প্রাক-স্বাধীনতা দিবসে মানিক সরকারের ভাষণ দূরদর্শনে এ বছর সম্প্রচারিত না হওয়ায় প্রবল তোপ দেগেছে সিপিএম। ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ত্রিপুরার সরকারও। ছবি: পিটিআই।
বহু বছরের প্রথা ভেঙে আগরতলা দূরদর্শন কেন্দ্র আটকে দিয়েছে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর প্রাক-স্বাধীনতা দিবসের ভাষণ। সেই ঘটনাকে ঘিরে ত্রিপুরার রাজনীতিতে তোলপাড় তো চলছেই। বিতর্ক তীব্র জাতীয় রাজনীতিতেও। সে বিতর্কে বুধবার মুখ খুলল দূরদর্শন কর্তৃপক্ষ। মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের ভাষণের সম্প্রচার আটকে দেওয়া হয়েছে বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা ভিত্তিহীন বলে দূরদর্শনের তরফে এ দিন দাবি করা হয়েছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের দফতরে চিঠি পাঠিয়ে দূরদর্শনের তরফে বলা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী জনসভায় যে ভাষণ দিয়েছেন, তা বিশদে সম্প্রচারিত হয়েছে। কিন্তু যে ভাষণ শুধু দূরদর্শনের মাধ্যমে সম্প্রচারিত হওয়ার কথা ছিল, তার বিষয়বস্তু আপত্তিকর ছিল বলে কর্তৃপক্ষ ইঙ্গিত দিয়েছেন।
আগরতলা দূরদর্শন কেন্দ্রের কর্তা ইউ কে সাহুর সই করা চিঠি বুধবার পৌঁছেছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের দফতরে। সেই চিঠিতে সাহু লিখেছেন, ‘‘মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী জনসভায় যে ভাষণ দিয়েছেন, আগরতলা দূরদর্শন তা বিশদে সম্প্রচার করেছে...।’’ রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের যে খতিয়ান মুখ্যমন্ত্রী তুলে ধরেছেন, তাও সবিস্তার তুলে ধরা হয়েছে বলে দূরদর্শনের তরফে জানানো হয়েছে। চিঠিতে ইউ কে সাহু আরও জানিয়েছেন, ১৫ অগস্ট, ২০১৭ তারিখে আগরতলা দূরদর্শন মুখ্যমন্ত্রীর কর্মসূচি সংক্রান্ত প্রতিবেদনের জন্য ২৯ মিনিট ৪৫ সেকেন্ড সময় দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ১২ মিনিট ধরে মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ শোনানো হয়েছে। এই তথ্য তুলে ধরে দূরদর্শনের তরফে জানানো হয়েছে, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে স্বাধীনতা দিবসে ‘ব্ল্যাক আউট’ করে দেওয়া হয়েছে বলে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
দূরদর্শনের তরফ থেকে বুধবার এই চিঠি পাঠানো হয়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে। নিজস্ব চিত্র।
প্রতি বছরই স্বাধীনতা দিবসের আগের সন্ধ্যায় আগরতলা দূরদর্শন কেন্দ্র থেকে ত্রিপুরাবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। এ বারও সেই ভাষণের ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা সম্প্রচারিত হয়নি। আগরতলা দূরদর্শন কেন্দ্রের তরফ থেকে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিবকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণের বিষয়বস্তু উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ গভীর ভাবে খতিয়ে দেখেছেন। স্বাধীনতা দিবসের ‘পবিত্রতা’ এবং সরকারি সম্প্রচারকের সুনির্দিষ্ট দায়বদ্ধতার কথা মাথায় রেখে ওই বিষয়বস্তু সম্বলিত ভাষণ সম্প্রচার করা সম্ভব নয়। দূরদর্শনের তরফে পাঠানো সেই চিঠিতে আরও জানানো হয়, মুখ্যমন্ত্রী যদি নিজের ভাষণ পরিমার্জন করতে চান, তা হলে দূরদর্শন ফের তার ব্যবস্থা করতে প্রস্তুত।
আরও পড়ুন: লালকেল্লার মঞ্চ থেকে সকলকে নিয়ে চলার বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী
মানিক সরকার অবশ্য ভাষণ পরিমার্জনের পথে হাঁটেননি। ত্রিপুরা সরকারের পক্ষ থেকে দূরদর্শনের এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে চিঠি পাঠানো হয়। সিপিএম পলিটব্যুরোর তরফ থেকে দূরদর্শন কর্তৃপক্ষকে তথা কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র আক্রমণ করা হয়। দেশে অঘোষিত জরুরি অবস্থার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে সিপিএমের তরফে মন্তব্য করা হয়। আজ, বুধবার ত্রিপুরা বামফ্রন্টও মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ সম্প্রচার আটকে দেওয়ার তীব্র নিন্দা করে।
আরও পড়ুন: মোদী-যোগীর মুখে রামের সঙ্গে গাঁধীও
১৪ অগস্ট দূরদর্শনের তরফ থেকে এই চিঠি পাঠানো হয়েছিল ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিবের কাছে। —নিজস্ব চিত্র।
বিজেপি অবশ্য দূরদর্শন কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তে কোনও গলদ দেখছে না। ত্রিপুরা রাজ্য বিজেপির অন্যতম মুখপাত্র মৃণালকান্তি দেব বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর মতো সাংবিধানিক পদে থাকলে কখন, কোথায় কী ভাবে কথা বলতে হয়, তা মানিক সরকার জানেন না।’’ মানিক সরকার যে ভাষণ দূরদর্শনের মাধ্যমে সম্প্রচার করতে চেয়েছিলেন, তা আদ্যন্ত রাজনৈতিক এবং স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে সাংবিধানিক পদে থাকা কোনও ব্যক্তি ওই রকম ভাষণ দিতেই পারেন না বলে বিজেপির দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy