Advertisement
০২ মে ২০২৪

মুম্বইয়ে জন্মদিনের পার্টিতেই পুড়ে মৃত্যু তরুণীর

দিনটা আর দেখা হল না খুশবুর। পরের আধ ঘণ্টায় আগুনে ছাই হয়ে গিয়েছে মুম্বইয়ের লোয়ার প্যারেল এলাকার কমলা মিলস কম্পাউন্ডের রুফটপ রেস্তোরাঁ ‘ওয়ান অ্যাবাভ’।

খুশবু ভন্সালী

খুশবু ভন্সালী

সংবাদ সংস্থা
মুম্বই শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৫৪
Share: Save:

মধ্যরাত। ক্যালেন্ডারে ২৯ ডিসেম্বর। সদ্য ২৯-এ পা দিয়েছিলেন খুশবু ভন্সালী। সামনে চকোলেট কেক মোমবাতি দিয়ে সাজানো। চারপাশে উল্লাস— ‘শুভ জন্মদিন খুশি’।

দিনটা আর দেখা হল না খুশবুর। পরের আধ ঘণ্টায় আগুনে ছাই হয়ে গিয়েছে মুম্বইয়ের লোয়ার প্যারেল এলাকার কমলা মিলস কম্পাউন্ডের রুফটপ রেস্তোরাঁ ‘ওয়ান অ্যাবাভ’। আর তাতেই শেষ হয়ে গিয়েছে খুশবু-সহ ১৪টি প্রাণ। মৃতদের মধ্যে দশ জনই তরুণী। বয়স কুড়ি থেকে তিরিশের আশপাশে। গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি ২১ জন। পুলিশের অনুমান, আপৎকালীন দরজা খুঁজে পাননি কেউ। রেস্তোরাঁর শৌচাগারের কাছে স্তূপীকৃত অবস্থায় মেলে দেহগুলি। খুশবুর দেহ শনাক্ত করেন স্বামী। স্থানীয় হাসপাতালের চিকিৎসক অবিনাশ সুপে জানিয়েছেন, শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে সকলেরই।

পাঁচ তলা বাড়িটির ছাদের ওই রেস্তোরাঁর পার্টিতে নিমন্ত্রিত ছিলেন দেড়শো জন। পুলিশ জানিয়েছে, আগুন লেগেছিল সাড়ে বারোটা নাগাদ। বাঁশের তৈরি রেস্তোরাঁর ফলস সিলিংয়ে আগুন দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ে। ঠিক নীচের তলায় অন্য একটি রেস্তোরাঁতেও আগুন ছড়ায়। নাতনির মৃত্যুর খবর পেয়ে খুশবুর ঠাকুরদা বাবুলাল মেটা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্যেই এই দিনটা দেখতে হল।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘হোটেলের ভিতরে শুকনো বাঁশের মতো দাহ্য বস্তু ছিল, অথচ আগুন নেভানোর ব্যবস্থা ছিল না।’’ একই কথা জানিয়েছে দমকলও।

রাতের মুম্বইয়ে লোয়ার প্যারেল এলাকা বরাবরই জনপ্রিয়। এক হাত অন্তর রেস্তোরাঁ-পাব এখানে। একাধিক সংবাদ সংস্থার অফিসও এই এলাকায়। একটি মরাঠি খবরের চ্যানেলের কর্মী সঞ্জয় যাদব বলেন, ‘‘রাতের ডিউটিতে ছিলাম। হঠাৎ প্রবল চিৎকার-চেঁচামেচি কানে আসে। ভেবেছিলাম, পার্টি চলছে বোধহয়। অফিস থেকে বেরিয়ে দেখি, দাউদাউ করে জ্বলছে ছাদের রেস্তোরাঁটি। ধোঁয়ায় আমাদের অফিসের মূল প্রবেশদ্বারও বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল।’’ ওই অফিসের ১৫ জন সংবাদকর্মী কোনও মতে রক্ষা পেয়েছেন।

‘ওয়ান অ্যাবাভ’-এর একটি টেবিলে ছিলেন সুলভা কেজি অরোরা। বললেন, ‘‘বেরোনোর সময়ই পাননি কেউ। ধাক্কাধাক্কিতে অনেকে পড়ে যান। আমিও পড়ে যাই। গায়ের উপর দিয়ে চলে যাচ্ছিল লোকজন। ও দিকে, জ্বলন্ত ছাদ ভেঙে পড়ছে। কী ভাবে যে বেঁচে আছি, জানি না!’’ আতঙ্ক কাটছে না সুলভার। আধঘণ্টার মধ্যে গোটা বাড়িটাই গিলে ফেলে আগুন। বেশ কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু তত ক্ষণে পড়ে রয়েছে ইট-কাঠ-পাথরের পোড়া স্তূপ। কী থেকে আগুন লেগেছিল, তা এখনও জানাতে পারেনি দমকল।

পুলিশ জানিয়েছে, কোনও রকম অগ্নিনিরাপত্তা বিধি মেনে চলেনি ওই রেস্তোরাঁ। তা ছাড়া, ভয়াবহ আগুনের মধ্যে গ্রাহকদের সাবধানে বের করে আনার বদলে ম্যানেজার ও কর্মীরা পালিয়ে যান। ‘ওয়ান অ্যাবাভ’-এর তিন ম্যানেজার হ্রতেশ সঙ্ঘভি, জিগার সঙ্ঘভি ও অভিজিৎ মানকার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারা (অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানো), ৩৩৭ ধারা এবং ৩৩৮ ধারায় (নিরাপত্তা বিধি না মেনে কারও জীবন বিপন্ন করা) মামলা করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই দু’জনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার পরে দুঃখপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন ‘বৃহন্মুম্বই মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন’ (বিএমসি)-কে। ইতিমধ্যেই পাঁচ কর্মীকে সাসপেন্ড করেছে বিএমসি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

massive fire Mumbai Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE