প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অনেক আগে রাজপথে কখনও সখনও প্রাতর্ভ্রমণে যেতেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। ইন্ডিয়া গেটের সামনে রাজপথের এক কোণে দাঁড়িয়ে রাজীব-সনিয়া নবদম্পতির আইসক্রিম খাওয়ার ছবিটি তো কিংবদন্তি হয়ে আছে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে ইন্ডিয়া গেট পর্যন্ত প্রশস্ত এই সড়কের মাঝে বসে পড়ে কোনও প্রধানমন্ত্রীকে যোগাসন করতে কস্মিন কালেও দেখা গেছে কি! নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী এ বার সেটাই করে দেখাবেন!
রাষ্ট্রপুঞ্জ ২১ জুনকে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। সে দিন রাজপথ জুড়ে পঁয়ত্রিশ মিনিটের আসরে ১৫টি যোগাসন করে দেখাবেন প্রধানমন্ত্রী। এবং তাঁর সঙ্গে সামিল হবেন ৪৫ হাজার ছাত্রছাত্রী, সরকারি কর্মী, সেনা জওয়ান, আমলা, মন্ত্রী, নেতা ও সাংসদরা। থাকবেন করিনা কপূর, শিল্পা শেট্টি, সোনম কপূরের মতো তারকারাও। কারণ, মোদী চাইছেন, যাতে বিশ্বের মানচিত্রে এই দেশকে যোগ দিয়েও যায় চেনা! ২১ জুন রেকর্ড গড়তে চাইছেন মোদী। এ জন্য গিনেস বুক অব রেকর্ডস-এর কাছে সরকারি তরফে আবেদনও জানানো হয়েছে!
এ পর্যন্ত ঠিকঠাকই এগোচ্ছিল। কিন্তু বিতর্কটা শুরু হল আজ থেকে। রাজপথে নিজে যোগাসন করার পাশাপাশি এ দিন সনিয়া গাঁধী ও রাহুল গাঁধীকেও সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে নিমন্ত্রণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ-ও জল্পনা, ওই ১৫টি যোগাসন রপ্ত করার জন্য একটি সিডি-ও নাকি পাঠানো হয়েছে নিমন্ত্রণপত্রের সঙ্গে। কিন্তু সেই নিমন্ত্রণের প্রাপ্তি স্বীকারের আগেই কংগ্রেসের থেকে সমালোচনা ধেয়ে এল প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে।
কংগ্রেসের বক্তব্য, ‘‘অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুরক্ষার দিক থেকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যখন ব্যর্থ হচ্ছে তাঁর সরকার, তখন আরও একটা খেলনা হাতে দিয়ে ‘ছেলে ভোলাতে’ চাইছেন মোদী। সরকারে তাঁর প্রথম বছরে স্বচ্ছ ভারতের নামে মানুষকে হাতে ঝাঁটা তুলে নিতে বলেছিলেন। দ্বিতীয় বছরের খেলনা হল, যোগাসন শেখা! দেশের মানুষ যেন তা নিয়েই থাকেন! সরকারের কাজের সুযোগ বাড়াতে পারল কিনা, কেউ যেন সেই প্রশ্ন না তোলেন!’’
প্রধানমন্ত্রীর নিমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে সনিয়া বা রাহুল যোগাসনের আসরে সামিল হবেন কিনা, সেই জবাব অবশ্য কংগ্রেস আজ দেয়নি। কারণ, কংগ্রেস মনে করছে আমন্ত্রণের পিছনে রয়েছে রাজনীতির প্যাঁচ। তাই যাওয়া না-যাওয়ার প্রসঙ্গটাই সরিয়ে রেখে কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি আজ তিনটি অভিযোগ তুলেছেন মোদী ও তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে।
এক, স্বচ্ছ ভারত প্রকল্প ছিল ইউপিএ জমানার নির্মল ভারত প্রকল্প। আবার স্বাস্থ্য মন্ত্রকের আওতায় যোগাসনের প্রসারে গুরুত্ব দেওয়া শুরু হয়েছিল বাজপেয়ী জমানার শেষ দিক থেকে। এগুলির কোনওটিই মোদীর উদ্যোগ নয়।
দুই, স্বচ্ছ ভারত অভিযান বা যোগ-দিবস নিয়ে এই আড়ম্বর— এগুলির কোনওটিই দেশের বৃদ্ধি ও কাজের সুযোগ বাড়ানোর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্তও নয়। আসলে এগুলিকে সামনে রেখেই ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করছেন।
তিন, দেশকে যোগ দিবস পালনের হুজুগে মাতানোর চেষ্টায় নামলেও মোদীর সরকার আদৌ আন্তরিক নয় যোগের ব্যাপারে। তাঁর জমানায় আয়ূষ তথা যোগাসনের প্রসারের জন্য বরাদ্দ তো বাড়েইনি, বরং কমেছে। শুধু কি তা-ই, বরাদ্দ টাকার ৪৫ শতাংশের বেশি খরচই করে উঠতে পারেনি সরকার। কেন্দ্রের অধীন বিভিন্ন যোগ প্রতিষ্ঠানের কয়েকটি মাত্র ৪ শতাংশ টাকা খরচ করতে পেরেছে গত বছর। অনেকগুলি আবার সেটুকুও পারেনি।
শুধু কংগ্রেস নয়, সমালোচনা করছেন অন্য বিরোধী দলগুলিও। সমাজবাদী পার্টির এক কেন্দ্রীয় নেতা আজ বলেন, ‘‘যোগাসন করা খুবই ভাল ব্যাপার। তবে যে রকম ঢাক- ঢোল পেটানো হচ্ছে, তা দেখে মনে হচ্ছে নরেন্দ্র মোদী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে কোনও ফারাক নেই। রাজ্যের উন্নয়ন হোক বা না হোক মমতা যেমন গান-বাজনা-উৎসব করে বাংলার মানুষকে খুশি রাখতে চান, মোদীও তেমন যোগাসন করিয়ে ভাল রাখতে চান দেশের মানুষকে।’’
সরকার অবশ্য কংগ্রেস বা বিরোধীদের এই সব অভিযোগে কান দিতে নারাজ। বরং সরকারি তন্ত্রের একটা বড় অংশ এখন ২১ জুনের আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত। কেন্দ্রীয় সরকার ছাড়াও ২১ জুন সকাল পৌনে সাতটায় গোটা দেশেই এই কমর্সূচি গ্রহণের জন্য রাজ্য সরকারগুলিকে অনুরোধ করা হয়েছে। বার্তা পাঠানো হয়েছে স্কুলগুলিতে। এমনকী বিদেশে, ভারতীয় দূতাবাসগুলিতেও নির্দেশ গিয়েছে। ২০০টি দেশে নিমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছে অনুষ্ঠানে প্রতিনিধি পাঠানোর জন্য ।
সরকারি সূত্রের খবর, দেশ বিদেশের টিভি ও ইন্টারনেটে যাতে ওই অনুষ্ঠান সরাসরি দেখা যায়, আটঘাট বাঁধা হচ্ছে সে ব্যাপারেও। বেসরকারি মিডিয়া সংস্থাগুলির সঙ্গেও আলোচনা করছেন তথ্যসচিব বিমল জুলকা।
উদ্দেশ্য একটাই। বিশ্ব রেকর্ড করা!
তবে সত্যিই যদি সে দিন রাজপথে মোদীর সঙ্গে এক সারিতে বসে যোগাসন করতে রাজি হন সনিয়া বা রাহুল! তবে সে তো আর এক রেকর্ড!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy