জো জিতা ওহি সিকন্দর!
সকাল থেকে অনেক নাটক, অনেক টানাপড়েন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চিত্রটা বেলা ১১টা পর্যন্ত যা দাঁড়িয়েছে তাতে নীতীশ কুমার আর এক বার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন। যে হেতু এ বার নির্বাচনী লড়াই মোদী বনাম নীতীশ, কাজেই এই নির্বাচনী বিপর্যয়ের দায়ও অনেকটা নিতে হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। বিহারের বিজলি-পানি-সড়ক, বিহারের উন্নয়ন— এই মডেল বিক্রি করার চেষ্টা করেছিলেন মোদী। পাশাপাশি, মেরুকরণের রাজনীতির মাধ্যমে, জাতপাতের বিহারের রাজনীতিকে হারাতে চেয়েছিলেন অমিত শাহ। এই ভোটের ফলাফলের পর, বিজেপি নেতারাই বলছেন, গত দেড় বছর নরেন্দ্র মোদীর সরকারের বিরুদ্ধে গোটা দেশ জুড়ে যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে, তার প্রতিফলনও কিন্তু বিহার নির্বাচনে হয়েছে, সে কথা স্পষ্ট।
এ বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ভাবতে হবে যে, আগামী দিনে অসম, পশ্চিমবঙ্গ প্রভৃতি রাজ্যে নির্বাচন পরিচালনা করতে গেলে এবং গোটা দেশের মানুষের মধ্যে মোদী ম্যাজিক অটুট রাখতে গেলে তাঁকে অনেক কিছু করতে হবে। আর সেই প্রথম কাজটা হল, বক্তৃতা নয়, হলোগ্রাম আর সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে শরীরের ভাষা নয়। আসল কথা হল, দেশের অর্থনীতি এবং সামাজিক ঐক্য এবং শান্তির আবহ তৈরি করা। গরু-রাজনীতি থেকে দেশকে আর্থিক সংস্কারের অভিমুখে নিয়ে যেতে হবে।
আজ থেকে দেড় বছর আগে যখন নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় এসেছিলেন, তখন মানুষের প্রত্যাশা ছিল গগনচুম্বী। মানুষ ভাবতে শুরু করেছিল যে, মনমোহন সিংহের সরকারের ১০ বছরের নীতিপঙ্গুত্ব, দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফীতির বদলে এ বার মোদী নিয়ে আসবেন ‘অচ্ছে দিন’। কিন্তু ক্রমশ দেখা গেল, আর্থিক সংস্কারের কড়া দাওয়াই নেওয়া তো দূরে থাক, অরুণ জেটলির বাজেট ইউপিএ সরকারের চেয়েও বেশি জনমুখী পথে হাঁটার চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রী নানা দেশে ঘুরলেও বাজারে বিনিয়োগ আশাব্যঞ্জক নয়। বিদেশি লগ্নি এখনও দেশের বাজারকে উদ্বেলিত করছে না। বাজারে হাহাকার। শুধুমাত্র শেয়ার বাজার নয়, সাধারণ মধ্যবিত্ত উপভোক্তা বাজারও সে ভাবে দেখা যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে আমেরিকার রিপাবলিকান পার্টির মতো নয়া সংস্কারের হাওয়া তোলা তো দূরের কথা, গরু খাওয়ার মতো বিষয় নিয়ে সাম্প্রদায়িক অশান্তির পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিজেপি-র মধ্যে আডবাণীরা পরামর্শ দিচ্ছেন, এই সাম্প্রদায়িক রাজনীতির তকমা মুছে দিয়ে উন্নয়নের মডেল নিয়ে আসা প্রয়োজন। ফলে আরএসএস এবং কিঞ্চিত্ সাধুদের যে বিবৃতি, সেগুলো থেকে বিজেপি-কে মুক্ত করে এগোতে হবে।
বিজেপি নেতারা অবশ্য বলছেন, লোকসভায় যে হারে ভোট পেয়েছে দল, সেটা এই নির্বাচনেও বজায় আছে। জনসমর্থন অটুট রয়েছে। তবে সংখ্যার খেলায় জাতপাতের ভোটের সমীকরণ ওদের জিতিয়েছে।
কিন্তু এটা থেকে স্পষ্ট যে, মোদীর ম্যাজিক ওই জাতপাতের সমীকরণকে পরাস্ত করতে পারল না। উন্নয়নকে ফোকাস করতে গিয়ে আখেরে ক্ষতিই হল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy