ফাইল চিত্র।
ফর্মুলা ‘একের বিরুদ্ধে এক’। দেশে এখন চলছে ‘ঔদ্ধত্যের সরকার’, বিজেপিকে ‘যেতেই হবে’। সনিয়া গাঁধীর বাড়ি থেকে বেরিয়ে এ কথাই বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থী দেওয়া গেলে, বা নিদেনপক্ষে সেই ফর্মুলার কাছাকাছি পৌঁছনো গেলে ফল কী হতে পারে, গোরক্ষপুর এবং ফুলপুরের উপনির্বাচনেই তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। উত্তরপ্রদেশের ওই দুই লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে কংগ্রেস একের বিরুদ্ধে এক ফর্মুলায় রাজি হয়নি। আলাদা প্রার্থী দিয়েছিল রাহুল গাঁধীর দল। কিন্তু সে রাজ্যের দুই প্রধান বিরোধী শক্তি সমাজবাদী পার্টি (সপা) এবং বহুজন সমাজ পার্টি (বসপা) হাত মিলিয়েছিল। তাতেই উল্টে গিয়েছে ফল। দুই আসনেই হারতে হয়েছে বিজেপিকে।
উত্তরপ্রদেশের উপনির্বাচনের ফল দেখার পরেই বিরোধী শিবির থেকে ‘একের বিরুদ্ধে এক’ ফর্মুলার দাবি উঠতে শুরু করেছে। গোটা দেশে সব অ-বিজেপি দলকে এক জায়গায় আনার চেষ্টা শুরু হয়েছে। অযথা প্রার্থী দিয়ে শক্তিক্ষয় নয়, যেখানে যে অ-বিজেপি দল শক্তিশালী, সেখানে বিজেপির বিরুদ্ধে সেই দলই লড়বে, বাকিরা প্রার্থী দেবে না— এমন বন্দোবস্ত নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো শরদ পওয়ারও সক্রিয় হয়েছেন বিরোধী শিবিরে জোট গড়ে তুলতে। কিন্তু পওয়ার চাইছেন কংগ্রেসকে নেতৃত্বে রেখে জোট গ়ড়তে। মঙ্গলবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকেও সে প্রস্তাবই দেন পওয়ার। কিন্তু মমতা সে প্রস্তাব নাকচ করেছেন বলেই খবর। তৃণমূলনেত্রী চাইছেন, কংগ্রেসকে বাদ রেখে জোট গঠন করুক অন্য সব বিরোধী দল। কংগ্রেস সেই জোটের পাশে থাকুক।
আরও পড়ুন: লক্ষ্য ঐক্য, আজ সন্ধ্যায় মুখোমুখি সনিয়া-মমতা
কংগ্রেসের নেতৃত্বে জোট হলে স্বাভাবিক ভাবেই সে জোটের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা হবেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। কিন্তু রাহুলের সঙ্গে মমতার সমীকরণ খুব মধুর, এমনটা কেউই দাবি করেন না। সেই কারণেই রাহুলের নেতৃত্বে জোট গড়ায় মমতার আপত্তি রয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন।
রাহুলের সঙ্গে সম্পর্ক মসৃণ না হলেও, সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কের রসায়ন কিন্তু বরাবরই মধুর। রাজীব গাঁধীর প্রিয়পাত্রী ছিলেন মমতা। সেই থেকেই সনিয়ারও কাছের। রাজীবের মৃত্যু বা মমতার কংগ্রেস-ত্যাগ, অনেক কিছুই ঘটে গিয়েছে তার পরে, কিন্তু সনিয়া-মমতার সম্পর্কের রসায়ন তাতে খুব একটা বদলায়নি। দিল্লিতে গেলেই মমতা সাধারণত সনিয়ার সঙ্গে এক বার দেখা করে আসেন। এ বারও তার ব্যতিক্রম হল না। মঙ্গলবার সংসদ ভবনে দু’জনে একই সময়ে হাজির থাকলেও দেখা হয়নি। কিন্তু রাতেই দুই নেত্রীর মধ্যে যোগাযোগ হয় এবং স্থির হয় আজ মমতা ১০ জনপথে যাবেন এবং সনিয়ার সঙ্গে বৈঠক করবেন।
আরও পড়ুন: রাহুলে না, দিদি সক্রিয় বিকল্পেই
বুধবার সন্ধ্যায় ১০ জনপথের বৈঠকের দিকে নজর ছিল গোটা দেশেরই। বৈঠক শেষে সনিয়ার বাসভবন থেকে বেরিয়ে মমতা বলেন, ‘‘সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে রাজনৈতিক আলোচনাই হয়েছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘দেশে এখন ঔদ্ধত্যের সরকার চলছে।...বিজেপিকে যেতেই হবে।’’ ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে কী ভাবে বিজেপি-কে হারানো যায়, তা নিয়েই সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে বলে মমতা জানান। তিনি বলেন,‘‘আমরা চাই একের বিরুদ্ধে এক লড়াই হোক। যে বিরোধী দল যেখানে শক্তিশালী, সেখানে বিজেপির বিরুদ্ধে সেই দলই প্রার্থী দিক।’’
কংগ্রেসের নেতৃত্বে জোটে রাজি হন বা না হন, কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে যে তিনি কিছু ভাবছেন না, তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিয়েছেন। একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থী দেওয়ার যে বন্দোবস্ত, কংগ্রেস তাতে সামিল হোক, সনিয়াকে মমতা এমন প্রস্তাবই দিয়ে এসেছেন। মমতার প্রস্তাবে সনিয়ার সম্মতি রয়েছে কি না, সে বিষয়ে তৃণমূলনেত্রী মুখ খোলেননি। তবে তিনি বলেছেন, ‘‘আমি চাই কর্নাটকে কংগ্রেসই জিতুক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy