গাঁধী মূর্তি পাদদেশে তৃণমূলের সাংসদদের ধরনা।—নিজস্ব চিত্র।
আগেই তাঁরা ক্ষোভের কথা জানিয়েছিলেন। এ বার তৃণমূলের ঘোষিত কর্মসূচিও বয়কট করলেন তৃণমূলের দুই সাংসদ, সুগত বসু এবং দীনেশ ত্রিবেদী।
আধার কার্ড থাক বা না থাক, জনপরিষেবা সকলেরই পাওয়া উচিত। এই দাবিতে সংসদের গাঁধী মূর্তি পাদদেশে বুধবার সকালে ধরনায় বসার কথা ছিল তৃণমূল সাংসদদের। সেখানেই এ দিন দেখা গেল না সুগত এবং দীনেশকে। সূত্রের খবর, নারদ-কাণ্ডের জেরে তাঁরা এ দিনের কর্মসূচি বয়কট করেছেন। মঙ্গলবার সংসদে তৃণমূলের দলীয় দফতরে রাজ্যসভা এবং লোকসভার সাংসদদের নিয়ে বৈঠকে বসে। সেখানেই দীনেশ ত্রিবেদী, সুগত বসুর মতো সাংসদরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁদের মতে, এমন ঘটনায় দলের ভাবমূর্তি ধাক্কা খেয়েছে। এর পরেই এ দিনের ধরনা কর্মসূচিতে দেখা গেল না তাঁদের।
তবে, আধার কার্ড এবং জনপরিষেবা নিয়ে ধরনা কর্মসূচির আয়োজন করেছিল তৃণমূল। এ দিন সকালে সেই ধরনা মঞ্চ যদিও হয়ে উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিরোধীরা কী ভাবে রাজনৈতিক চক্রান্ত চালাচ্ছে সেটা তুলে ধরার মঞ্চ। এমনকী, বিরোধীদের উদ্দেশে আক্রমণ শানাতে গিয়ে রাজনৈতিক সৌজন্যও ভুলে গেলেন তৃণমূল সাংসদেরা। বেশ কয়েক জন সাংসদের নাম ধরে তুইতোকারি সম্বোধন করা হল। যা দেখেশুনে বিরোধীরা বলছেন, নারদ-কাণ্ডে ফেঁসে মরিয়া হয়ে সংসদ অধিবেশনের শেষ দিনে জাতীয় মঞ্চটাকে ব্যবহার করতে চাইল তৃণমূল।
এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ গাঁধী মূর্তি পাদদেশে জমায়েত হন তৃণমূলের ২০ জন সাংসদ। নারদ ওয়েব পোর্টালের ভিডিওতে যে সাংসদদের টাকা হাতে নিতে দেখা গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে মুকুল রায়, সৌগত রায় এবং সুলতান আহমেদ এ দিন হাজির ছিলেন। প্রথমে সৌগতবাবু আধার এবং জনপরিষেবা নিয়ে বলা শুরু করলেও কিছু ক্ষণের মধ্যেই তা ‘রাজনৈতিক চক্রান্তে’ ঘুরিয়ে দেন। নারদ-কাণ্ডের নাম না করে এ দিন তিনি বলেন, ‘‘বিরোধীরা রাজনৈতিক চক্রান্ত করতেই এমনটা করেছে। আমরা রাজনৈতিক স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করি।’’ এর পরেই তাঁর প্রশ্ন, ‘‘যখন ওই ভিডিও তোলা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে, সেটা ২০১৪ সাল। অর্থাত্ ১৫ তম লোকসভা। এখন ১৬ তম লোকসভায় এ কথা বলে লাভ কী!’’
তাঁর হাত থেকে এর পর ব্যাটন তুলে নেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের স্বভাবসিদ্ধ ঢঙে রাজনৈতিক সৌজন্য ভুলে এর পর বিরোধী দলের সাংসদের উদ্দেশে ‘বাক্যবাণ’ ছুড়তে থাকেন তিনি। আপনি বা তুমি নয়, সরাসরি তুই সম্বোধন করে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে তিনি স্লোগান দিতে থাকেন, ‘আয়রে অধীর লড়বি আয়, মুর্শিদাবাদেই লড়বি আয়’। এখানেই থেমে থাকেননি কল্যাণ। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক তথা রাজ্যসভার সাংসদ সীতারাম ইয়েচুরি হোক বা মহম্মদ সেলিম— সকলকেই তুই সম্বোধন করে তিনি বলতে থাকেন, ‘আয় সীতারাম লড়বি আয়, বাংলার মাটিতেই লড়বি আয়’, বা ‘টাডার নায়ক রশিদ খানের বন্ধু মহম্মদ সেলিম লড়বি আয়, বাংলার মাটিতে লড়বি আয়’।
যে ভাবে এ দিন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় তুইতোকারি করে বিরোধী সাংসদদের ভোটের মাটিতে লড়াই করার ডাক দিয়েছেন, তা দেখেশুনে বিরোধীরা বলছে, এটা বাংলার রাজনৈতিক সংস্কৃতি নয়। উত্তর ভারতের দিকে এমন চল থাকলেও দিল্লিতেও এমনটা শোনা যায় না সচরাচর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy