Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বৈদ্যনাথদের আশার আলো কাশ্মীরের বাঙালিনি

ঘোমটা দেওয়া মহিলার ছবিটা সংবাদপত্রে দেখেই চমকে উঠেছিলেন উল্টোডাঙার বৈদ্যনাথ কুণ্ডু। এর সঙ্গে যে অনেকটাই মিল রয়েছে তাঁর হারিয়ে যাওয়া স্ত্রী গীতার। সঙ্গে সঙ্গে বৈদ্যনাথ ছুটলেন লালবাজারে।

সেই মহিলা। — নিজস্ব চিত্র

সেই মহিলা। — নিজস্ব চিত্র

সাবির ইবন ইউসুফ ও শিবাজী দে সরকার
শ্রীনগর ও কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:১৯
Share: Save:

ঘোমটা দেওয়া মহিলার ছবিটা সংবাদপত্রে দেখেই চমকে উঠেছিলেন উল্টোডাঙার বৈদ্যনাথ কুণ্ডু। এর সঙ্গে যে অনেকটাই মিল রয়েছে তাঁর হারিয়ে যাওয়া স্ত্রী গীতার। সঙ্গে সঙ্গে বৈদ্যনাথ ছুটলেন লালবাজারে।

গত বছরের অক্টোবরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফেরেননি হাবড়ার বাসিন্দা কানন বৈরাগী। আনন্দবাজারে ঘোমটা দেওয়া ওই মহিলার ছবি দেখেই সিআইডির গোয়েন্দাদের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কাননের পরিবারও।

তবে যাঁর ছবি দেখে আশার আলো দেখছেন বৈদ্যনাথ এবং কাননের আপনজনরা, সেই মহিলার ঠিকানা এখন শ্রীনগরের একটি মানসিক হাসপাতাল। গত বছরের অক্টোবরে বছর পঞ্চান্নর মানসিক প্রতিবন্ধী ওই মহিলা উরি এলাকার নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন পাকিস্তানে। পাক সেনা আটক করে তাঁকে। অবশেষে গত ১১ জানুয়ারি সেই মহিলাকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয় পাক সেনা। উরির আমন সেতু দিয়ে দেশে ফেরেন ওই মহিলা। জানা যায় তিনি বাঙালি। কিন্তু নাম-ধাম কিছুই জানাতে পারেননি তিনি। সেই থেকে তিনি শ্রীনগরের মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিশ জানিয়েছে, ওই মহিলা বাঙালি, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের কোথায় থাকতেন তা এখনও তিনি মনে করতে পারছেন না। মানসিক হাসপাতালের এক কর্তাও আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘ওই মহিলার চিকিৎসা চলছে। কিন্তু এখনও তাঁর কিছু মনে পড়েনি।’’ তবে চিকিৎসকরা আশাবাদী। এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘কোনও মারাত্মক দুর্ঘটনা বা মানসিক চাপের ফলে অনেকে তাঁদের স্মৃতি হারিয়ে ফেলেন। তবে তাঁদের স্মৃতি ফিরে এসেছে, এমন নজির অতীতে আছে।’’ স্মৃতি ফিরে না পেলেও ওই মহিলার ব্যবহারে বেশ কিছু পরিবর্তন হয়েছে। হাসপাতালের অন্য রোগীদের সঙ্গে তিনি মেলামেশাও করছেন।

আরও পড়ুন: ছেলেকে নিয়ে মেট্রোর লাইনে ঝাঁপ, মৃত্যু মায়ের

লালবাজার সূত্রের খবর, বৈদ্যনাথের স্ত্রী গীতা ২০১৩ সালের জুন মাসে তেলেঙ্গাবাগানের বাড়ি থেকে ভোরবেলা নিখোঁজ হয়ে যান। সিআইডি-লালবাজার করেও বছর ছেষট্টির গীতার কোনও খোঁজ মেলেনি। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, শ্রীনগরের মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই মহিলাই গীতা কি না, তা জানার জন্য জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। ওই মহিলা হাবড়ার কানন কি না, তা জানার জন্যও শ্রীনগরের ওই হাসপাতালে যোগাযোগ করেছেন তদন্তকারীরা।

এর আগে সংবাদমাধ্যমে ওই ছবি দেখে তাঁর সঙ্গে নিখোঁজ মায়ের মিল খুঁজে পেয়েছিলেন কলকাতা পুলিশের একটি মহিলা থানার গাড়ির চালক সঞ্জয় মাঝি। গত বছর দুর্গাপুজোর ঠিক পরেই বর্ধমানের কুলটিতে মন্দিরে পুজো দিতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান তাঁর মা পূর্ণিমা মাঝি। তবে প্রাথমিক ভাবে তিনি ওই ছবির সঙ্গে মায়ের মুখের মিল পেলেও পরে বুঝতে পারেন তাঁর ধারণা ঠিক নয়।

তাঁদের ধারণা ভুল হবে না, এই আশাতেই এখন বুক বাঁধছেন বৈদ্যনাথ। কাননের পরিবারও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Missing Man kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE