দলের অন্তর্কলহটি প্রথমে উস্কে দিয়েছিল অরুণ জেটলির একটি মন্তব্য। তার পর একে একে যোগ দিলেন অনেকেই।
ভোপাল থেকে দিল্লি এখন তুলকালাম ব্যপম রহস্যে। আর তার মধ্যেই বিজেপি-র ভিতরের সম্পর্কের চোরাস্রোত ফের বেরিয়ে পড়ল প্রকাশ্যে। তাতে প্রথম ইন্ধনটি এল অরুণ জেটলির গতকালের মন্তব্য থেকে। তিনি কাল বলেছিলেন, ব্যপম কাণ্ডে নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত। আপাত ভাবে এই মন্তব্য ছিল বিরোধীদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য। কিন্তু দলের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, ‘নিরপেক্ষ তদন্তের’ কথা বলে জেটলি কি আসলে মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর দিকেই তোপ দাগলেন? তা হলে কি মধ্যপ্রদেশের ব্যপম কাণ্ডে নিরপেক্ষ তদন্ত হচ্ছে না? দলগত ভাবে বিজেপি যখন অবস্থান নিয়েছে, সিবিআই তদন্ত এখন রাজ্যের এক্তিয়ারে নয়, আদালতই এই বিষয়ে স্থির করবে, তখন জেটলি কেন আর তদন্তের কথা বলতে গেলেন? নিশ্চয়ই তিনি আদালতের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেননি! তা হলে এই অনাস্থা কার প্রতি?
বিজেপি শিবিরেই সকলেই জানেন, শিবরাজ সিংহ চৌহান গোড়া থেকেই নরেন্দ্র মোদীর বিরোধী নেতা বলে পরিচিত। লোকসভা নির্বাচনের আগে যখন নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ হিসেবে তুলে ধরার কথা চলছিল, সেই সময় লালকৃষ্ণ আডবাণী-সুষমা স্বরাজের মতো ঘোরতর মোদী-বিরোধীরা শিবরাজ সিংহ চৌহানের নাম সামনে নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হয়নি। এই অবস্থায় মধ্যপ্রদেশে ব্যপম কাণ্ডে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনায় যখন খোদ মুখ্যমন্ত্রী কাঠগড়ায় উঠছেন, সেই সময় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় নরেন্দ্র মোদীর সেনাপতি অরুণ জেটলির মন্তব্য কি শিবরাজকেই আরও বিপাকে ফেলার চেষ্টায়?
ললিত মোদী বিতর্কে সুষমা স্বরাজের নাম আসতেই দলের অনেকে বলতে শুরু করেছিলেন, এর পিছনে জেটলিরও ভূমিকা রয়েছে। সুষমা স্বরাজের ঘনিষ্ঠ কীর্তি আজাদ তো প্রকাশ্যেই জেটলির বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। কিন্তু দলে রাজনাথ সিংহ, নিতিন গডকড়ীরাই সেই সময় সুষমা-বসুন্ধরার অপসারণ ঠেকিয়ে রাখার ব্যাপারে বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন। আর আজও দেখা গেল একই ছবি। মধ্যপ্রদেশ সফরে গিয়ে শিবরাজ সিংহ চৌহানের পাশে এসে দাঁড়াতে দেখা গেল সেই রাজনাথ সিংহকে। তিনি সেই কথাই বললেন, যেটি এত দিন ধরে শিবরাজ বলে আসছেন। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের সিবিআই তদন্তে কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু এর আগে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে যত বার সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়ে বিরোধী পক্ষ গিয়েছে, তত বার সেটি খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। এর পর কী করে রাজ্য সরকার সিবিআই তদন্ত দাবি করতে পারে? তবে আদালত যদি এখনও সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়, তা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আমি তৎক্ষণাৎ তা গ্রহণ করব।’’
শিবরাজ ঘনিষ্ঠ এক নেতা আজ বলেন, ‘‘ব্যপম কাণ্ড আসলে নতুন নয়। কিন্তু এই সুযোগে মুখ্যমন্ত্রীকে জবাই করতে দলেরই একটি অংশ সক্রিয়।’’ এই অস্বস্তির মধ্যেই কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিতে শিবরাজ সিংহের আরও বিরোধীরাও এখন উঠেপড়ে লেগেছেন। মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও বর্তমানে মোদী সরকারের মন্ত্রী উমা ভারতীও আজ বলেন, ‘‘আমিই প্রথম সিবিআই তদন্তের দাবি করেছিলাম। যে ভাবে একের পর এক মৃত্যু হচ্ছে, সেটি বেশ ভয়াবহ বিষয়। এর পিছনে ষড়যন্ত্রও থাকতে পারে। যখন আমার নাম এফআইআর-এ রাখা হয়েছিল, সে রাতে আমারও মনে হয়েছিল মরে যাব। পরের দিন অবশ্য ঘুরে দাঁড়াই।’’ রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাবুলাল গৌড়ও বলেন, অনেক বিষয়ে রাজ্য সরকার তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেনি। আইন মন্ত্রকের পরামর্শ নিয়েই কাজ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy