Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ফর্মে ফিরলেন কি, আজ পরীক্ষা রাহুলের

ফর্মে না থাকায় আত্মমন্থনের জন্য মাঠের বাইরে (পড়ুন দেশের বাইরে) ছিলেন প্রায় দু’মাস। কাল ফের বাইশ গজে নামবেন। তার আগে আজ কিছুটা গা ঘামিয়ে নিলেন রাহুল গাঁধী! অজ্ঞাতবাস থেকে দেশে ফিরেছেন গত পরশু। সে দিন কাচ তোলা গাড়ির জানলা দিয়ে এক রকম না-দেখার মতোই দেখা গিয়েছিল তাঁকে। তার পর আজ প্রথম বার জনসমক্ষে এলেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি। নরেন্দ্র মোদী সরকারের জমি নীতির বিরোধিতায় কাল দিল্লির রামলীলা ময়দানে হবে কংগ্রেসের কৃষক সমাবেশ।

অজ্ঞাতবাস থেকে ফিরে শনিবার প্রথম জনসমক্ষে এলেন রাহুল গাঁধী। নয়াদিল্লিতে নিজের বাসভবনে শুনলেন পঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থানের কৃষকদের অভিযোগ। ছবি:  এএফপি।

অজ্ঞাতবাস থেকে ফিরে শনিবার প্রথম জনসমক্ষে এলেন রাহুল গাঁধী। নয়াদিল্লিতে নিজের বাসভবনে শুনলেন পঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থানের কৃষকদের অভিযোগ। ছবি: এএফপি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৫ ০২:২৪
Share: Save:

ফর্মে না থাকায় আত্মমন্থনের জন্য মাঠের বাইরে (পড়ুন দেশের বাইরে) ছিলেন প্রায় দু’মাস। কাল ফের বাইশ গজে নামবেন। তার আগে আজ কিছুটা গা ঘামিয়ে নিলেন রাহুল গাঁধী!

অজ্ঞাতবাস থেকে দেশে ফিরেছেন গত পরশু। সে দিন কাচ তোলা গাড়ির জানলা দিয়ে এক রকম না-দেখার মতোই দেখা গিয়েছিল তাঁকে। তার পর আজ প্রথম বার জনসমক্ষে এলেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি। নরেন্দ্র মোদী সরকারের জমি নীতির বিরোধিতায় কাল দিল্লির রামলীলা ময়দানে হবে কংগ্রেসের কৃষক সমাবেশ। তার চব্বিশ ঘণ্টা আগে আজ পঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান ও পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের কৃষকদের সঙ্গে নিজের বাসভবনে দেখা করে অভাব-অভিযোগের কথা শুনলেন রাহুল।

রাজনীতির কথা পরে! আজকের প্রধান কৌতূহলই ছিল, কেমন দেখাচ্ছে রাহুলকে? ক্লান্তি ও নির্বাচনী পরাজয়ের যাবতীয় পুরনো গ্লানি কাটিয়ে আরও ঝরঝরে, পরিণত রাজনীতিকের মতো? নাকি এখনও ইতস্তত করছেন!

দেশের ফেরার দিন চেহারা যতটা ঝকঝকে ছিল, আজ ঠিক ততটা নয়। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় রাহুল এক সময়ে জানিয়েছিলেন, রোজ ‘শেভ’ করা তাঁর অভ্যাস নয়, ত্বকে সমস্যা হয়। হয়তো তাই তাঁর গালে আজ দু’দিনের খোঁচা খোঁচা দাড়ি। দেখে ঠাওর করা যায়, ওজন কিছুটা কমেছে। সাদা কুর্তা-পাজামা পরনে, মূলত সিরিয়াস মুখ।

সকাল ১১টা নাগাদ বারো নম্বর তুঘলক রোডে আগামিকালের সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়ে শাকিল অহমেদ, সচিন পায়লট, দিগ্বিজয় সিংহ, গুরুদাস কামাত-সহ দলের সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করেন রাহুল। তার পর ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে বেশ কয়েক জন কৃষক তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। দলের যে নেতারা সহ-সভাপতিকে খুবই কাছ থেকে দেখেছেন বা কথা বলেছেন তাঁরা জানালেন, আগের থেকে কথায় কথায় কম হাসছেন রাহুল। কৃষক সমস্যার বিভিন্ন বিষয় গুরুত্ব দিয়ে শুনেছেন। নিজে কথাও বলেছেন কম।

তা-ও কী বলেছেন রাহুল? হরিয়ানার মেওয়াতের কৃষক চৌধুরী সপাট বললেন, ‘‘মোদী সরকারের কৃষক-বিরোধী আইনের কথা আগাগোড়া জানেন রাহুলজি। কিন্তু সেটাই একমাত্র সমস্যা নয়। কৃষকরা তাঁদের কৃষিপণ্যের ন্যায্য সহায়ক মূল্য পাচ্ছেন না। সম্প্রতি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। তারও ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাচ্ছে না।’’ সপাটের দাবি, রাহুল তাঁদের বলেছেন, ‘আপনাদের হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলব। জোর করে কৃষকের জমি নিতে দেব না। ক্ষতিপূরণ আদায় করতে যা লড়াই করতে
হয় করব।’

সপাট একা নন। রাহুলের বাড়ি থেকে বেরিয়ে হিসারের কৃষক নাসিব সিংহ, রাজস্থানের রাজারাম— কম-বেশি একই ধরনের সমস্যার কথা তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে জানান, রাহুল তাঁদের হয়ে লড়াইয়ের অঙ্গীকার করেছেন। এত বেশি সংখ্যায় কৃষকেরা আজ এসেছিলেন যে, একটা সময় তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসেন রাহুল। ব্যারিকেডের ধারে গিয়ে অনেকের সঙ্গে কথা বলেন। কেউ তাঁর ছবি তোলেন মোবাইলে, মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করতেও দেখা যায় এক প্রবীণকে।

উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনার এই ছবিটাই যেন খোয়া গিয়েছিল গত বছর দুয়েক ধরে! কংগ্রেস নেতাদের একাংশের বক্তব্য, কৃষকদের সঙ্গে রাহুলের আজকের সাক্ষাতের মূল উদ্দেশ্য ছিল আবহটা তৈরি করা। নইলে বিদেশ থেকে ফিরে তিনি দুম করে কৃষক সমাবেশের মঞ্চে উঠে পড়লে কিছুটা যান্ত্রিক দেখাত।

কিন্তু রাহুলের পরিবর্তন কতটা হল?

কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির এক সদস্যের কথায়, সেটা হয়তো আজই বোঝা যাবে না। রাহুলের অনুপস্থিতিতে সরকারের জমি অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসী আন্দোলনে নেমেছিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। রাজ্যওয়াড়ি সফরও করেছেন তিনি। মোদী সরকার আদৌ কৃষক ও গরিবের প্রতি সহানুভূতিশীল কি না, সে বিষয়ে জোরদার প্রশ্ন তিনি তুলে দিতে পেরেছেন। সনিয়ার সেই আক্রমণাত্মক ভূমিকায় কংগ্রেসের অন্দরের নেতিবাচক পরিবেশ অনেকটাই কেটেছে। অর্থাৎ, রাহুলের জন্য এক রকম জমি তৈরিই করে দিয়েছেন তাঁর মা। এখন দেখার, সরকারের বিরুদ্ধে কৃষকদের একাংশের এই ক্ষোভকে কতটা ভরবেগ দিতে পারেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি। এবং তাতে ভর করে হারানো রাজনৈতিক জমি তিনি উদ্ধার করতে পারেন কি না, সেটাও দেখার। আগামিকালের সভায় এ সবেরই একটা আভাস মিলতে পারে।

দলের এক শীর্ষ নেতার মতে, শুধু কংগ্রেসের জনপ্রিয়তা বাড়ানো নয়, দলের অভ্যন্তরীণ রসায়নের জন্যও রাহুলের পরিবর্তন জরুরি। মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে তিনি যদি সফল ভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন, তা হলে সেটা দলে রাহুলের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পথকেও সুগম করবে। সে ক্ষেত্রে শীলা দীক্ষিত, সন্দীপ দীক্ষিত বা অমরেন্দ্র সিংহের মতো বিরোধী স্বরকে নিয়ন্ত্রণ করতে কোনও অসুবিধে হবে না। তা ছাড়া মোদীর জমি নীতির বিরুদ্ধে রাহুলের আন্দোলন সফল হলে ভবিষ্যতে এই লড়াইয়ে বাম ও জনতা পরিবারকে জুড়ে নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বৃহত্তম বিরোধী দলের এই তৎপরতায় সরকারের মধ্যেও যে উদ্বেগ বাড়ছে, সন্দেহ নেই। কংগ্রেস কৃষকদের ভুল বোঝাচ্ছে বলে দাবি করে অরুণ জেটলিরা এখন বলছেন, জমি অধ্যাদেশ পাশ হলে কৃষির পাশাপাশি শিল্পেরও বিকাশ হবে। এমনিতেই কৃষকদের ক্ষতিপূরণ চার গুণ বাড়ানো হচ্ছে। তার পর শিল্পায়নের মাধ্যমে বছরে তিরিশ হাজার যুবকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

বিজেপি নেতারাও বুঝতে পারছেন, আসল লড়াইটা হল মানুষের মনে ধারণা তৈরির লড়াই। আর সেই লড়াইয়ে টিম রাহুল যে বিনা যুদ্ধে জমি ছাড়বে না, তা আজ বুঝিয়ে দিয়েছেন জয়রাম রমেশ-দিগ্বিজয় সিংহরা। কালকের সমাবেশের আগে আজ ‘জমিন ওয়াপসি’ নামে একটি ওয়েবসাইট চালু করেছে কংগ্রেস। সরকার জমি অধ্যাদেশ পাশ করাতে কী ভাবে ‘ভাঁওতা’ দিচ্ছে, তা তুলে ধরা হয়েছে সেখানে। সেই সঙ্গে বতর্মান আইন ও অধ্যাদেশের ফারাকও তুলে ধরা হয়েছে।

তবে কংগ্রেস নেতারা মানছেন, জমি অধিগ্রহণ নিয়ে ভবিষ্যৎ রাজনীতির গতিপ্রকৃতি অনেকটাই নির্ভর করছে কালকের সভার ওপর! বিশেষ করে রাহুলের ওপর! এ বার কি ফর্মে ফিরবেন তিনি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE