হাসপাতালে যাওয়ার পথেই প্রসব বেদনা শুরু সুদেবী পালের। ট্রেনের কামরাতেই যন্ত্রণায় ছটফট করতে শুরু করেন তিনি। সহযাত্রীরা কেউ সাহায্যে তো এগিয়ে এলেনই না। উল্টে কামরার যে অংশে এই ঘটনা ঘটছে, সেখান থেকে দূরে সরে গিয়ে উঁকিঝুকি দিয়ে দেখতে শুরু করলেন, কী ঘটছে।
রামলাল পালের তখন অসহায় দশা। মুম্বই শহরতলির কল্যাণ স্টেশন থেকে সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে নিয়ে লোকাল ট্রেনে উঠেছিলেন তিনি। যাচ্ছিলেন কেইএম হাসপাতাল। ট্রেনেই প্রসব বেদনা শুরু হবে, আঁচ করেননি দম্পতি। ভানদুপ স্টেশনে ঢোকার মুখে পুত্র সন্তানের জন্ম দেন সুদেবী। তখনও আশপাশের কেউ এগিয়ে আসেননি। হইচই শুনে ভিড়ের দিকে এগিয়ে যান ওই ট্রেনেই সফররত ইকবাল আনসারি। উর্দু দৈনিকের সাংবাদিক তিনি। আনসারি দেখেন, রক্তাপ্লুত সদ্যোজাতকে দু’হাতে ধরে রামলাল তখন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। সুদেবী আধো অচেতন। এক মুহূর্ত দেরি না না করে রেলওয়ের হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করেন আনসারি। ট্রেন ততক্ষণে ভানদুপ স্টেশন ছেড়ে এগোতে শুরু করেছে। রেলের তরফে জানানো হয়, পরবর্তী স্টেশনেই সাহায্যকারী দল তৈরি রাখা হচ্ছে। কিন্তু, গ্যালপিং ট্রেনটির থামার কথা নয় পরের স্টেশন কানজুরমার্গে। রেলের তরফে আনসারিকে বলা হয়, চেন টেনে ট্রেন থামাতে। কথা মতোই কাজ হয়। ট্রেন কানজুরমার্গে থামতেই স্টেশন মাস্টার সহায়তা দল নিয়ে পৌঁছে যান কামরায়। স্ট্রেচারে তুলে সদ্যোজাত এবং মাকে নিয়ে য়াওয়া হয় হাসপাতালে।
আনসারিকে সক্রিয় হতে দেখে কিন্তু কয়েকজন মহিলা সহযাত্রী শেষ মুহূর্তে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। সুদেবী এবং তাঁর পুত্র সন্তানকে সবাই মিলে ধরাধরি করে স্ট্রেচারে তুলে দেন। রাজাওয়াড়ি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে নাড়ি কাটা হয় সদ্যোজাতের। মা-ছেলে এখন সুস্থ। কী ভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবেন আনসারির প্রতি, বুঝে উঠতে পারছেন না রামলাল পাল। আনসারি অবশ্য মনে করছেন না যে খুব বড় কিছু করেছেন। বলছেন, সহ-নাগরিকের প্রতি কর্তব্য পালন করেছেন মাত্র। আর মুম্বই বলছে, দাদরি নয়, লোকাল ট্রেনের এই ঘটনাই আসল ভারতীয়ত্বের পরিচয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy