মেহমুদ আখতার।
ভারতে চরবৃত্তি চালাতে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা ‘ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স’ (আইএসআই)-এর চররা সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) জওয়ানদেরও হাত করে নিচ্ছে! নানা ভাবে বিএসএফ জওয়ানদের প্রলোভন দেখিয়ে সীমান্তের নজরদারি ব্যবস্থার খুঁটিনাটি ও প্রতিরক্ষা-প্রকৌশলের তথ্য জেনে নিচ্ছে। ওই অভিযোগে ভারতে পাক হাইকমিশনের ভিসা সেকশনের এক কর্মচারী মেহমুদ আখতারকে বৃহস্পতিবার দিল্লি পুলিশ আটক করে। ‘কূটনৈতিক সুরক্ষা’ থাকায় তাঁকে গ্রেফতার করা যায়নি। তাঁকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে। তবে আখতারের তিন সাকরেদকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ভারতে আইএসআইয়ের চরবৃত্তির ‘কিংপিন’ আখতার ছিলেন পাক সেনাবাহিনীর বালুচ রেজিমেন্টে। ডেপুটেশনে আখতার আইএসআইয়ের ‘চর’ হন ২০১৩ সালে। ভারতে পাক হাইকমিশনের আরও কয়েক জন কর্মচারী ওই চর-চক্রে জড়িত থাকতে পারেন। সন্দেহভাজনদের গতিবিধির ওপর নজর রাখা হচ্ছে।
দিল্লি পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ওই চর-চক্রে বিএসএফের কিছু জওয়ানও জড়িত থাকতে পারেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। কারণ, সীমান্তে জওয়ান-মোতায়েন সম্পর্কে যে সব তথ্য মেহমুদ আখতার ও তাঁর সঙ্গী-সাথীদের হাতে এসেছিল, বিএসএফ জওয়ানদের সহযোগিতা ছাড়া তার নাগাল পাওয়া সম্ভব ছিল না পাক গুপ্তচরদের। দিল্লি পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘কোনও এক জন জওয়ান সাহস করে পাক গুপ্তচরদের হাতে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত গোপন তথ্য তুলে দিয়েছেন, এটা ভাবলেও ভুল করা হবে। হয়তো ওই তথ্য পাচারে জড়িত রয়েছে বিএসএফের আরও কয়েক জন জওয়ান।’’
দিল্লি পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর জেরার মুখে আখতার জানিয়েছেন, ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে তিনি আইএসআইয়ে ছিলেন ডেপুটেশনে। রাওয়ালপিন্ডির কাহুটা গ্রামের বাসিন্দা আখতার তার আগে পাক সেনাবাহিনীর ৪০ নম্বর বালুচ রেজিমেন্টের হাওয়ালদার ছিলেন। গত আড়াই বছর ধরে আখতারের পোস্টিং হয়েছিল দিল্লির পাক হাইকমিশনে।
দিল্লি পুলিশ ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সূত্র্রের খবর, আখতার ও তাঁর সাকরেদরা ভারতে ওই চর-চক্র চালানোর জন্য বিএসএফ জওয়ান তো বটেই, অনেক সাধারণ নাগরিককেও ‘নিয়োগ’ করেছিল। আর তার জন্য অকাতরে বিলিয়েছিল টাকা। নারীর প্রলোভনেও খামতি ছিল না। ওই কাজে বিএসএফের কয়েক জন অফিসারও জড়িত রয়েছেন। তাঁদের ভূমিকা কতটা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
দিল্লি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেছেন, ‘‘গত ছ’মাস ধরেই আমরা আখতার আর তাঁর সাকরেদদের পিছনে লেগেছিলাম। ওদের ‘ফলো’ করা হচ্ছিল। গত ২৫ অক্টোবর আমরা খবর পাই, পরের দিন (২৬ অক্টোবর) দিল্লি চিড়িয়াখানায় সুভাষ জাঙ্গির ও মৌলানা রামজানের সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল আখতারের। সকাল দশটা নাগাদ। ওই খবর পেয়েই দিল্লি পুলিশের একটি তদন্তকারী দল সেখানে ফাঁদ পাতে। আর তাতেই পা দিয়ে আখতার ও তাঁর সাকরেদরা ধরা পড়েন পুলিশের জালে। ওই সময় আখতার আর তাঁর সাকরেদরা তথ্য আদানপ্রদান করছিলেন। পুলিশের হাতে ধরা পড়ার সময় আখতার প্রথমে নিজেকে ‘ভারতীয় নাগরিক’ বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলেন। পুলিশকে তিনি ‘মেহবুব রাজপুত’-এর নামে ইস্যু হওয়া একটি আধার কার্ডও দেখিয়েছিলেন। বলেছিলেন, তিনি দিল্লির চাঁদনি চকের বাসিন্দা। পুলিশ সুভাষ জাঙ্গির ও মৌলানা রামজানের দু’টি মোবাইল ফোনও আটক করেছে।
কী ভাবে ভারতে ‘চর’ নিয়োগের প্রক্রিয়া চালাতেন আখতার?
দিল্লি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা জানাচ্ছেন, পাক হাইকমিশনের ভিসা অফিসের কর্মচারী হওয়ায় কাকে চর হিসেবে নিয়োগ করা যায়, সেটা চট করে বুঝে ফেলাটা সহজ হোত আখতারের। আখতার কথা বলতে বলতে লোকজনের পারিবারিক অবস্থার খবরটা আগে জেনে নিতেন। তার পর যাঁদের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভাল নয়, তাঁদের প্রচুর অঙ্কের টাকার প্রলোভন দেখানো হোত। আর ‘বড় ঘুঘু’দের ঘায়েল করার জন্য দেওয়া হোত নারীর প্রলোভনও। আখতার আর তাঁর সাকরেদরা বেশির ভাগ সময়েই কথা বলতেন হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে। যেহেতু সে সবের কোনও রেকর্ড থাকে না। আর মোবাইল ফোনে তাঁরা কথা বলতেন সাঙ্কেতিক ভাষায়। দিল্লিতে প্রতি মাসে এক বার করে মৌলানা ও জাহাঙ্গিরের সঙ্গে দেখা করতেন আখতার। সেখানেই প্রচুর অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তথ্যের আদানপ্রদান হোত। প্রতিটি তথ্য আদানপ্রদানের জন্য দেওয়া হোত ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা। শোয়েব নামে জোধপুরের পাসপোর্ট ও ভিসা এজেন্টের মাধ্যমে মৌলানা ও জাঙ্গিরের সঙ্গে পরিচিত হন আখতার। মৌলানা ও জাঙ্গির দু’জনেই রাজস্থানের নাগপুরের বাসিন্দা। শোয়েবকে জোধপুরে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন- বর্ণবিদ্বেষ? ভারতীয় বংশোদ্ভূতকে পুড়িয়ে খুন অস্ট্রেলিয়ায়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy