তখন: প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাইয়ের সঙ্গে জগজীবন রাম, চন্দ্রশেখর এবং অটলবিহারী বাজপেয়ী।—ফাইল চিত্র।
নিশানায় তখন ছিল কংগ্রেস, আরও নিশ্চিত করে বললে ইন্দিরা গাঁধী-সঞ্জয় গাঁধী জুটি। এখন নিশানায় বিজেপি, আরও নিশ্চিত করে বললে নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর সহযোগীরা। মোদীর মোকাবিলা করতে হাত মেলানোর পথে আর এক পা এগোল সাবেক জনতা দলের কয়েকটি অংশ। নতুন দলের নেতা নির্বাচিত হয়েছেন মুলায়ম সিংহ যাদব।
১৯৭৭ সালে জরুরি অবস্থা উঠে যাওয়ার পরে ইন্দিরা গাঁধীর মোকাবিলায় হাত মিলিয়েছিল বিভিন্ন বিরোধী দল। জয়প্রকাশ নারায়ণের অনুপ্রেরণায় তৈরি হয় জনতা পার্টি। তাতে রামমনোহর লোহিয়ার শিষ্য সমাজবাদীরা যেমন ছিলেন, তেমনই ছিল লালকৃষ্ণ আডবাণী-অটলবিহারী বাজপেয়ীদের ভারতীয় জনসঙ্ঘও। রাজনীতির অমোঘ নিয়মে এখন বন্ধু হয়েছে শত্রু। আবার প্রাক্তন শত্রুর দিকে হাত বাড়ানোর কথা ভাবছেন সাবেক জনতা পরিবারের সদস্যেরা। প্রয়োজনে তাঁরা যে কংগ্রেস-সিপিএম-তৃণমূলের সাহায্য নিতে পিছপা হবেন না তাও ঘরোয়া আলোচনায় স্পষ্ট করে দিয়েছেন ওই নেতারা।
বিজেপির মোকাবিলায় একজোট হওয়া নিয়ে লালুপ্রসাদ, মুলায়ম সিংহ যাদব, নীতীশ কুমারদের মধ্যে আলোচনা চলছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। আজ সমাজবাদী পার্টি, আরজেডি, জেডিইউ, জেডিএস-র মতো ছ’টি দলের নেতারা দিল্লিতে সমাজবাদী জনতা দল গঠনের কথা ঘোষণা করেছেন।
মুলায়মের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজের পর জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমার জানিয়েছেন, “সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলি এক হয়ে একটি নতুন দল গঠন করবে। এ ব্যাপারে রূপরেখা তৈরি এবং যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব আমরা মুলায়ম সিংহ যাদবকে দিলাম।” স্থির হয়েছে, এই নতুন
দল আগামী দিনে বিহার ও উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে লড়াইয়ে নামবে বিজেপির বিরুদ্ধে।
আজ বৈঠকে মুলায়ম এবং নীতীশ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন লালুপ্রসাদ, জেডিএস প্রধান দেবগৌড়া, জেডিইউ নেতা শরদ যাদব। রাজনৈতিক সূত্রের মতে, লোকসভায় বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর এ বার বিভিন্ন রাজ্য দখলে সক্রিয় হয়েছে মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি। মূলত উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারে প্রতিরোধ তৈরি করতে তাই এক হওয়ার কৌশল নিয়েছেন লালু, মুলায়ম, নীতীশরা।
১৯৭০-এর দশকের পরে কখনও এক সঙ্গে, কখনও আলাদা আলাদা ভাবে বহু পথ হেঁটেছেন জনতা পরিবারের সদস্যেরা। এক সময়ে ফের কংগ্রেসের বিরুদ্ধে একজোট হতে জনতা পার্টি ও ভারতীয় লোকদল মিশিয়ে দিয়ে জনতা দল গড়েছিলেন বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহ। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি জনতা দল ভেঙে গিয়ে লালু-নীতীশ ও মুলায়মের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে একাধিক আঞ্চলিক দল। যারা ক্ষমতা দখল করে বিহার, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলিতে। কিন্তু মোদীর উত্থানে নিজেদের শক্তি ধরে রাখা ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠেছে লোহিয়াপন্থী এই সব নেতাদের।
গত মাসেই তাই মুলায়মের বাড়িতে বৈঠকে বসে আপৎকালীন ভিত্তিতে নতুন দল গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে সময় বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ জানিয়েছিলেন, “ইতিমধ্যেই বিহারে বিজেপিকে রুখতে হাত মিলিয়েছে আরজেডি ও জেডিইউ। পাশাপাশি মুলায়ম ও দেবগৌড়ার দলের সঙ্গে একটি বৃহত্তর সমাজবাদী পরিবার গঠনই আমাদের লক্ষ্য।” সেই বৈঠকেই সবক’টি সমাজবাদী মনোভাবাপন্ন দলগুলিকে এক জোট করে একটি দল গঠন করার কথা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল।
জনতা রাজ
এখন: বৃহস্পতিবার দিল্লিতে মুলায়ম, শরদ যাদব, দেবগৌড়া, লালুপ্রসাদ ও নীতীশ। ছবি: পিটিআই।
মোদী-জুজুই কি এই হাতে হাত ধরার প্রেরণা? প্রকাশ্যে অবশ্য সে কথা অস্বীকার করেছেন নীতীশ-মুলায়মরা। নীতীশ জানিয়েছেন, “কাউকে ভয় পাওয়ার বিষয় নয়। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে বিরোধী দলগুলির এক জোট হওয়া প্রয়োজন রয়েছে বলেই মনে করছি আমরা। এখন এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে কেউ সরকারকে কোনও প্রশ্নই করছে না।” আপাতত স্থির হয়েছে এই ছ’পার্টির জোট ২২ ডিসেম্বর রাজধানীতে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ধর্নায় বসবে। তবে, লোকসভায় এই ছ’দলের সদস্য সংখ্যা ১৫, রাজ্যসভায় ২৫। ফলে ছ’দলের সংযুক্তিতে সংসদে গণ্য করার মতো কোনও শক্তি তৈরি হচ্ছে না। কিন্তু, বিহার এবং উত্তরপ্রদেশে ২০১৫ এবং ২০১৭ সালে বিধানসভা নির্বাচন। অনেকের মতে, তখন এই নতুন দল বিজেপির সঙ্গে টক্কর দিতে পারবে।
এখনই এই জোটকে তৃতীয় ফ্রন্ট হিসেবে ব্যাখ্যা করতে চাইছেন না নীতীশেরা। তবে দলীয় সূত্রে খবর, বিজেপিকে রুখতে যদি আগামী দিনে কংগ্রেস, সিপিএমের মতো দলগুলি এগিয়ে এলে তাদের স্বাগত জানানো হবে। দরজা খোলা থাকছে মমতা বা মায়াবতীর জন্যও। প্রকাশ্যে অবশ্য নীতীশের দাবি, “এখনই অন্য দলগুলি নিয়ে কথা হয়নি। আগে সমাজবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী দলগুলি এক হোক। তারপরে অন্য দলের কথা ভাবা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy