এই আবাসন কেলেঙ্কারিতে নাম জড়ানোয় নিজের গদি খোয়াতে হয়েছিল মহারাষ্ট্রের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অশোক শঙ্কররাও চহ্বাণকে। শেষমেশ বহু বিতর্কিত সেই আদর্শ আবাসন ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিল বম্বে হাইকোর্ট। সেই সঙ্গেই ক্ষমতার অপব্যবহারের অপরাধে এই মামলায় জড়িত সব আমলা, রাজনীতিক ও মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
এই রায়ের বিরুদ্ধে সু্প্রিম কোর্টে আবেদন করার জন্য অবশ্য তিন মাস সময় দিয়েছে আদালত। মহারাষ্ট্র সরকারের বিরোধিতা সত্ত্বেও বম্বে হাইকোর্ট জানিয়েছে, ঠিক ১২ সপ্তাহ পরে ‘আদর্শ হাউসিং সোসাইটি’ এই রায়ের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে আবেদন করতে পারবে।
২০১১ সালে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রক প্রথমে ৩১ তলা এই আবাসন ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিল। কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকও আদালতকে জানিয়েছিল, আদর্শ হাউসিং সোসাইটি-র কোনও সিআরজেড (কোস্টাল রেগুলেশন জোন) ছাড়পত্র নেই। পরিবেশ মন্ত্রকের রায় যাতে দ্রুত কার্যকর করা যায়, তার আবেদন করেছিল কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকও। কিন্তু পরিবেশ মন্ত্রকের রায় চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় আদর্শ হাউসিং সোসাইটি।
গত কয়েক বছরে একের পর এক বিতর্কে জড়িয়েছে আদর্শ আবাসন। দক্ষিণ মুম্বইয়ের কোলাবার অভিজাত এলাকায় তৈরি এই বহুতল মূলত কার্গিল সংঘর্ষে নিহত সেনাদের স্ত্রী ও ভারতীয় সেনা বাহিনীর সদস্যদের জন্য তৈরি করেছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। কিন্তু সেই আবাসনে অবৈধ ভাবে নিজেদের নাম ঢোকানোর অভিযোগ ওঠে মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন নেতা-মন্ত্রী ও আমলার নামে।
২০১০ সালে প্রথম আদর্শ কেলেঙ্কারির খবর প্রকাশ্যে আসে। অভিযোগ ওঠে, তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অশোক চহ্বাণ নিজের প্রভাব খাটিয়ে তাঁর তিন আত্মীয়কে জলের দরে ফ্ল্যাট পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। বিনা অনুমতিতে বাড়িয়ে দিয়েছেন আবাসনের পরিসরও। চাপের মুখে পড়ে ওই বছরই ইস্তফা দিতে বাধ্য হন চহ্বাণ। তবে তিনি একা নন, রাজ্যের আরও নেতা-মন্ত্রী-আমলা একই ভাবে নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে ওই আবাসনে ফ্ল্যাট নিয়েছেন। তালিকায় নাম আছে দুই প্রাক্তন সেনাধ্যক্ষেরও। বম্বে হাইকোর্ট এঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ফৌজদারি মামলা শুরুর নির্দেশ দিয়েছে। চহ্বাণের সঙ্গে নাম জড়িয়েছিল মহারাষ্ট্রের আরও দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর— বিলাসরাও দেশমুখ এবং সুশীল শিন্দে। বিলাসরাও মারা গিয়েছেন। তবে বাকি দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে সিবিআই এবং ইডি।
বম্বে হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। মুম্বইয়ে বিজেপির মুখপাত্র মাধব ভাণ্ডারী আজ বলেছেন, ‘‘এটা একটা ঐতিহাসিক রায়। দুর্নীতিগ্রস্ত নেতা-আমলাদের জন্য একটা বড় আঘাত।’’ একই সুর শিবসেনার গলাতেও। কংগ্রেস-এনসিপি-র দুর্নীতির কথা বলেছে তারা। শিবসেনা মুখপাত্র নীলম গোরহের কথায়, ‘‘আদালতের এই রায়েই দুর্নীতির ক্যানসারটাকে প্রকাশ্যে এনে দিয়েছে।’’
বিজেপি-সেনার সাঁড়াশি আক্রমের সামনে কংগ্রেস মুখপাত্র সচিন সবন্ত শুধু বললেন, ‘‘আমাদের নেতারা নির্দোষ। আইনি পথে লড়াই করেই আমরা তা প্রমাণ করব।’’ বিষয়টি নিয়ে নীরব অভিযুক্ত কংগ্রেস নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক চহ্বাণ। বলেছেন, ‘‘রায়ের প্রতিলিপি হাতে পাইনি। যা বলার, তার পরে বলব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy