Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

মাওবাদী দমনে নতুন দাওয়াই মোদীর

বুলেট নয়। উন্নয়নেই মাওবাদী সমস্যা মোকাবিলা করতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি কেন্দ্রের দশটি মন্ত্রককে নিয়ে মাওবাদী সমস্যার মোকাবিলায় দশ দফা কৌশল স্থির করেছেন। এর মূল সুরই হল, আধাসামরিক বাহিনীর অপারেশনের উপর অত্যধিক নির্ভরতা থেকে সরে আসা এবং মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকায় ঠিক ভাবে উন্নয়নের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৪১
Share: Save:

বুলেট নয়। উন্নয়নেই মাওবাদী সমস্যা মোকাবিলা করতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।

প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি কেন্দ্রের দশটি মন্ত্রককে নিয়ে মাওবাদী সমস্যার মোকাবিলায় দশ দফা কৌশল স্থির করেছেন। এর মূল সুরই হল, আধাসামরিক বাহিনীর অপারেশনের উপর অত্যধিক নির্ভরতা থেকে সরে আসা এবং মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকায় ঠিক ভাবে উন্নয়নের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। সেখানকার আদিবাসীরা যাতে উন্নয়নের সুফল পান ও মাওবাদীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হন, সেটাই সরকারের লক্ষ্য। একই সঙ্গে মাওবাদীদের আত্মসমর্পণে উৎসাহ ভাতা বাড়িয়ে তাদের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়েছে। আত্মসমর্পণের পর রোজগারের ব্যবস্থাও করবে সরকার। তবে প্রয়োজনে মাওবাদী হামলা মোকাবিলা করার জন্য পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীকেও প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। যদিও এই সব বাহিনীকে আরও মানবিক হওয়ার পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে।

মোদী সরকারের যোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, “মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকায় উন্নয়নের সুফল পৌঁছে দেওয়ার নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এর জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকগুলি বিশেষ নজর দিচ্ছে।” সরকারি সূত্রের মতে, প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় ছাড়াও স্বরাষ্ট্র, অর্থ, সড়ক পরিবহণ, তথ্য-প্রযুক্তি, আদিবাসী বিষয়ক, মানব সম্পদ উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, দক্ষতা উন্নয়ন, পরিবেশ, গ্রামীণ উন্নয়নের মতো মন্ত্রকগুলিকে নিয়ে সামগ্রিক নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। পরিবেশ মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর জানিয়েছেন, মাওবাদী এলাকায় প্রথম যে কাজটি হাতে নেওয়া হয়েছে, সেটি হল সড়ক নির্মাণ। এক বার সড়ক তৈরি হলে বাকি উন্নয়নের কাজও সেখানে অনায়াসে পৌঁছে দেওয়া যাবে বলেই মনে করছে সরকার। উন্নয়নের কাজে রাজ্যগুলিকেও আরও এগিয়ে আসতে বলছে কেন্দ্র।

সরকারের লক্ষ্য, মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকায় আঠারোশো ছত্রিশটি মোবাইল টাওয়ার বসানো। আগামী তিন বছরে দেশের আড়াই লক্ষ গ্রাম পঞ্চায়েতে অপটিকাল ফাইবার বসানোর যে পরিকল্পনা রয়েছে, মাওবাদী এলাকাতেও সেই কাজ পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা হবে। প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যেই জনধন যোজনার মাধ্যমে সব পরিবারে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট করাতে চাইছেন। মাওবাদী এলাকায় এই কর্মসূচিতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, তার জন্যও রণনীতি তৈরি করতে বলেছেন মোদী। অতীতে এই সব এলাকায় স্কুল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি করা হলেও ভয়ে সেখানে শিক্ষক, স্বাস্থ্যকর্মীরা যেতে চাইতেন না। এ বার যে কোনও পরিকাঠামো তৈরির সময়ে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে। ব্লক স্তরের হেডকোয়ার্টারে এক বার এই সব স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র চলতে শুরু করলে সেই এলাকার বাসিন্দারা সুযোগ নেবেন। সরকারও তাঁদের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলেই আশা সরকারের।

মোদী সরকারের নতুন নীতি হল, এলাকার সাধারণ মানুষকে উন্নয়নের সুফল দিয়ে মানসিক ভাবে মাওবাদীদের থেকে বিচ্ছিন্ন করা। পাশাপাশি মাওবাদীদের কাছেও নরেন্দ্র মোদী, রাজনাথ সিংহরা বারবার আহ্বান জানাচ্ছেন মূলস্রোতে ফিরে আসার জন্য। তারা আত্মসমর্পণ করলে বাড়তি ভাতা দেওয়া হবে এবং তিন বছর ধরে মাসিক স্টাইপেন্ড দেওয়া হবে। মাওবাদী অধ্যুষিত রাজ্য ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহ দিল্লিতে এসে জানিয়েছেন, “কেন্দ্রে মোদী সরকার আসার পরে মাওবাদীদের আত্মসমর্পণের হারও উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়ে গিয়েছে।” তবে যারা আত্মসমর্পণ করছে, আপাতত তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। “পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী এখন জঙ্গলের অনেকটা ভিতরে গিয়ে থাকতে পারছে” বলেই দাবি করেছেন রমন সিংহ।

পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীকে এখন তিনটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। মাওবাদী হামলা হলে তার যোগ্য জবাব তো দেওয়া হবে। কিন্তু এখন আধাসামরিক বাহিনীর মূল কাজ হল প্রত্যন্ত এলাকায় পরিকাঠামো উন্নয়নে নিরাপত্তা দেওয়া। পাশাপাশি, এই বাহিনীকে স্থানীয় বাসিন্দাদের আস্থা অর্জনের চেষ্টায় বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে আধাসামরিক বাহিনীর মনোবল বাড়াতেও নজর দিচ্ছে সরকার। খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ তাই ক’দিন আগেই আধা সেনার মনোবল বাড়াতে নিজে বাইক চালিয়ে সারান্ডার জঙ্গলে ঘুরে এসেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE