নমোর প্রণাম। প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালামকে শ্রদ্ধা প্রধানমন্ত্রীর। মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
দেশ জুড়ে দেখা দিয়েছে কালাম-আবেগ। আর প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির প্রতি এই আবেগকে হাতিয়ার করে ভাবমূর্তি কিছুটা উদ্ধারের চেষ্টায় নেমেছে বিজেপি।
একের পর এক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে আপাতত জেরবার নরেন্দ্র মোদী সরকার। বিরোধীরা অচল করে রেখেছিলেন সংসদও। গতকাল গুরদাসপুরে জঙ্গি হানার পরে জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করে ২-৩ দিন সংসদ চালানোর কথা ভেবেছিল সরকার। কিন্তু তার পরে গত কাল রাতে এ পি জে আব্দুল কালামের মৃত্যুর পর থেকে ফের টের পাওয়া যাচ্ছে, তিনি এখনও কতটা জনপ্রিয় ছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় চর্চা থেকে দিল্লিতে কালামের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ভিড়-সবটাকেই কাজে লাগাতে মরিয়া বিজেপি।
কী ভাবে?
বিজেপি নেতারা আজ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘মানুষের রাষ্ট্রপতি’ কালামকে রাইসিনা হিলসে পাঠানোর কারিগর ছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। গত রাষ্ট্রপতি ভোটেও তাঁকে প্রার্থী করার কথা ভেবেছিল বিজেপি। কিন্তু জেতার নিশ্চয়তা না থাকায় কালাম নিজেই সরে দাঁড়ান। প্রয়াত রাষ্ট্রপতিকে শ্রদ্ধা জানানোর ভিড়ের সিংহভাগই যুব সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি। যাঁদের কাছে টানতে আগ্রহী মোদীও। তাই কালামের বিজেপি-ঘনিষ্ঠতা প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লেগেছে সরকার।
সংসদ দু’দিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আজ বিমানবন্দরে রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীও চলে গিয়েছেন প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির শবদেহ আনতে। এমনকী, কালামের জন্মভিটেতে শেষকৃত্যের যাবতীয় আয়োজনও হচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের তত্ত্বাবধানে।
সাধারণত সংসদ চলার সময় বন্ধ সভাঘরে প্রতি মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহেরা দলের সব সাংসদের সঙ্গে বৈঠকে বসে রণকৌশল স্থির করেন। কিন্তু আজ ওই বৈঠকের সময়ে দরজা খুলে দেওয়া হয়েছিল। কারণ, কালামের প্রতি ‘তর্পণকে’ সকলের চোখের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছে বিজেপি। ওই বৈঠকের পরেই কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি ‘জাতীয় আবিষ্কার অভিযান’ প্রকল্পটি কালামের নামে করার কথাও ঘোষণা করে দেন। দিল্লির ১০ নম্বর রাজাজি মার্গে কালামের বাসভবনে শেষ শ্রদ্ধার তদারকিতে ছিলেন বিজেপি সাংসদ বিজয় গয়াল। সব দলের নেতাদেরই তিনি আপ্যায়ন করেছেন।
কালামের বিজেপি-ঘনিষ্ঠতা প্রমাণের পাশাপাশি এই কৌশলে অন্য একটি লাভ হতে পারে বলেও মনে করছেন বিজেপি নেতারা। সাত দিন রাষ্ট্রীয় শোক চলবে। বিজেপি নেতাদের আশা, এই সাত দিনে কংগ্রেস সংসদে হইচই করলে পাল্টা বলা যাবে যে কালামের প্রতি তারা শ্রদ্ধাশীল নয়। বিজেপির এই ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছেন বিজয় গয়ালই। তাঁর কথায়, ‘‘এমনিতেই এক সপ্তাহ ধরে জাতীয় শোক চলবে। তার মধ্যেও কি বিরোধীরা আগের মতো রুদ্রমূর্তি ধারণ করে সংসদ অচল রাখবেন?’’
কংগ্রেস অবশ্য বুঝিয়ে দিয়েছে, ভবি ভোলবার নয়। দলের নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেন, ‘গত কাল যখন সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটে, তখনও আমরা এই নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছি। কিন্তু সন্ত্রাসের পর্ব মিটলেই আমরা আবার দুর্নীতি নিয়ে সোচ্চার হব।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এখন দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির প্রয়াণে আমরাও শোকাহত। কিন্তু সংসদ যখন শুরু হবে, তখন আমরা কেন সরকারকে ছেড়ে দেব?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy