বিক্রি বন্ধ: বাজারে বাজির পসরা। কোর্টের নির্দেশে ক্রেতা নেই। সোমবার দিল্লিতে। এএফপি
রাস্তা জুড়ে ফুটছে বাজি, কান ফাটানো আওয়াজ থামছেই না যেন। দু’পাশের বাড়িগুলির ছাদ থেকেও একটানা একই রকম শব্দ। শোনা যাচ্ছে না কথা, রাস্তা দিয়ে চলতে গিয়ে আতঙ্ক পথচারীর চোখেমুখে। আর তারই মধ্যে আলোর হাজারো ফুলঝুরি ডানা মেলছে আকাশে। নানা রঙে নানা নকশায় আলোর খেলায় মেতে উঠছে অন্ধকার আকাশ।
দীপাবলির রাতে এই ছবিটাই রাজধানী দিল্লির স্বাভাবিক চিত্র। তবে উৎসবের দিনেরাতে উচ্ছ্বাস প্রকাশের চেনা ছবি বন্ধ হতে চলেছে রাজধানীতে। কারণ, এ বার দীপাবলিতে রাজধানী ও সংলগ্ন শহরগুলিতে শব্দ ও আতসবাজির বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সোমবার দেশের শীর্ষ আদালত রাজধানীবাসীর উদ্দেশে বলেছে, ‘‘আসুন, এ বছর, অন্তত একটা দীপাবলী বাজি না পুড়িয়ে কাটানোর চেষ্টা করা যাক।’’ অবশ্য বাজি না পোড়ানোয় কোনও লিখিত নির্দেশ দেওয়া হয়নি।
বাজির জেরে দিল্লির আকাশে বাতাসে দূষণের মাত্রা এতটাই যে গত বছর নভেম্বরেই আদালত রাজধানীতে শব্দবাজি ও আতসবাজি বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছিল। সেই রায়কেই আজ আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল কোর্ট। অবশ্য এরই মধ্যে এ বছর সেপ্টেম্বরে রাজধানীতে বাজি বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা আংশিক প্রত্যাহার করেছিল আদালত। আজ বিচারপতি এ কে সিক্রির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ জানিয়েছে, ১ নভেম্বর পর্যন্ত রাজধানী ও সংলগ্ন ‘জাতীয় রাজধানী অঞ্চল’-এ (গাজিয়াবাদ, সহিবাবাদ, ফরিদাবাদ, নয়ডা, গুরগাঁও) বাজি বিক্রি বন্ধ থাকবে। তার পরেই আংশিক নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গ কার্যকরী হবে। দীপাবলি ১৯ অক্টোবরে। অর্থাৎ এই রায়ে দীপাবলিতে বাজির বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা থেকেই গেল। রাজধানী ও সংলগ্ন শহরগুলিতে বাজি বিক্রেতাদের লাইসেন্সও স্থগিত করা হয়েছে।
আলোর উৎসবে এমন সিদ্ধান্তের পিছনে জাতীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। তারা বাজি বন্ধের পক্ষেই সওয়াল করেছে। দিল্লি সরকারও কোর্টে জানিয়েছে, ছাত্রছাত্রীরা যাতে বাজি ছাড়াই উৎসবের আনন্দে মাততে পারে, তাদের মধ্যে সেই প্রচার চালাচ্ছেন তারা। তবে শীর্ষ আদালতের রায়ের পরে বিতর্ক থেমে থাকেনি। লেখক চেতন ভগত দীপাবলিতে বাজি বন্ধ করাকে বড়দিনে ক্রিসমাস ট্রি বন্ধ করা কিংবা বকরি ইদে পশুবলি নিষিদ্ধ করার সঙ্গে তুলনা করেছেন। ইদ ও মহরমে রক্তপাত বন্ধ করতে আদালত ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন— সে প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। প্রাক্তন ক্রিকেটার বীরেন্দ্র সেহবাগও টুইটারে লিখেছেন, ‘‘এ বছর আরও ধুমধাম করে দীপাবলি পালন করতে চান যাঁরা, তাঁরা রি টুইট করুন!’’
বাজি বন্ধ হওয়ায় প্রশ্ন তুলেছেন বিক্রেতারাও। কনফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া ট্রেডারস-এর সাধারণ সম্পাদক প্রবীণ খান্ডেণওয়াল একে ‘মৌলিক অধিকারের হরণ’ আখ্যা দিয়েছেন। তাঁর যুক্তি, কোর্ট শুধুমাত্র বাজি বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করায় অন্য রাজ্য থেকে বাজি এনে পোড়ানোর সম্ভাবনা থাকছে। ফলে ধাক্কা খাবেন শুধু দিল্লির ব্যবসায়ীরাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy