Advertisement
E-Paper

পানাগড়িয়ার প্রশ্নই চ্যালেঞ্জ প্রধানমন্ত্রীর

নাগড়িয়ার যুক্তি ছিল, শিক্ষা-স্বাস্থ্যের তুলনায় ভর্তুকির পিছনেই বেশি খরচ করে সরকার। আবার বেতন-পেনশন বা ঋণের সুদ গুণতে যে টাকা খরচ হয়, সেই তুলনায় জোর দেওয়া হয় না পরিকাঠামোর বিকাশে।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৭ ০৫:০৮
নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

তিনি সরে যাচ্ছেন। কিন্তু অরবিন্দ পানাগড়িয়া নরেন্দ্র মোদী সরকারের সামনে যে সব অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেছিলেন, সেগুলি থেকেই যাচ্ছে।

যেমন, পানাগড়িয়ার যুক্তি ছিল, শিক্ষা-স্বাস্থ্যের তুলনায় ভর্তুকির পিছনেই বেশি খরচ করে সরকার। আবার বেতন-পেনশন বা ঋণের সুদ গুণতে যে টাকা খরচ হয়, সেই তুলনায় জোর দেওয়া হয় না পরিকাঠামোর বিকাশে। এ বার পানাগড়িয়ার পদে যাঁকে বসাবেন মোদী, তাঁকে এই প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজতে হবে। দেশে বেশি বেতনের ভালো চাকরির বন্দোবস্ত, চাষিদের অন্য রোজগারের উপায় তৈরি করা— পানাগড়িয়ার এই প্রস্তাবগুলি নিয়ে মোদী সরকার কতদূর এগোয়, সেটাই দেখার।

যোজনা কমিশন ভেঙে মোদীর তৈরি নীতি আয়োগের উপাধ্যক্ষের পদ ছেড়েছেন অরবিন্দ পানাগড়িয়া। কিন্তু আয়োগের কর্তারা মনে করছেন, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক যে সব চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেছিলেন, তার মোকাবিলা করাই মোদীর সামনে সব থেকে কঠিন কাজ। ভোটের দিকে তাকিয়ে মোদী কড়া সংস্কারপন্থী থেকে ভোল পাল্টে গরিবের মসিহা হতে চাইলে এ সব সমস্যার সমাধান আরও কঠিন হবে। পানাগড়িয়ার জায়গায় কে আসবেন, তা বুঝিয়ে দেবে নরেন্দ্র মোদীর আর্থিক নীতি কোন পথে চলবে।

পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা তুলে দিয়ে নতুন ধাঁচের পরিকল্পনার অঙ্গ, তিন বছরের ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরি করেন পানাগড়িয়া। তাতে বলা হয়েছে, ২০১৫-’১৬-তে রাজস্ব খাতে মোট ব্যয়ের ৪৭ শতাংশই উন্নয়ন ছাড়া বাকি খাতে খরচ হয়েছিল। ২০১৮-’১৯-এর মধ্যে তা ৪১ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা বেঁধেছিলেন পানাগড়িয়া। রাজস্ব ঘাটতিও ০.৯ শতাংশে কমিয়ে আনার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। যা করতে গেলে, মোদী সরকারের সব রকম ভর্তুকি ছাঁটাই করা ছাড়া উপায় নেই।

আরও পড়ুন: অর্থনৈতিক করিডর ঘিরে চিন-বিরোধী ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে পাকিস্তানে

পানাগড়িয়ার মত ছিল, দেশে চাকরির অভাব নেই। অভাব রয়েছে যোগ্যতা অনুযায়ী ভাল বেতনের, ভাল চাকরির। তার জন্য তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, চিনের মতো ভারী শিল্প বা বিশাল মাপের কারখানা তৈরিতে জোর দিয়েছিলেন। নীতি আয়োগের এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর মুখে কিন্তু উল্টো কথা শুনেছি। তিনি বলেছেন, এ দেশে বেশি চাকরি হয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে। সে দিকে নজর দেওয়া বেশি জরুরি।’’

এখানেই পানাগড়িয়ার নীতির সঙ্গে ভারতের বাস্তব পরিস্থিতির ফারাক দেখছে সঙ্ঘ-পরিবারের স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ। সংগঠনের যুগ্ম-আহ্বায়ক অশ্বিনী মহাজন বলেন, ‘‘নীতি আয়োগে এমন ব্যক্তিকে চাই, যাঁর সঙ্গে ভারতের মাটির যোগ আছে। বিদেশে পড়াশোনা করে আসা ব্যক্তি, যাঁর সঙ্গে মাটির যোগ নেই, নীতি ঠিক করার ভার তাঁকে দেওয়া ঠিক নয়।’’
পানাগড়িয়া-জমানায় নীতি আয়োগের কাজে অখুশি অশ্বিনী বলেন, ‘‘শুধু ব্যক্তি বদলালে হবে না। নীতি আয়োগের কর্মপদ্ধতি বদলাতে হবে।’’ তাঁর ‘অ্যাকশন প্ল্যান’-এ কর সংক্রান্ত বিবাদ কমাতে কর আইনের

সরলীকরণের কথা বলেন পানাগড়িয়া। পুরনো নোট জমা দেওয়ায় যাতে আমজনতার হেনস্থা না হয়, তার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও লিখেছিলেন। সুপারিশ করেছিলেন, আড়াই লক্ষ টাকা পর্যন্ত টাকা জমায় যেন কোনও প্রশ্ন না করা হয়। নীতি আয়োগের কর্তাদের মতে, সরকারের অন্দরে আলোচনা ছাড়াই নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেন মোদী। আর তার পক্ষে সওয়াল করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন পানাগড়িয়া। পি চিদম্বরমের কটাক্ষ, ‘‘নোট বাতিলের পরেও জানুয়ারি থেকে মার্চে বৃদ্ধির হার ৮ শতাংশ থাকবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন পানাগড়িয়া। ভুল প্রমাণিত হওয়ার আগে পদত্যাগ করে উনি বুদ্ধিমানের কাজই করেছেন।’’

Arvind Panagariya Narendra Modi নরেন্দ্র মোদী অরবিন্দ পানাগড়িয়া
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy