রিজওয়ান খান। ছবি: সংগৃহীত।
ঠিক যেন আরও এক রিজওয়ানুর রহমানের কাহিনি। তবে এ বার প্রেক্ষাপট খানিকটা আলাদা। বছর দশেক আগে খুন হওয়া কড়েয়ার যুবক রিজওয়ানুরের রহস্য-মৃত্যুর ছায়াই যেন ফিরে এল রাজধানীর বুকে।
মোটরবাইক কেনার জন্য বেরিয়েছিলেন। তবে, রাত হলেও বাড়ি ফেরেননি বছর বাইশের যুবক। শেষমেশ তাঁর দেহ মিলল বান্ধবীর বাড়ির সামনে থেকে। একটি গাড়িতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন তিনি। মাথার ডান দিকে বুলেটের ক্ষত। রাজ্য স্তরের হকি খেলোয়াড় রিজওয়ান খানের রহস্যময় মৃত্যুতে দাবি-পাল্টা দাবি উঠতে শুরু করেছে। পুলিশের দাবি, আত্মহত্যা করেছেন রিজওয়ান। কিন্তু পরিবারের দাবি, ছেলেকে খুন করা হয়েছে।
রিজওয়ানের পরিবার জানিয়েছে, সোমবার সকালে একটি ব্যাগে ২ লক্ষ টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিল তাঁর মোবাইলও। মোটরবাইক কেনার জন্য বেরিয়েছিলেন। তবে, রাত বাড়লেও বাড়ি ফেরেননি রিজওয়ান। পশ্চিম দিল্লির সুভাষ নগরে তাঁদের বাড়ি। ওই এলাকার আশপাশে খোঁজখবর শুরু করেন পরিবারের লোকজন। পর দিন সকাল সওয়া ১০টা নাগাদ পুলিশে খবর দেন তাঁরা।
পুলিশ জানিয়েছে, দক্ষিণ দিল্লির সরোজিনী নগরে রিজওয়ানের বান্ধবীর বাড়ি। সেখানেই একটি মারুতি গাড়ির ভিতর থেকে উদ্ধার হয় রিজওয়ানের দেহ। রক্তে ভেসে যাচ্ছিল। ডান হাতে ধরা ছিল একটি পিস্তল। দক্ষিণ দিল্লির ডিসিপি রোমিল বানিয়া বলেন, “গাড়ির ভিতর থেকে কোনও সুইসাইড নোট মেলেনি। প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, এটি আত্মহত্যার ঘটনা। তবে আগামী কাল ময়নাতদন্তের পরই এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে।”
আরও পড়ুন
স্ত্রী-শ্যালিকাকে গুলি করে আত্মঘাতী এনএসজি কম্যান্ডো
পুলিশের দাবি, সোমবার সকালে হকি প্র্যাকটিস করার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন রিজওয়ান। সেই সন্ধ্যাতে বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। তবে তিনি সময় ওডিশায় থাকায় তাঁর সঙ্গে দেখা হয়নি রিজওয়ানের। পুলিশের আরও দাবি, টাকার ব্যাগটি বান্ধবীর বাড়িতেই রেখে দেন রিজওয়ান। এবং সারা রাত বান্ধবীর বাড়ির বাইরেই একটি গাড়িতে বসেছিলেন তিনি। সম্ভবত তাঁকে ফোন করার চেষ্টা করছিলেন রিজওয়ান।
আরও পড়ুন
জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন রিজওয়ান। হকিতে অনূর্ধ্ব-১৬ বিভাগে দেশের প্রতিনিধিত্বও করেছেন। রিজওয়ানের পরিবারের দাবি, মঙ্গলবার সকালে ফোন করে এক ব্যক্তি জানান, তাঁদের বাড়িতে রিজওয়ানের ২ লক্ষ টাকা ও মোবাইল ফোন রয়েছে। তা যেন তাঁরা নিয়ে যান। রিজওয়ানের বাবা বলেন, “টাকার ব্যাগ নিতে ওই ব্যক্তির দেওয়া ঠিকানায় পৌঁছে যাই আমরা। সেখানেই ওই গাড়িটি দাঁড়ানো ছিল। আমরা উঁকি দিতেই দেখি সেখানে রিজওয়ানের দেহ পড়ে রয়েছে।”
আরও পড়ুন
পিছলো বাবরি শুনানি, গুজরাত জুড়ে রাম রাজনীতি
পুলিশ জানিয়েছে, মোবাইলের কল-লিস্ট দেখে জানা গিয়েছে, বান্ধবীকে একাধিক বার ফোন করেছিলেন রিজওয়ান। বান্ধবীর বাড়িতে টাকা কেন রাখল রিজওয়ান তা-ও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে কি রিজওয়ান বান্ধবীর পরিবারের কাছে টাকা ধার নিয়েছিলেন? উঠছে প্রশ্ন।
দিল্লির রিজওয়ান খানের ঘটনা মনে করিয়ে দিচ্ছে কড়েয়ার যুবক রিজওয়ানুরের কাহিনি। অবস্থাপন্ন ঘরের মেয়ে প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে প্রেম। এবং তার পরে বিয়ে হয় রিজওয়ানুরের। কিন্তু, বিয়ের এক মাসের মধ্যেই ২১ সেপ্টেম্বর ২০০৭-এ পাতিপুকুরের রেললাইনের ধারে পাওয়া গিয়েছিল রিজের দেহ। প্রিয়ঙ্কার বাবা অশোক তোদি তথা তাঁর পরিবার সেই বিয়ে মেনে নিতে পারেননি। রেজিস্ট্রির ক’দিন বাদে প্রিয়ঙ্কা পার্ক সার্কাসে শ্বশুরবাড়ি চলে যান। অভিযোগ, এর পরে পুলিশ এবং আরও কিছু লোকের সাহায্য নিয়ে তোদি পরিবারের পক্ষ থেকে ‘চাপ’ তৈরি করা হয় রিজ ও তাঁর পরিবারের উপরে। ৮ সেপ্টেম্বর প্রিয়ঙ্কা সল্টলেকে বাপের বাড়ি ফিরে যান। এর দু’সপ্তাহ পরে মেলে রিজের দেহ। সেই কাহিনিরই যেন পুনরাবৃত্তি ঘটল দিল্লিতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy