Advertisement
E-Paper

গোলাপি মলাটে বন্দি মেয়েদের প্রতি অনিঃশেষ অবিচার

নারী ক্ষমতায়নে একাধিক প্রকল্প হাতে নিলেও মোদী সরকারই স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে, গত দশ বছরে মেয়েদের কাজ করার হার কমেছে। ২০০৫-’০৬ সালে যেখানে ৩৬% মহিলা চাকুরিরত ছিলেন, ২০১৬-এ তা দাঁড়িয়েছে ২৪%-এ।

অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:০২
বিক্ষোভ: সমান বেতনের দাবিতে মহিলাদের ধর্না বিহারে। সোমবার। ছবি: পিটিআই।

বিক্ষোভ: সমান বেতনের দাবিতে মহিলাদের ধর্না বিহারে। সোমবার। ছবি: পিটিআই।

সত্যযুগে ছেলের প্রত্যাশায় হত পুত্রেষ্টি যজ্ঞ। সময় বদলালেও মানসিকতার যে তেমন বদল হয়নি, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল নরেন্দ্র মোদী সরকারের চলতি আর্থিক সমীক্ষা। তাতে বলা হয়েছে— প্রথম বা দ্বিতীয় সন্তান মেয়ে হলে, ছেলের প্রত্যাশায় পরিবার পরিকল্পনায় যেতে রাজি নন অধিকাংশ দম্পতি। কারণ বংশ রক্ষায় ছেলেই চাই! তা না হওয়া পর্যন্ত সন্তান নেওয়া বন্ধ করতে রাজি নয় অধিকাংশ পরিবার।

নারী ক্ষমতায়নে জোর দিতে আজ আর্থিক সমীক্ষার মলাটটি গোলাপি রঙের করার সিদ্ধান্ত নেন সরকারের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ছেলের প্রত্যাশায় কন্যা ভ্রূণহত্যা সাধারণ ঘটনা। আর কোনও ভাবে জন্মালে, অবহেলা, অসুখ, অপুষ্টিতে হারিয়ে গিয়েছে প্রায় ৬ কোটি ৩০ লক্ষ মেয়ে। বেঁচে গিয়ে চরম উপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছে ২ কোটি ১০ লক্ষ মেয়ে। পরিবারের পুত্র সন্তানের সঙ্গে বৈষম্য, পুষ্টিকর খাবারের অভাব, শিক্ষা-স্বাস্থ্যে বঞ্চনা— এ সব মেনে নিয়েই দিন গুজরান করছে তারা। সুব্রহ্মণ্যনের কথায়, ‘‘অমর্ত্য সেনের লেখায় ওই হারিয়ে যাওয়া মেয়েদের কথা নানা সময়ে উঠে এসেছে।’’ ছেলের চাহিদা সব থেকে বেশি পঞ্জাব, হরিয়ানায়। পাল্লা দিচ্ছে রাজস্থান, গুজরাত, দিল্লি। প্রথম স্থানে মণিপুর, আর তালিকার মাঝামাঝি জায়গায় পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড বা কর্নাটক।

নারী ক্ষমতায়নে একাধিক প্রকল্প হাতে নিলেও মোদী সরকারই স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে, গত দশ বছরে মেয়েদের কাজ করার হার কমেছে। ২০০৫-’০৬ সালে যেখানে ৩৬% মহিলা চাকুরিরত ছিলেন, ২০১৬-এ তা দাঁড়িয়েছে ২৪%-এ। কেন, সেই ব্যাখ্যা না দিলেও, আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের প্রধান ক্রিশ্চিয়ান ল্যাগার্ডের প্রতিধ্বনি করে সুব্রহ্মণ্যন বলেন, ‘‘পুরুষের সঙ্গে মেয়েরাও কাজ করতে নামলে অর্থনীতি ২৭% বাড়তে পারত।’’

আরও পড়ুন: দোহাই, আর নয় নোটবন্দি

পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব কী ভাবে বাজেটে প্রতিফলিত হয়, তা-ও দেখিয়েছে সমীক্ষা। স্বাধীনতার পর থেকে প্রতিটি বাজেট বক্তৃতায় মহিলা শব্দটি কত বার উল্লেখ হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হয়। দেখা গিয়েছে বহু বাজেটে শব্দটির উল্লেখই নেই। আর সব থেকে বেশি বার আছে ২০১৩-১৪-র বাজেটে, ২৪ বার। সৌজন্যে ২০১২-র নির্ভয়া কাণ্ড!

নারীর প্রতি বঞ্চনা রাজনৈতিক ব্যবস্থাতেও। জনসংখ্যার ৪৯% মহিলা। মহিলা সংরক্ষণ বিলে সংসদ-বিধানসভায় ৩৩% আসন সংরক্ষণের কথা বলা রয়েছে। তার পরেও বর্তমানে লোকসভায় মহিলা সাংসদ মাত্র ১১.৮%— ৫৪২ জনে ৬৪ জন। গত সাত বছরে যা বেড়েছে কেবল ১%। একই ছবি বিধানসভাগুলিতে। গোটা দেশের সব বিধানসভায় মোট ৪১১৮ জন বিধায়কের মধ্যে মহিলা মাত্র ৯%। অথচ রিপোর্ট বলছে, রোয়ান্ডার মতো আফ্রিকার পিছিয়ে পড়া দেশেও সংসদে মহিলা সদস্য ৬০%। প্রতিবেশী পাকিস্তান (২০.৬%) বা বাংলাদেশও (২০.৩%) এ বিষয়ে এগিয়ে।

Economic Survey 2018 Pink Theme Women Empowerment Central Government Arvind Suvramanian Narendra Modi Arun Jaitley অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy