পুরীর সৈকতে বালি ভাস্কর্যে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন প্রয়াত ল্যান্সনায়ক হনুমন্থাপ্পা কোপ্পড়কে। —নিজস্ব চিত্র।
লড়াই শেষ!
প্রথমে পাঁচ দিন ৩৫ ফুট বরফের নীচে। তারপর তিন দিন দিল্লির সেনা হাসপাতাল।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে শেষ হয়ে গেল ল্যান্সনায়েক হনুমন্থাপ্পা কোপ্পাড়ের লড়াই।
মঙ্গলবার সকালে সিয়াচেন থেকে দিল্লির হাসপাতালে নিয়ে আসার পর থেকেই ক্রমশ শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। কোমায় চলে গিয়েছিলেন ৩৩ বছরের সাহসী জওয়ান। চিকিৎসকদের সবরকম চেষ্টা সত্বেও বৃহস্পতিবার সকালে তিনি আরও গভীর কোমায় চলে যান। তারপরেও চিকিৎসকরা শরীরে রক্ত চলাচল চালু রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না।
সেনাপ্রধান জেনারেল দলবীর সিংহ সুহাগ বলেন, ‘‘হনুমন্থাপ্পার ভিতরের ফৌজি সেনাবাহিনীর ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।’’
বৃহস্পতিবার সকালের মেডিক্যাল বুলেটিনে জানানো হয়, ল্যান্সনায়েকের শরীরের অবস্থা মোটেই ভাল নয়। শরীরের একাধিক অঙ্গ কাজ করছে না। সেই পরিস্থিতি আরও জটিল আকার নিয়েছে। শরীরের সব অংশে যথেষ্ট পরিমাণে রক্ত চলাচল করছে না। সর্বাধিক মাত্রায় ওষুধ করেও সেই হাল শোধরাচ্ছে না। কাজ করছে না কিডনিও। এমনিতেই দু’টি ফুসফুসে নিউমোনিয়া বাসা বেঁধেছিল। সেই সংক্রমণও ছড়িয়ে পড়ে। শরীরের রক্ত জমাট বেঁধে যাচ্ছিল। শরীরে রক্তের উপাদান দিয়েও লাভ হয়নি। ভেন্টিলেশনের মাধ্যমে, কিডনির ডায়ালিসিস করেও হনুমন্থাপ্পা গভীর কোমায় চলে যান।
সেনা হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, বরফের নীচে পাঁচদিন চাপা পড়ে থাকার ফলে জওয়ানের শরীরে কোনও অক্সিজেন বা খাবার যায়নি। তার ফলে শরীরের বিভিন্ন কোষে, বিশেষ করে মস্তিষ্কের কোষে অ্যাসিড জমা হতে থাকে। তারপর সেই অ্যাসিডই ক্রমশ কিডনি, লিভারে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। সেনা হাসপাতালে নিয়ে আসার পর ল্যান্সনায়েকের শরীরে গ্লুকোজ পাঠানো হয়। বাইরে থেকে ওষুধের মাধ্যমে রক্তচাপ বাড়ানোর চেষ্টা হয়। যন্ত্রের মাধ্যমে কিডনির কাজ চালানোর চেষ্টা হয়। কিন্তু লাভ হয়নি। যে সব কোষের মধ্যে বিষাক্ত অ্যাসিড জমা হয়ে গিয়েছিলেন, সেই কোষগুলি অ্যাসিড বাইরে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করলেও সফল হয়নি। উল্টে সেই বিষ আরও বেশি করে কিডনি, লিভার, মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে। নিউমোনিয়ার প্রকোপে দু’টি ফুসফুসও একেবারে নষ্ট হয়ে যায়।
এই অসম লড়াইয়ে আর এঁটে উঠতে পারেনি ল্যান্সনায়েক হনুমন্থাপ্পার শরীর। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শোকবার্তায় বলেন, ‘‘ল্যান্সনায়েক হনুমন্থাপ্পার ভিতরে যে লড়াকু জওয়ান ছিল, সে অমর থাকবে। আমরা গর্বিত যে তাঁর মতো শহিদ ভারতের সেবা করে।’’
বুধবার সকালেই ল্যান্সনায়েকের স্ত্রী, মা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা দিল্লিতে চলে এসেছিলেন। চলছিল প্রার্থনা। বিকেলে হাসপাতাল থেকে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় দিল্লির ব্রার স্কোয়ারে। যেখানে সেনা জওয়ানদের শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। সেখানেই ল্যান্সনায়েককে শেষ শ্রদ্ধা জানান প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকর ও সামরিক বাহিনীর প্রধান ও উচ্চপদস্থ কর্তারা।
ব্রার স্কোয়ারে কফিনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঠায় বসেছিলেন হনুমন্থাপ্পার স্ত্রী মহাদেবী। প্রথমে স্বামীর মৃত্যুসংবাদ, দিন চারেকের মধ্যে আবার তাঁর বেঁচে থাকার খবর এবং চোখের দেখা দেখতে বুধবার সকালে দিল্লিতে আসা। তারপর থেকে দেড় বছরের কন্যাকে নিয়ে হাসপাতালেই দিনের বেশিটা সময় কাটিয়েছিলেন মহাদেবী। একটাই প্রার্থনা ছিল। প্রায় পুনর্জন্মের পর ফিরে আসা স্বামীকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন কর্ণাটকের গ্রামে।
‘পুনর্জন্ম’ হয়েও হল না। জীবিত অবস্থায় নয় কর্ণাটকের গ্রামে হনুমন্থাপ্পার কফিন বন্দি দেহই ফিরছে।
আরও পড়ুন:
শত্রুর গোলা নয়, ভয়ঙ্কর প্রকৃতিই মৃত্যু নিয়ে অপেক্ষায় থাকে সিয়াচেনে
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy