শত বছরে পা দিল মাইবাং দুর্গাবাড়ির পুজো!
স্বভাবতই এ বার এই পুজো নিয়ে রয়েছে মাইবাংয়ের মানুষের মধ্যে এক ধরণের উন্মাদনা। পাহাড়ি জেলার সব চেয়ে প্রাচীন এই পুজো। ১৯১৭ সালে মাইবাংয়ের তৎকালীন ব্যবসায়ী রাধারমন দাসের উদ্যোগে ও কাশীরাম বর্মণ, মহেন্দ্র বর্মণ, দ্বারিকা কানু, সুরেশ চন্দ্র দাসের প্রচেষ্টায় মাইবাং দুর্গাবাড়ির পুজো শুরু হয়।
এ পুজোয় আনন্দ আছে, উন্মাদনাও আছে। জড়িয়ে রয়েছে দশ দশটি দশকের আবেগ। তবে সব কিছুর মধ্যেও ধরে রাখা হয়েছে পুজোর সাত্ত্বিকতা। প্রাচীন পুজোটির ‘ইউএসপি’ হল ওই ‘অভিজাত সাত্ত্বিকতা’। দূরেই রাখা হয়েছে থিমের পুজোকে। উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, থিমের পুজোর জন্য অন্যরা আছে। দুর্গাবাড়ি, আফটার অল দুর্গাবাড়ি। শতবর্ষের ঐতিহ্যটা তো ধরে রাখতে হবে!
মাইবাং দুর্গাবাড়ির পুজো আজও বাঙালি ও ডিমাসা জনগোষ্ঠীর যৌথ প্রয়াস। সত্তর-আশির দশকে পুজোর দিনগুলিতে যাত্রাপালার আসর বসত। মাইবাংয়ের বাসিন্দা পান্নালাল দেবরায় বলেন, ‘‘উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদের তৎকালীন সিইএম প্রয়াত শ্যামচান্দ হোজাই, শান্তি রঞ্জন গাঙ্গুলি, শশীমোহন হাফলংবার, যতীন্দ্র দাস, গোপাল ধর, গোপেন্দ্র মালাকার, অক্ষর কর, সুধীর মালাকার, জগদীশ দাসরা ছিলেন যাত্রা অভিনয়ের মূল উদ্যোক্তা। উদ্দেশ্য ছিল লোকশিক্ষা ও দর্শনার্থীদের মনোরঞ্জন। মাইবাং দুর্গাবাড়ির পুজোয় শুরু থেকে পশু বলির প্রচলন ছিল। তবে ১৯৫২ সাল থেকে পশু বলির প্রচলন উঠে যায়। যদি কেউ পশু বলির মানত করেন তবে সে ক্ষেত্রে বলির পশু দেবীর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে তা জীবিত অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
দীর্ঘ দিন হল পুজোর অন্যতম আকর্ষণ, যাত্রাপালা বন্ধ হয়েছে। তবে অষ্টমী ও নবমীর রাতে আরতি ও ঢাক বাজানোর প্রতিযোগিতা হয়। দুর্গাবাড়ির পুজো শুরু হয়েছিল মাইবাং বাজারে। পরে ৮০-র দশকে নতুন দুর্গাবাড়ি ও স্থায়ী মণ্ডপ তৈরি হওয়ার পর থেকে পুজো সরে এসেছে সেখানেই। একশোতম পুজো কমিটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন মাইবাংয়ের প্রবীণ নাগরিক জে এল জিডুং, সম্পাদক বিকেন্দ্র হোজাই। ষষ্ঠীর দিন উন্মোচন করা হবে শতবার্ষিকী স্মরণিকা।
দুর্গাবাড়ির পুজোর বাজেট এ বার ১০ লাখ। আলোক সজ্জা, প্রতিমা, ঢাকির দল আনা হচ্ছে বাইরে থেকে। প্রাচীন পুজোর জাঁকজমক রয়েছেই। তবে পুজো কমিটির সম্পাদক বিকেন্দ্র হোজাই মনে করিয়ে দিলেন, শাস্ত্রীয় বিধান মতে পুরো সাত্ত্বিকতা বজায় রেখে পুজোর আয়োজন করাটাই দুর্গাবাড়ির বিশেষত্ব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy