Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মোদীর ‘গরিব-বন্ধু’ ভাবমূর্তি গড়া শুরু

বলা হয়— বিজেপি ‘বড়লোকের দল’, কংগ্রেস ‘গরিবের’। এ বার কংগ্রেসের থেকে ‘গরিবের দল’-এর শিরোপা কেড়ে নিজেদের মুকুটে বসাতে মরিয়া হয়ে উঠলেন নরেন্দ্র মোদী। আর এ কাজে সংখ্যালঘুদেরও সঙ্গে নিতে চান তিনি।

স্বাগতম। কোঝিকোড়ের দলীয় সভায় লালকৃষ্ণ আডবাণী। রবিবার। ছবি: পিটিআই।

স্বাগতম। কোঝিকোড়ের দলীয় সভায় লালকৃষ্ণ আডবাণী। রবিবার। ছবি: পিটিআই।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
কোঝিকোড় শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:০০
Share: Save:

বলা হয়— বিজেপি ‘বড়লোকের দল’, কংগ্রেস ‘গরিবের’। এ বার কংগ্রেসের থেকে ‘গরিবের দল’-এর শিরোপা কেড়ে নিজেদের মুকুটে বসাতে মরিয়া হয়ে উঠলেন নরেন্দ্র মোদী। আর এ কাজে সংখ্যালঘুদেরও সঙ্গে নিতে চান তিনি।

তিন মাস আগেই ঠিক হয়েছিল, ২৫ সেপ্টেম্বর দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জন্মশতবর্ষকে ঘিরে দলের জাতীয় পরিষদের বৈঠক হবে কেরলের কোঝিকোড়ে। কারণ, পাঁচ দশক আগে এই শহরেই জনসঙ্ঘের সভাপতি হয়েছিলেন দীনদয়াল। আর তাঁকে সামনে রেখেই নতুন করে ব্র্যান্ডিং হবে নরেন্দ্র মোদীর। এরই মাঝে উরির সেনাঘাঁটিতে হামলার ঘটনা গ্রাস করে নেয় পরিষদের বৈঠককে। গত দু’দিন ধরে উরি-কাঁটা সামলে আজ পরিষদের শেষ দিনে পরিকল্পনা অনুযায়ী মোদীর ‘গরিব-দরদি’ ভাবমূর্তিতে শান দিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহরা। আর এই সূত্র ধরেই সমাপ্তি বক্তৃতায় কিছুটা যেন আলটপকাই সংখ্যালঘুদের প্রসঙ্গ টেনে আনলেন মোদী।

বিজেপি নেতাদের মতে, ইন্দিরা গাঁধীর আমলে ‘গরিবি হটাও’ অভিযান শুরু হয়েছিল। দারিদ্র তাতে ঘুচুক না-ঘুচুক, কংগ্রেস ‘গরিবদের দল’ এমন ভাবমূর্তি এখনও অটুট। ইন্দিরার পর রাজীব, সনিয়া বা রাহুল গাঁধীও নিজেদের ‘গরিবের বন্ধু’ হিসেবেই মেলে ধরেন। সেই পুঁজি নিয়েই রাহুল এখনও চষে বেড়াচ্ছেন উত্তরপ্রদেশ। আর বিজেপির গায়ে ‘বড়লোকের দল’, ‘স্যুট-বুটের সরকার’, ‘কর্পোরেট বন্ধু’ তকমা সেঁটে নিরন্তর প্রচার করে চলেছেন। নেতারা বলছেন, বিজেপি বরাবর মধ্যবিত্ত ও ব্যবসায়ীদের দল বলে পরিচিত ছিল। এখন সরকারের মধ্যলগ্নে পৌঁছে মোদী বুঝতে পারছেন, ‘গরিবের বন্ধু’র শিরোপাটাও তাঁর চাই। না হলে পরের লোকসভা ভোটে খেসারত দিতে হতে পারে। সে কারণেই পরিষদের বৈঠকে দীনদয়াল উপাধ্যায়কে সামনে রেখে, গোটা বছর ধরে ‘গরিব কল্যাণ বর্ষ’ পালন করে, এই উপলক্ষে নতুন প্রকল্প ঘোষণা করে নতুন ব্র্যান্ডিংয়ে নামছেন মোদী। যাতে মনে হয় বিজেপিই সমাজের এই অংশের ‘যথার্থ’ প্রতিনিধি।

এর সঙ্গেই মোদী বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতার বিকৃত ব্যাখ্যা করে কেউ অনিচ্ছায়, কেউ ইচ্ছা করে বিজেপিকে ভুল বোঝে। কিন্তু সংখ্যালঘুদের প্রতি দৃষ্টিকোণ কী হওয়া উচিত, দীনদয়াল উপাধ্যায় পঞ্চাশ বছর আগেই তা বলে গিয়েছেন। দীনদয়ালের কথায়— ‘সংখ্যালঘুদের পুরস্কৃত করতে হবে না, তিরস্কৃতও নয়। তাঁদের ক্ষমতায়ন করা দরকার। সংখ্যালঘুরা ভোটের বাজার নয়, তাঁদের বস্তু ভাবাটাও ঠিক নয়। সংখ্যালঘুদের আপন বলে মানতে হবে।’ মোদীর বক্তব্য, গরিব-কৃষক-দলিত, পীড়িত-শোষিত-বঞ্চিত— এগুলি বিজেপির কোনও রাজনৈতিক স্লোগান নয়। এগুলি দায়বদ্ধতা। সে কারণেই ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ মন্ত্র। সমাজের কোনও অংশই বিজেপির কাছে ‘অচ্ছুৎ’ নয়। যে ‘সর্বজন হিতায়, সর্বজন সুখায়’ মন্ত্র নিয়ে মায়াবতী রাজনীতি করেন, সেটিও আদতে দীনদয়ালের স্লোগান বলে জানালেন মোদী। প্রশ্ন উঠেছে— হঠাৎ সংখ্যালঘুদের প্রসঙ্গ কেন আনলেন প্রধানমন্ত্রী? তা-ও নিজে মন্তব্য না করে শুধুমাত্র দীনদয়ালের উদ্ধৃতি উল্লেখ করেই ক্ষান্ত হলেন?

বিজেপির শীর্ষ সূত্রের মতে, উরির ঘটনায় পাকিস্তান নিয়ে নিরন্তর সরব হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। পাকিস্তানের বিরোধিতা করতে গিয়ে সঙ্ঘ ও বিজেপির একাংশ এমন ধারণা তৈরি করা ফেলছে— যেন ভারত একটি ‘হিন্দু রাষ্ট্র’। দু’বছরের মাথায় লোকসভা নির্বাচন তো রয়েইছে। তার আগে সামনেই উত্তরপ্রদেশের ভোট। এই অবস্থায় সংখ্যালঘুরা যাতে কোনও ভাবে নিজেদের ‘দলছুট’ মনে না-করেন, তার জন্যই তাঁদের আরও কাছে টানার চেষ্টা করলেন প্রধানমন্ত্রী। বিজেপি নেতাদের ব্যাখ্যা— তার মানে এই নয়, বিজেপি সংখ্যালঘু ভোটের প্রত্যাশায় বসে রয়েছে। মোদী-অমিত শাহ এ’টুকুই চাইছেন, সংখ্যালঘুরা যেন বিজেপির বিরুদ্ধে এককাট্টা না-হয়। আর উদারপন্থী হিন্দুদের মধ্যেও বিজেপি সম্পর্কে ভুল বার্তা না-যায়।

যে দীনদয়ালকে সামনে রেখে মোদীকে নতুন অবতারের রূপ দেওয়ার চেষ্টা শুরু হল, তাঁকে কিন্তু কোনও দিন চাক্ষুস করেননি প্রধানমন্ত্রী। আজকের নেতাদের মধ্যে একমাত্র যিনি করেছিলেন, সেই প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী সর্ব ক্ষণ উপস্থিত থাকলেন মঞ্চে। কিন্তু কেউ তাঁকে কথা বলতে ডাকেনি। মাঝে মাঝে তাঁর চোখের জলও নজর এড়ায়নি কারও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

lalkrishna advani Narendra Modi BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE