যতীন মেটা
নাম, যতীন মেটা। জন্মসূত্রে গুজরাতি। পেশায় হিরের ব্যবসায়ী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি গৌতম আদানি হলেন তাঁর ছেলে সুরজের খুড়শ্বশুর।
যতীনের সংস্থার কাছে এ দেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলির অনাদায়ী ঋণ বাবদ মোট পাওনা প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। অথচ ভারতীয় নাগরিকত্ব ছেড়ে এই ব্যবসায়ী ইতিমধ্যেই সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস নামে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের একটি ছোট্ট দেশের নাগরিকত্ব নিয়েছেন। কর ফাঁকির স্বর্গ বলে পরিচিত যে দেশটির সঙ্গে ভারতের কোনও প্রত্যর্পণ চুক্তি নেই। শুনে মনে হতে বাধ্য, ইনি ‘দ্বিতীয়’ বিজয় মাল্য।
এই যতীনকে নিয়েই এখন রাজধানী তোলপাড়। তাঁর মালিকানাধীন সংস্থার বিরুদ্ধে সিবিআই আধ ডজন মামলা ঠুকেছে। অভিযোগ, বিপুল ঋণ ফাঁকির পাশাপাশি পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক, বিজয়া ব্যাঙ্ক ও সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ককে ১৫৩০ কোটি টাকা প্রতারণাও করেছেন যতীন। মামলা সেই প্রতারণার অভিযোগেই।
প্রশ্ন উঠেছে, একে গুজরাতি, তায় মোদী-ঘনিষ্ঠ শিল্পপতির আত্মীয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে কী বার্তা দিতে চাইছে কেন্দ্র?
রাহুল গাঁধী ইতিমধ্যেই অভিযোগ করেছেন, দেশের ৫০ জন শিল্পপতি ব্যাঙ্কের কোটি কোটি টাকা ঋণ শোধ না করলেও মোদী সরকার কিছুই করছে না। উল্টে মাল্যর মতো লোককে দেশ ছাড়তে সাহায্য করছে। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবারই রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে এ বিষয়ে বাড়তি ক্ষমতা দিতে অর্ডিন্যান্স জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। মাল্যকে দেশে ফেরানোর তৎপরতাও শুরু হয়েছে। আজও ভারত-ব্রিটেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক স্তরের বৈঠকে মাল্যর মতো অভিযুক্তদের প্রত্যর্পণে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নেতারা তাই মনে করছেন, যতীনের বিরুদ্ধে সিবিআই-ইডিকে মাঠে নামিয়ে মোদী সরকার দেখাতে চাইছে, নিরপেক্ষ ও কড়া মনোভাব নিয়েই চলছে তারা।
আরও পড়ুন: সঙ্ঘের কাছে পাঠ নিচ্ছেন রাষ্ট্রদূতরা
সিবিআই সূত্রের বক্তব্য, ‘উইনসাম ডায়মন্ডস’ এবং ‘ফরএভার ডায়মন্ডস’ নামে যতীনের দু’টি সংস্থা সংযুক্ত আরব আমিরশাহি থেকে সোনা আমদানি করে গয়না বানিয়ে তা ওই দেশেরই ১৩টি সংস্থাকে রফতানি করত। ব্যাঙ্কের ‘লেটার অব ক্রেডিট’-এর মাধ্যমে সোনা আমদানি করতেন যতীন। কিন্তু তিনি আরবের সংস্থাগুলির সঙ্গে চুক্তিভঙ্গ করায় তিনটি ব্যাঙ্ককে (পঞ্জাব ন্যাশনাল, বিজয়া, সেন্ট্রাল) যতীনের হয়ে সমস্ত টাকা শোধ করতে হয়। সিবিআইয়ের সন্দেহ, আরবের সংস্থাগুলির সঙ্গে আসলে তলায় তলায় যোগসাজশ ছিল যতীনের। ২০১২-তেই তিনি উধাও হয়ে যান। পরে সস্ত্রীক ভারতের নাগরিকত্ব ছেড়ে সেন্ট কিটসের নাগরিকত্ব নেন। ব্যাঙ্কগুলিতে প্রতারণার সেই অর্থ যতীন বাহামাতে লগ্নি করেছেন বলেও গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। গত বছরেই যতীনের ১৭২ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy