এসপি সলবেন্দ্র সিংহ
বছরের শেষ রাত। ঠিক সাড়ে আটটায় বাজল পঠানকোট গুরুদ্বারের রক্ষী সোমের ফোন। ফোনের ও প্রান্তে খোদ গুরদাসপুরের এসপি সলবেন্দ্র সিংহ। তিনি জানান, আরও কিছু ক্ষণের জন্য খুলে রাখতে হবে ওই গুরুদ্বার। প্রার্থনার জন্য সেখানে যাবেন তিনি। তাই বেশ রাত হয়ে গেলেও সোম সে দিন গুরুদ্বারটি খুলে রাখেন।
আজ এই দাবি করেন সোম। তাঁর এই তথ্যে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কারণ পঠানকোটের জঙ্গি হামলায় সলবেন্দ্রর ভূমিকা এবং জঙ্গিযোগ নিয়ে ধোঁয়াশাটা আগে থেকেই তৈরি হচ্ছিল। এ নিয়ে মঙ্গলবার এনআইএ তাঁকে ছ’ঘণ্টা ধরে জেরা করেছে। তবে গত কাল গোটা ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি নির্দোষ।’’
আজ সোম যে তথ্য দিয়েছেন, তার সঙ্গে মিলছে না সলবেন্দ্রর বয়ান। সলবেন্দ্র আগে জানিয়েছিলেন, তিনি প্রায়শই ওই গুরুদ্বারে যেতেন। আর সোমের দাবি, ওই গুরুদ্বারে সেই রাতের আগে কখনওই দেখা যায়নি সলবেন্দ্র বা তাঁর বন্ধু রাজেশ বর্মাকে। ঘটনার দিন শুধু রাজেশকে দু’বার ওই ধর্মস্থানে দেখা গিয়েছিল।
কী হয়েছিল সে দিন? সোম জানান, রাত সাড়ে আটটা নাগাদ তাঁর কাছে ফোন করেন সলবেন্দ্র। বলেন, তিনি সেখানে প্রার্থনা করতে যাবেন। ফলে আরও কিছু ক্ষণ খোলা রাখতে হবে গুরুদ্বার। সোম তাঁকে বলেছিলেন, এমনিতেই দেরি হয়ে গিয়েছে। গুরুদ্বার আর খুলে রাখা যাবে না। সোমের কথা মানতে চাননি সলবেন্দ্র। রীতিমতো নির্দেশের সুরে বলেছিলেন, গুরুদ্বার খুলে রাখতেই হবে। খোদ এসপি-র নির্দেশ। তাই অমান্য করতে আর সাহস পাননি সোম।
সে রাতে সলবেন্দ্র যে এলাকায় গিয়েছিলেন, সেখানে জঙ্গি হানা হতে পারে বলে আগে থেকেই সতর্কতা ছিল। তার পরেও অত রাতে হঠাৎ কোনও অস্ত্র বা রক্ষী ছাড়াই কেন গুরুদ্বারে গিয়েছিলেন সলবেন্দ্র? প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে তদন্তকারীদের মনে। এর উত্তর পেতে তাই এনআইএ-সহ নিরাপত্তা সংস্থাগুলি আরও জেরা করতে চায় সলবেন্দ্রকে। আর এর জন্য তাঁকে হেফাজতে নেওয়া হতে পারে বলেও দাবি একটি সূত্রের।
এই সংক্রান্ত আরও খবর...
ডোভালই ডোবালেন পঠানকোটে
অভিযানের নেতৃত্ব নিয়ে বেনজির সঙ্কট
৩১ ডিসেম্বর রাতে নিজের এসইউভিতে চেপে সীমান্ত লাগোয়া ওই গুরুদ্বারে গিয়েছিলেন সলবেন্দ্র, তাঁর রাঁধুনি মদন গোপাল এবং বন্ধু রাজেশ বর্মা। ফেরার পথেই জঙ্গিরা তাঁদের অপহরণ করে বলে দাবি। আর সলবেন্দ্রর এসইউভিটি নিয়ে জঙ্গিরা পঠানকোটে হামলা চালায়। সলবেন্দ্রর এই জবানবন্দিতে নানা অসঙ্গতি রয়েছে দাবি গোয়েন্দাদের। সলবেন্দ্রকে আজ ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়েছিল এনআইএ। সে রাতের ঘটনা অভিনয় করে দেখাতে বলা হয় তাঁকে। এর পর সীমান্তবর্তী একটি গ্রামে গিয়েছিলেন তদন্তকারীরা। কারণ ওই গ্রাম দিয়েই জঙ্গিরা ভারতে ঢুকেছিল বলে ধারণা।
এনআইএ-র তদন্তে উঠে এসেছে আরও একটি তথ্য। তাতেও প্রশ্ন উঠছে সলবেন্দ্রর জবানবন্দি নিয়ে। এনআইএ-র তরফে জানানো হয়েছে, সে দিন সলবেন্দ্র সীমান্ত লাগোয়া যে গুরুদ্বারে গিয়েছিলেন, সেখান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরেই পঞ্জাবের বামিয়াল এলাকায় কিছু জুতোর ছাপ মিলেছে। যা বিশ্লেষণ করে গোয়েন্দারা বলেন, সেগুলি পাকিস্তানের ‘এপকট’ ব্র্যান্ডের জুতোর ছাপ। তদন্তকারীরা কাল জানিয়েছিলেন, পঠানকোটে হামলাকারী ৬ জঙ্গির মধ্যে এক জনের পায়ে ছিল সেই ‘এপকট’ ব্র্যান্ডেরই জুতো!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy