Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
থোড়াই কেয়ার গোরক্ষকদের

গো-রক্ষার নামে মানুষ খুন বরদাস্ত নয়, বার্তা প্রধানমন্ত্রীর

জনতার এই চাপের মুখেই আজ মুখ খুলতে বাধ্য হলেন প্রধানমন্ত্রী, যিনি একের পর এক ঘটনার পরেও নীরব ছিলেন। মহাত্মা গাঁধীর স্মৃতি বিজড়িত গুজরাতের সাবরমতী আশ্রমে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে আমি বেদনা ও অসন্তোষ ব্যক্ত করতে চাই।’’

গাঁধীগিরি: গুজরাতের সাবরমতী আশ্রমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার আমদাবাদে। ছবি: এএফপি ।

গাঁধীগিরি: গুজরাতের সাবরমতী আশ্রমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার আমদাবাদে। ছবি: এএফপি ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৭ ০৫:১০
Share: Save:

মোদী জমানায় অসহিষ্ণুতা আর হিন্দুত্ববাদীদের দাপটের বিরুদ্ধে গত কালই নানা প্রান্তে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে পথে নেমেছিলেন মানুষ। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে আজ মুখ খুলতে হল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। বললেন, ‘‘গো-রক্ষার নামে মানুষ খুন কিছুতেই বরদাস্ত করা যায় না। কেউই নিজের হাতে আইন তুলে নিতে পারে না।’’

সদ্য গত কালই এক অরাজনৈতিক প্রতিবাদের সাক্ষী হয়েছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন শহর। মোদী ক্ষমতায় আসার পরেই দাদরি থেকে আলওয়ার, হরিয়ানার বল্লভগড় থেকে আজ ঝাড়খণ্ডের রামগড়— গোরক্ষার নামে একের পর এক গণপিটুনি, এমনকী হত্যার ঘটনা ঘটে চলেছে। এর সিংহ ভাগই আবার হচ্ছে বিজেপি-শাসিত রাজ্যে। তারই প্রতিবাদে গত কাল ‘#নটইনমাইনেম’ নামে দেশ জুড়ে বিভিন্ন শহরে নাগরিক সমাবেশ হয়। যা দেখে কংগ্রেস আজ দাবি করে, এই প্রতিবাদই প্রমাণ করছে যে, এ দেশে এখনও ধর্মনিরপেক্ষতা রয়েছে।

জনতার এই চাপের মুখেই আজ মুখ খুলতে বাধ্য হলেন প্রধানমন্ত্রী, যিনি একের পর এক ঘটনার পরেও নীরব ছিলেন। মহাত্মা গাঁধীর স্মৃতি বিজড়িত গুজরাতের সাবরমতী আশ্রমে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে আমি বেদনা ও অসন্তোষ ব্যক্ত করতে চাই।’’ মোদীর কথায়— যে দেশে মহাত্মা গাঁধী অহিংসার শিক্ষা দিয়েছেন, সে দেশে গো-রক্ষার নামে মানুষকেই মেরে ফেলা হয়। এ কোন গো-ভক্তি, কোন গো-রক্ষা? এ ভাবে নিজের হাতে কেউই আইন তুলে নিতে পারে না।

এ কথা বলতে গিয়ে কিছুটা আবেগঘন হয়ে পড়েন মোদী। বলেন, গো-রক্ষা নিয়ে মহাত্মা গাঁধী, বিনোবা ভাবে যে পথ দেখিয়েছেন, সে পথেই চলতে হবে। গোরক্ষকদের একের পর এক হামলার পরেও প্রধানমন্ত্রীর কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। হরিয়ানার বল্লভগড়ে কিশোর জুনেইদকে পিটিয়ে মারার পরও মোদী নীরবই ছিলেন। তা নিয়ে সমালোচনাতেও সরব হয়েছিলেন বিরোধীরা। এ দিন তার একটি উপযুক্ত জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তিনি জানিয়েছেন, সাবরমতী আশ্রমের পবিত্র স্থল থেকেই তিনি এই বার্তা দিতে চেয়েছেন। সে জন্যই এত দিন কোনও মন্তব্য করেননি।

এর আগে উত্তরপ্রদেশে আকলাখের বাড়িতে হামলা ও তাঁকে পিটিয়ে মারার ঘটনার অনেক দিন পরে তিনি তার উল্লেখ করে বলেছিলেন, ‘‘এ ভাবে কেউই আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না।’’ তার পরেও এ ধরনের ঘটনা থামেনি। বৃহস্পতিবার মোদী বার্তা দেওয়ার ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই অবশ্য ঝাড়খণ্ডের রামগড়ে ফের আসগর আনসারি নামে এক জনকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। অভিযোগ একই— তিনি গো-মাংস নিয়ে যাচ্ছিলেন।

তাই বিরোধীরা মোদীর বার্তাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। রাহুল গাঁধী টুইট করে বলেন, ‘এত দেরি করে, তা-ও খুবই সামান্য। প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যের অর্থ কী?’ দলের নেতা গুলাম নবি আজাদের কথায়, মোদী ও বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা তিন বছরে কোনও পদক্ষেপ
করেননি। এক বছর পর আজ দু’লাইনের মন্তব্য অর্থহীন। সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরিও বলেন, কেন্দ্র আর বিজেপি শাসিত রাজ্যের মদত ছাড়া দলিত আর সংখ্যালঘুদের এ ভাবে নিশানা করা সম্ভব নয়। এক দিকে প্রধানমন্ত্রী বার্তা দিচ্ছেন, আবার দলের পক্ষে দুর্বৃত্তদের উস্কানি দেওয়াও চলছে।

পশ্চিমবঙ্গে গো-রক্ষার নামে সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন বর্ধমানের জনসভায় মমতা বলেন, ‘‘গো-রক্ষার নামে অশান্তি করতে দেব না। সতর্ক হতে হবে প্রশাসন ও পুলিশকে। বাইরে থেকে যাতে কেউ ঝামেলা না-পাকাতে পারে, সে জন্য সিভিক ভলান্টিয়ার ও গ্রিন পুলিশকে কাজে লাগাতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE