Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
National News

হাদিয়াকে বাবা-মা’র হেফাজত থেকে সরিয়ে আনল সুপ্রিম কোর্ট

প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ আজ-কালের মধ্যেই তামিলনাড়ুর সালেমে শিবরাজ হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে হাদিয়াকে পড়াশোনা শুরু করতে বলেছে।

সুপ্রিম কোর্টে হাদিয়া। মহিলা নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে।সোমবার।

সুপ্রিম কোর্টে হাদিয়া। মহিলা নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে।সোমবার।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৭ ১৯:৪২
Share: Save:

যাঁকে নিয়ে ‘লভ জিহাদ’ বিতর্কে তোলপাড় কেরল সহ গোটা দেশ, সেই হাদিয়াকে এ বার তাঁর মা, বাবার হেফাজত থেকে বের করে আনল সুপ্রিম কোর্ট। আবার পড়াশোনা শুরু করার অনুমতি দেওয়া হল হাদিয়াকে। আর কলেজের ডিনকে স্থানীয় অভিভাবকের দায়িত্ব দিল শীর্ষ আদালত।

প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ আজ-কালের মধ্যেই তামিলনাড়ুর সালেমে শিবরাজ হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে হাদিয়াকে পড়াশোনা শুরু করতে বলেছে। আর সেই কলেজে যাতে হাদিয়ার নিরাপত্তায় কোনও ব্যাঘাত না ঘটে, তার জন্য সেখানে সব সময়ের জন্য সাদা পোশাকে মহিলা পুলিশ অফিসার মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বেঞ্চ বলেছে, ‘‘এখন থেকে হাদিয়ার যাবতীয় দেখাশোনা করবেন তাঁর কলেজের ডিন। তিনিই হবেন হাদিয়ার স্থানীয় অভিভাবক।’’

মামলার পরবর্তী শুনানি জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে।

আরও পড়ুন- কট্টরদের বিক্ষোভে জ্বলছে পাকিস্তান, মিডিয়া ব্ল্যাক আউট​

আরও পড়ুন- চুম্বনের ভিডিও: মালিয়া ওবামার পাশে ইভাঙ্কা থেকে চেলসি​

হাদিয়ার মুখ থেকে সুপ্রিম কোর্ট সোমবার সরাসরি শুনতে চেয়েছিল, সত্যিই কি তাঁকে মুসলিম হতে কেউ বাধ্য করেননি? নিজের ইচ্ছাতেই মুসলিম হয়েছিলেন হাদিয়া? তাঁর ধর্মান্তকরণ কি ঘটেছিল তাঁর বিয়ের দু’বছর আগেই? তার জন্য গত শনিবার কোচি থেকে বিমানে কড়া পুলিশ পাহারায় হাদিয়াকে নিয়ে আসা হয় দিল্লিতে। সঙ্গে আসেন হাদিয়ার মা, বাবাও। হাদিয়া অবশ্য গত শনিবার দিল্লি রওনা হওয়ার আগে কোচি বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমি মুসলিম। নিজের ইচ্ছাতেই মুসলিম হয়েছি। কেউ আমাকে বাধ্য করেননি মুসলিম হতে। আমি স্বামীর কাছে ফিরে যেতে চাই।’’

এ দিন সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র, বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি এএম খানউইলকরকে নিয়ে গড়া তিন সদস্যের বেঞ্চের প্রশ্নের জবাবেও একই কথা বলেছেন হাদিয়া। বিকেল ৩টে বেজে ৪ মিনিটে শুনানি শুরু হওয়ার আগেই এজলাসে এসে গিয়েছিলেন হাদিয়ার স্বামী শাফিন জাহানের দুই আইনজীবী কপিল সিব্বল ও ইন্দিরা জয়সিংহ। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে হাজির ছিলেন অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল মনিন্দর সিংহ। ছিলেন হাদিয়ার বাবা অশোকনের আইনজীবী শ্যাম দিওয়ান এবং মাধবী দিওয়ানও।

তাঁর বক্তব্য জানতে বিকেল পৌনে ৩টেয় দিল্লির কেরল হাউস থেকে সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছন হাদিয়া। বিকেল ৩টে বেজে ১২ মিনিটে শীর্ষ আদালতের বেঞ্চ আরেক বার নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে নেন, হাদিয়ার বক্তব্য গোপন কক্ষে শোনা হবে নাকি প্রকাশ্য এজলাসেই। শেষমেশ ঠিক হয়, তা প্রকাশ্যেই শুনবেন বিচারপতিরা। বিকেল ৪টে বেজে ২১ মিনিটে সুপ্রিম কোর্টে ১০০ পাতার তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা বা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেটিং এজেন্সি (এনআইএ)। হাদিয়ার বিয়ের পর তাঁর বাবার অভিযোগ ছিল, জঙ্গিরাই চক্রান্ত করে তাঁর মেয়ে অখিলা অশোকনের ধর্মান্তকরণ করেছিল। তা নিয়েই তদন্ত করেছে এনআইএ। শীর্ষ আদালতে এ দিন জমা দেওয়া এনআইএ’র রিপোর্টে হাদিয়ার বয়ানও রয়েছে। সেখানেও হাদিয়া বলেছেন, নিজের ইচ্ছাতেই তিনি মুসলিম হয়েছেন। কেউ তাঁকে মুসলিম হতে বাধ্য করেননি।

বিকেল ৫টা বেজে ৮ মিনিটে বিচারপতি চন্দ্রচূড় প্রশ্ন করেন হাদিয়াকে, ‘‘তোমার স্বপ্ন কী?’’ জবাবে হাদিয়া বলেন, ‘‘আমি স্বাধীনতা চাই।’’ তার পর প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র হাদিয়াকে প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনি কি সরকারের টাকায় আপনার পড়াশোনা চালাতে চান?’’ হাদিয়া সঙ্গে সঙ্গে জবাব দেন, ‘‘আমার পড়াশোনার যাবতীয় খরচ আমার স্বামীই বহন করতে পারবেন। তার জন্য কেন আমি সরকারের টাকা নেব? আমি গত ১১ মাস ধরে কার্যত বন্দিদশা কাটাচ্ছি। চাই, আমি কলেজে গিয়ে আবার পড়াশোনা শুরু করলে স্বামীই সেখানে আমার অভিভাবক হোন।’’ আদালতে হাদিয়া এও জানান, বিশ্বাসের প্রতি সৎ থেকে তিনি স্বামীর কাছে ফিরে যেতে চান। বিকেল পাঁচটা বেজে চব্বিশ মিনিটে এর পরেই এ দিনের মতো শুনানি মুলতুবি হয়ে যায়।

গত শুক্রবার হাদিয়ার স্বামী শাফিন জাহান অভিযোগ করেন, হাদিয়াকে এখন চাপ দিয়ে হিন্দু বানানোর চেষ্টা হচ্ছে। গত বছর শাফিনকে বিয়ে করার সময় হাদিয়ার বয়স ছিল ২৪। নামও ছিল আকিলা অশোকন।

বিয়ের পরেই হাদিয়ার বাবা কেরল হাইকোর্টে একটি মামলা করেন। হাদিয়ার বাবার আর্জির ভিত্তিতে কেরল হাইকোর্ট হাদিয়ার বিয়ে বাতিলের নির্দেশ দেয়। যাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যান হাদিয়ার স্বামী শাফিন। শীর্ষ আদালতে হাদিয়ার স্বামী জানান, বিয়ের দু’বছর আগেই স্বেচ্ছায় মুসলিম হয়েছিলেন হাদিয়া। তাঁকে মুসলিম হতে কেউ বাধ্য করেননি। হাদিয়ার বাবা চেয়েছিলেন, গোপন কক্ষে হাদিয়ার বক্তব্য শুনুক শীর্ষ আদালত। সেই আর্জি আগে খারিজ করে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE