Advertisement
E-Paper

‘আমি বেঁচে’, চার বছর ধরে ‘জীবিত’ প্রমাণের মরিয়া লড়াই সন্তোষের

পুলিশের আঙুল কামড়ে তিহাড়ে কাটিয়েছেন দিন পনেরো। মরেই যদি গিয়ে থাকেন, তা হলে পুলিশকে কামড়ালেন কী করে? সুষমা স্বরাজকে কিডনি দিতে ছুটে গিয়েছিলেন এইমস হাসপাতালে। মরা লোকের কিডনি হয় কি?

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৪৮
প্ল্যাকার্ড হাতে সন্তোষ কুমার সিংহ। —নিজস্ব চিত্র।

প্ল্যাকার্ড হাতে সন্তোষ কুমার সিংহ। —নিজস্ব চিত্র।

পুলিশের আঙুল কামড়ে তিহাড়ে কাটিয়েছেন দিন পনেরো। মরেই যদি গিয়ে থাকেন, তা হলে পুলিশকে কামড়ালেন কী করে?

সুষমা স্বরাজকে কিডনি দিতে ছুটে গিয়েছিলেন এইমস হাসপাতালে। মরা লোকের কিডনি হয় কি?

চার বছর ধরে এ ভাবেই নিজেকে ‘জীবিত’ প্রমাণ করার মরিয়া লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন সন্তোষ কুমার সিংহ। নতুন বছরে নরেন্দ্র মোদীর বারাণসী থেকে বিধানসভা ভোট লড়তে চান। ভোটে লড়ে বলতে চান, তিনি ‘মৃত’ নন, জীবিত।

বাড়ি বারাণসীর ছিতাওনি গ্রামের চৌবেপুর থানায়। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের রাজস্ব বিভাগের খাতায় মানুষটি ‘মৃত’। চোদ্দো বছর আগে ‘আঁচ’ সিনেমার শ্যুটিং করতে ছিতাওনি এসেছিলেন নানা পাটেকর। সন্তোষের হাতের
রান্না খেয়ে এতই মুগ্ধ হন যে তাঁকে মুম্বই নিয়ে গিয়ে নিজের বাড়িতে রাখেন। দশ বছর সেখানেই ছিলেন সন্তোষ। উত্তরপ্রদেশের রাজপুত ছেলেটি মুম্বইতেই বিয়ে করেন এক দলিত মেয়েকে।

তার পরই জীবনে এক নতুন মোড়। দলিত মেয়েকে বিয়ে করার ‘অপরাধে’ উত্তরপ্রদেশে তাঁকে সামাজিক ভাবে বহিষ্কার করে গ্রামবাসীরা। কাকার ছেলেরা জেলা প্রশাসনকে জানিয়ে দেন, মুম্বই ট্রেন বিস্ফোরণে মারা গিয়েছেন সন্তোষ। তিনি ‘মৃত’। ঘটা করে গ্রামে শ্রাদ্ধও হয়। বাবার থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সাড়ে ১২ একর জমিও দখল করেন পরিবারের লোকেরা। মুম্বইয়ে সন্তোষের কাছে যখন এ খবর পৌঁছায়, তখন তিনি পাকাপাকি ভাবে ‘মৃত’।

তার পর থেকে শুধু বেঁচে থাকার লড়াই নয়, বেঁচে ওঠারও লড়াই চালাচ্ছেন সন্তোষ। দিল্লির যন্তর-মন্তরে বসে ধর্না দিচ্ছেন বছর চারেক হয়ে গেল। প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন, মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের কাছে দরবার করেছেন, পুলিশকে কামড়েছেন, সুষমাকে কিডনি দিতে চেয়েছেন— তাও ‘বেঁচে’ ওঠেননি এখনও। পরিচালক সতীশ কৌশিক একটি ছবিও বানাতে চেয়েছিলেন সন্তোষকে নিয়ে। নানা পাটেকরের দৌলতে ফোন এসেছিল রাখি সাওয়ান্তের কাছ থেকেও। তাঁর অনুষ্ঠান ‘রাখি ইন খাকি’-তে সন্তোষকে নিয়ে গিয়েছিলেন। এক বার ‘বিগ বস’-এ যাওয়ার কথাও মনে হয়েছিল, যাতে লোকে দেখে কঙ্কাল নয়, হেঁটে বেড়াচ্ছেন পুরোদস্তুর জীবন্ত লোক। কিন্তু বারণ করেন নানা। আপাতত ‘ম্যায় জিন্দা হুঁ’- প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে শীতের দিল্লিতে খোলা রাস্তায় বেঁচে ওঠার স্বপ্ন দেখে যাচ্ছেন সন্তোষ। বললেন, ‘‘বেঁচেও মরে থাকাটা যে কী যন্ত্রণার, সেটি অন্য কারও পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। সামনের গুরুদ্বারে দু’বেলা দু’মুঠো ভাত জোটে। তাই নিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছি পাকস্থলীকে। কী ভাবে সরকারের টনক নড়বে জানি না।’’

শুধু উত্তরপ্রদেশেই এমন ‘মৃত’র সংখ্যা কয়েক হাজার। যা নিয়ে একটি সংগঠনও তৈরি হয়ে গিয়েছে সেখানে। নাম ‘উত্তরপ্রদেশ মৃতক সঙ্ঘ’। সন্তোষের মতো খাতায়-কলমে ‘মৃত’ লোকেরাই তার সদস্য। এই সংগঠনের হোতা লালবিহারী। প্রশাসনকে ঘুষ দিয়ে তাঁর কাকা ১৯৭৬ সালে লালবিহারীকে ‘মৃত’ ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। তার পর থেকে ১৮ বছর লড়াই করে তিনি ‘জীবিত’ হয়েছেন। নিজেকে ‘জীবিত’ প্রমাণের জন্য রাজীব গাঁধী, বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহের বিরুদ্ধে ভোটে লড়েছেন। আইনি লড়াই লড়েছেন। নিজের নাম বদলে রেখেছিলেন ‘লালবিহারী মৃতক’। সেই রকম খাতায় কলমে আরও যাঁরা এখনও ‘মৃতক’, তাঁদের জন্য লড়াই জারি রেখেছেন তিনি। উত্তরপ্রদেশ সরকার কিছু করবে না? প্রশাসনের এক কর্তার আশ্বাস, এমন ভূরি ভূরি অভিযোগ সরকারের কাছে আছে। আইনি পদ্ধতিতেই তার সমাধান হবে।

কবে হবে? চোদ্দো বছর তো কেটে গেল। লালবিহারীর পরামর্শে এখন বারাণসী থেকে ভোটে লড়তে চাইছেন সন্তোষ। নতুন বছরে পুনর্জন্ম হবে কি?

Packard man
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy