Advertisement
১০ মে ২০২৪

রাহুলের নেতৃত্বে বিহারের ধাঁচে মহাজোট চান নীতীশ

উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টিতে ভাঙনের সম্ভাবনা দেখে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে তৎপর হয়েছেন রাহুল গাঁধী। সক্রিয় নীতীশ কুমারও।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৪০
Share: Save:

উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টিতে ভাঙনের সম্ভাবনা দেখে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে তৎপর হয়েছেন রাহুল গাঁধী। সক্রিয় নীতীশ কুমারও। বিহার থেকে তিনি কংগ্রেস হাইকম্যান্ডকে বার্তা পাঠিয়েছেন, তাঁর রাজ্যের মতো উত্তরপ্রদেশেও গড়া হোক মহাজোট। তবেই রোখা সম্ভব হবে বিজেপিকে। বিহারে জোট গঠনের প্রশ্নে মূল কান্ডারি ছিলেন রাহুল। এ ক্ষেত্রেও জোট হতে পারে এমন দলগুলোর মধ্যে সমন্বয়সাধন করার দায়িত্ব রাহুলকেই নিতে অনুরোধ করেছে নীতীশ শিবির।

টালমাটাল উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে এখন মূল প্রশ্ন, অখিলেশ দল ভাঙবেন কি না। সমাজবাদী পার্টি এখন মানসিক ভাবে আড়াআড়ি ভাবে বিভক্ত। কিন্তু প্রশ্ন হল, অখিলেশ কি এই মুহূর্তে দল ভাঙার মতো ঝুঁকি নিতে পারবেন? মুলায়ম-পুত্র মুখে অবশ্য বলেছেন, তিনি দল ভাঙার পথে হাঁটতে রাজি নন। কিন্তু কাকা শিবপাল আজ প্রকাশ্যে দাবি করেছেন, ‘‘অখিলেশ আমায় বলেছে যে, ও দল ভেঙে অন্য দলের সঙ্গে মহাজোট করে নির্বাচনে যাবে।’’ শিবপালের ওই বক্তব্যকে খণ্ডন করেননি অখিলেশও। ফলে সপা ভাঙতে পারে, এমন একটি সম্ভাবনা কোনও পক্ষই একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছে না।

আর তাই পরিস্থিতি দেখে তলে তলে সক্রিয় হয়েছেন রাহুল গাঁধীও। দলীয় সূত্রে খবর, তিনি অখিলেশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। গত সপ্তাহে রাহুল ও অখিলেশের মধ্যে একটি বৈঠকে জোট নিয়ে প্রাথমিক আলোচনাও হয়েছে। বৈঠকে রাহুল অখিলেশকে জানিয়েছেন, তিনি দল ভেঙে বেরিয়ে এলে কংগ্রেস আসন্ন নিবার্চনে শরিক দল হিসেবে একসঙ্গে নির্বাচনে লড়বে। এমনকী, অখিলেশকেই মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে মেনে নেবে কংগ্রেস। রাহুল তথা কংগ্রেসের একটি অংশ মনে করছে, অখিলেশ দল থেকে বেরিয়ে আসলে দলের অনেক বিধায়ক তাঁর সঙ্গে বেরিয়ে আসবেন। আর তা হলে বিহারে মতো উত্তরপ্রদেশেও মহাজোট গড়ার প্রশ্নে পদক্ষেপ করতে পারেন রাহুল।

মহাজোটের প্রশ্নে সরব নীতীশরাও। তাঁরা চাইছেন, বিহারের মতো উত্তরপ্রদেশেও মহাজোট হোক। যে ছাতার তলায় অখিলেশের নতুন দল ছাড়া কংগ্রেস, নীতীশ কুমার, লালু প্রসাদ এমনকী, অজিত সিংহরা এসে যোগ দিতে পারবেন। ইতিমধ্যেই নীতীশ একটি বার্তায় অখিলেশকে অনুরোধ করেছেন, পারিবারিক গণ্ডির সীমা ছাড়িয়ে তিনি যেন বেরিয়ে আসেন। তাঁর একমাত্র লক্ষ্য হোক, জনতাকে সুশাসন উপহার দেওয়া। নীতীশদের পরিকল্পনা, প্রয়োজনে মায়াবতীর সঙ্গে হাত মেলানো যেতে পারে। যাতে বিহারের ধাঁচে উত্তরপ্রদেশেও বিজেপিকে ক্ষমতায় আসা থেকে রোখা যায়। সূত্রের খবর, অখিলেশের পাশাপাশি মায়াবতীর দলের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলছেন রাহুলরা। যদিও মায়াবতী এখনও পর্যন্ত জোটে যাওয়া নিয়ে কোনও ইতিবাচক ইঙ্গিত দেননি। পুরোটাই তিনি ঝুলিয়ে রেখেছেন ভোট-পরবর্তী নির্বাচনী সমীকরণের কথা মাথায় রেখে।

মহাজোটের প্রশ্নে রাহুল তলে তলে সক্রিয় হলেও, প্রকাশ্যে কংগ্রেস অবশ্য বলছে, না-আঁচানো পর্যন্ত বিশ্বাস নেই। উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেস নেতা আরপিএন সিংহের কথায়, ‘‘আগে সপা ভাঙুক। তারপরে জোটের প্রশ্ন।’’ হাইকম্যান্ড জোটের প্রশ্নে আশাবাদী হলেও, উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেস নেতারা কিন্তু মনে করছেন, পরিস্থিতি আবার ঠিক হয়ে যাবে। এ কথা ঠিক যে, অখিলেশ যুব মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে রাজ্যে একটি নিজস্ব ভাবমূর্তি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। উন্নয়নের চেষ্টা করেছেন। দুর্নীতি ও গুন্ডাগিরি কমিয়েছেন। ভাবমূর্তি প্রশ্নে তাঁর পিছনে দলীয় বিধায়কদের সমর্থন থাকলেও, দল ভেঙে নিজের রাজনৈতিক জীবন ঝুঁকিতে ফেলার সাহস তিনি দেখাতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন খোদ সমাজবাদী বিধায়করা। ফলে আগ বাড়িয়ে মুখ পোড়াতে রাজি নন প্রবীণ কংগ্রেস নেতারা।

তা ছাড়া, সপা ভাঙলে দলের রাশ সম্পূর্ণ নিজের হাতে নিয়ে নেবেন মুলায়ম। সে ক্ষেত্রে জয়ী বিধায়করা পোড় খাওয়া মুলায়মকে ছেড়ে রাজনীতিতে অপেক্ষাকৃত নবীন অখিলেশের পাশে কতটা দাঁড়াবেন, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। তা ছাড়া, জাতীয় রাজনীতিতে মুলায়ম সিংহের সঙ্গে সনিয়া গাঁধীর সম্পর্ক বরাবরই ভাল। ফলে অখিলেশ না মুলায়ম, শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব কার দিকে ঝুঁকবেন, তা নিয়েও দলের মধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rahul gandhi Nitish kumar bihar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE