এটা প্রায় উল্টো-হাঁটার আহ্লাদ বা ভাবের ঘরে চুরি!
ব্যক্তি হোক বা সংস্থা, উন্নতির শীর্ষে পৌঁছতে ধীরে ধীরে লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর রাস্তাই নেন সকলে। সেই জায়গায় গত আর্থিক বছরে নিজেদের মুখ রক্ষা করতে উল্টো পথে হেঁটে পণ্য পরিবহণের লক্ষ্যমাত্রাটাই কমিয়ে দিতে বাধ্য হয় ভারতীয় রেল! এতে লক্ষ্য পূরণ করতে না-পারার গ্লানির বদলে রেল নিজেদের পিঠ নিজেরা চাপড়ে দিতে পেরেছে বলে কটাক্ষ করছে রেলেরই একটি মহল!
রেল সূত্রের খবর, গত আর্থিক বছরের শুরুতে সারা দেশে পণ্য পরিবহণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১১৬ কোটি টন। কিন্তু পরে মালপত্র পরিবহণে ভাটার টান দেখে সেই লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ১০৪ কোটি টন করে দেওয়া হয়। রেলকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, শুরুতে যে-লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল, তা কমিয়ে না-আনলে এ বারেও ভরাডুবি হতো। কারণ, পুরনো হিসেবে এ বার রেলের পণ্য বহন কমেছে ৪৫ লক্ষ ৬০ হাজার টন। তবে পণ্য পরিবহণের পরিমাণ কমলেও টন-পিছু মাসুল বাড়িয়ে দেওয়ায় ক্ষতি বাড়েনি। রেল হয়তো এতে কমবেশি স্বস্তি পাচ্ছে। তবে রেলের বর্তমান ও প্রাক্তন অনেক কর্তারই বক্তব্য, পিছিয়ে গিয়ে মুখ বাঁচানোর এই আত্মপ্রতারণা দীর্ঘদিনের ঢাল হতে পারে না।
তার মধ্যেই দক্ষিণ-পূর্ব রেল কৃতিত্বের ছাপ রাখতে পেরেছে বলে রেল বোর্ড সূত্রে জানা গিয়েছে। পণ্য পরিবহণে তারা এ বার শীর্ষে রয়েছে। এবং লক্ষ্যমাত্রা না-কমিয়েই। গত মরসুমে প্রথম থেকেই তাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪ কোটি টন। সেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৪.১৭ শতাংশ বেশি পণ্য বহন করেছে তারা। উত্তর রেল, দক্ষিণ-পূর্ব-মধ্য রেল ও দক্ষিণ-পশ্চিম রেলের জায়গা হয়েছে তার পরে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, সামগ্রিক ভাবে দেশে রেলের পণ্য পরিবহণের লক্ষ্যমাত্রা কমাতে হল কেন?
রেলকর্তাদের ব্যাখ্যা, মূলত কয়লার চাহিদা কমে যাওয়াতেই রেলে পরিবহণ কমে গিয়েছে। এর সঙ্গে রয়েছে স্টিল ও লৌহ আকরিকের বাজারে মন্দা এবং কন্টেনার পরিষেবার মাসুল বৃদ্ধি। গত আর্থিক বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত
বাজার খারাপ দেখেই রেলে পণ্য পরিবহণ বাড়াতে এক গুচ্ছ পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছিল। আগে কন্টেনার ভর্তি না-হলে ভোজ্য তেল, তরিতরকারি, ফলমূল, আসবাবপত্র বহন করত না রেল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পাইকারি হারে পরিবহণ ছাড়াও খুচরো মালপত্র বহনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। লক্ষ্যমাত্রা কমাতে হলেও এই সিদ্ধান্ত ভাল ফল দিয়েছে বলে জানাচ্ছে রেল।
পরিবহণে ভরাডুবি থেকে রেলকে রক্ষা করেছে তাদের নতুন নীতি। সেই নীতি অনুযায়ী পণ্যবোঝাই আস্ত ট্রাককে মালগাড়ির ক্যারিয়ারে চাপিয়ে সরাসরি গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। রেলকর্তারা জানাচ্ছেন, এই পরিষেবায় লাভ হচ্ছে তিন দিক থেকে। • ট্রাকে যে-সময় লাগত, তার থেকে তাড়াতাড়ি গন্তব্যে পণ্য পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে। • তেল বেঁচে যাওয়ায় সাশ্রয় হচ্ছে অনেকটাই। • কমানো যাচ্ছে পরিবেশ দূষণও। হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, অসম, ত্রিপুরা, মহারাষ্ট্রে এই পরিষেবা চালু করে দিয়েছে রেল। কিছু দিনের মধ্যে সারা দেশে এ ভাবেই পণ্য বহন করবে তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy