এগারো বছরের মেয়েটির নাচ দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ‘নৃত্যসম্রাজ্ঞী’ আখ্যা দিয়েছিলেন তাকে। উপহার দিতে চেয়েছিলেন একটি শাল এবং পঞ্চাশ টাকা। কিন্তু মেয়েটির বাবা বললেন, কবির আশীর্বাদ চেয়ে নাও। কিশোরী সিতারাকে প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করেছিলেন কবি।
পরবর্তী জীবনে কত্থকের সম্রাজ্ঞী হয়ে ওঠার স্বপ্ন সত্যি হয়েছিল সিতারা দেবীর। দীর্ঘ রোগভোগের পরে মুম্বইয়ের হাসপাতালে সোমবার রাতে দেড়টা নাগাদ মারা গেলেন প্রবীণা শিল্পী। বয়স হয়েছিল ৯৪। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত পাঁচ সপ্তাহ ধরেই মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছিলেন তিনি। সিতারার জামাই রাজেশ মিশ্র জানিয়েছেন, অন্ত্যেষ্টি সম্পন্ন হবে বৃহস্পতিবার সকালে।
১৯২০ সালে কলকাতায় জন্ম সিতারা দেবীর। দীপাবলির প্রাক্কালে ধনতেরাসের দিন জন্ম হয়েছিল বলে নাম রাখা হয়েছিল ধনলক্ষ্মী। সেকালের রীতি ভেঙে তাড়াতাড়ি বিয়ে না করে স্কুল এবং নাচকেই বেছে নেয় ছোট্ট সিতারা। অবশ্য প্রথম থেকেই তার সঙ্গে ছিল বাবার সমর্থন এবং উৎসাহ। মাত্র সাত বছর বয়সে বাবার তত্ত্বাবধানেই কত্থক শেখা শুরু। বাবা সুখদেব মহারাজ ছিলেন ব্রাক্ষ্মণ পণ্ডিত এবং কত্থকশিল্পী। খুব ছোট বয়সেই ‘সাবিত্রী সত্যবান’ নামে একটি নৃত্যনাট্যে স্কুলের শিক্ষিকাদের তাক লাগিয়ে দেয় ছোট্ট ধনলক্ষ্মী। বাবা জানতে পেরে মেয়ের নতুন নাম রাখেন সিতারা (অর্থাৎ নক্ষত্র)।
পরিণত বয়সে শুধু নিজের দেশই নয়, সারা বিশ্বকে কত্থকের জাদুতে মোহিত করেছেন সিতারা। মহাদেবের তাণ্ডব-নৃত্যের পৌরুষ মেয়েদের মধ্যে তিনিই প্রথম মূর্ত করেন। লন্ডনের রয়্যাল অ্যালবার্ট হল, নিউ ইয়র্কের কার্নেগি হল-এ অনুষ্ঠান করেছেন সিতারা। হিন্দি ছবির জগতে কত্থককে নিয়ে আসার পিছনেও অগ্রণীর ভূমিকা তাঁরই। ‘ঊষাহরণ’, ‘নাগিনা’, ‘অঞ্জলি, ‘মাদার ইন্ডিয়া’র মতো বেশ কয়েকটি হিন্দি ছবিতে নৃত্যশিল্পী হিসেবে তাঁকে দেখা গিয়েছে। সিতারার কাছে কত্থক শিখেছেন মধুবালা, রেখা, মালা সিন্হা এবং কাজলের মতো নায়িকারা।
সিতারা দেবীর প্রথম স্বামী ‘মুঘল ই আজম’খ্যাত পরিচালক কে আসিফ। পরবর্তী কালে বিয়ে করেন প্রতাপ বারোটকে। সিতারার পুত্র রঞ্জিত বারোট দেশের শীর্ষস্থানীয় ড্রামবাদকদের অন্যতম। সিতারার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিরজু মহারাজ থেকে লতা মঙ্গেশকর, অমিতাভ বচ্চন থেকে জাকির হুসেন সকলেই বলছেন, আক্ষরিক অর্থেই এক নক্ষত্র বিদায় নিলেন পৃথিবী থেকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy