাজ্যসভায় জয় সম্ভব নয়। কিন্তু কংগ্রেস আর বাম আলাদা হয়ে গেলেই দরজা খুলে যাচ্ছে তৃণমূলের সামনে!

কংগ্রেসকে সমর্থন করা যাবে না, এই অবস্থান নিয়ে বামেদের ৩১ জন বিধায়ক সরে দাঁড়ালে রাজ্যসভার এক এক প্রার্থীকে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ভোট নেমে আসবে ৩৭-এ। পাঁচ প্রার্থীকে সরাসরি জিতিয়ে তৃণমূলের হাতে তখন বাড়তি থাকবে ২৬টি ভোট।তা র বাইরে থাকছেন ‘দলবদলু’ ১০ বিধায়ক। দলত্যাগ-বিরোধী আইন প্রযোজ্য হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে তৃণমূল যদি তাঁদের সমর্থন নেওয়ার পথে যায়, তা হলে তাদের থাকবে ৩৬ ভোট। যা কংগ্রেসের ৩৬-এর সমান! এমতাবস্থায় কংগ্রেস তাদের ঘর অটুট রাখতে পারবে, এমনটা কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না!

এই জটিল পরিস্থিতিতেই প্রার্থী দিতে সমস্যায় পড়েছে কংগ্রেস। প্রদেশ স্তরের শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ এআইসিসি-কে বলছেন, বিড়ম্বনা এড়াতে বরং প্রার্থী না দেওয়াই ভাল! আবার মীরা কুমারকে প্রার্থী করার প্রস্তাব সমর্থন করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের সমর্থনে রাজ্যসভায় দলীয় প্রার্থী জিতলে রাজ্যে বামেদের সঙ্গে নিয়ে মমতা-বিরোধিতা কঠিন হয়ে যাবে কংগ্রেসের পক্ষে! প্রদেশ কংগ্রেসের এক নেতার তাই সখেদ উক্তি, ‘‘সিপিএমটাই ডুবিয়ে দিল! এদের সঙ্গে জোট রাখা আর সম্ভব?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE