Advertisement
E-Paper

অন্য অস্ত্র অকেজো, অখিলেশের রাজ্যে মোদী-অমিতের ভরসা মেরুকরণই

নোট বাতিল করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই। কিংবা ঢাকঢোল পিটিয়ে উন্নয়নের প্রচার। উত্তরপ্রদেশের ভোটের ময়দানে এ সব কোনও অস্ত্রই কাজ করছে না। সাফল্য খুঁজতে দিশেহারা নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ তাই ধর্মীয় মেরুকরণের জন্যই সুর চড়াচ্ছেন।

জয়ন্ত ঘোষাল

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৪:১০
ইলাহাবাদে নির্বাচনী জনসভার পরে প্রধানমন্ত্রী। সোমবার।  ছবি:  এপি।

ইলাহাবাদে নির্বাচনী জনসভার পরে প্রধানমন্ত্রী। সোমবার। ছবি: এপি।

নোট বাতিল করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই। কিংবা ঢাকঢোল পিটিয়ে উন্নয়নের প্রচার। উত্তরপ্রদেশের ভোটের ময়দানে এ সব কোনও অস্ত্রই কাজ করছে না। সাফল্য খুঁজতে দিশেহারা নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ তাই ধর্মীয় মেরুকরণের জন্যই সুর চড়াচ্ছেন। ভোটের প্রচারে নেমে তাঁরা বারবার ধর্মীয় বিভাজনের কথা টেনে এনে মেরুকরণের জন্য সুর চড়িয়ে যাচ্ছেন। তবে বিজেপির রাজনীতি যাতে সফল না হয়, সে জন্য সংঘাতের রাস্তা এড়ানোর কৌশল নিয়েছেন অখিলেশ-রাহুল জোট।

ধর্মীয় মেরুকরণের বিভেদ-রাজনীতিকে গত কালই সামনে নিয়ে এসেছিলেন মোদী। কিছুটা ঘুরিয়ে, মোড়ক দিয়ে। মোদী বলেন, ‘‘গ্রামে কবরস্থানের জায়গা করা হলে শ্মশানঘাটও বানানো উচিত।’’ অখিলেশ কেন উন্নয়নের কাজকে ধর্মের চশমা দিয়ে দেখেন— সে প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী। এখানেই শেষ নয়, তাঁর সেনাপতি বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বলেন, ‘‘অখিলেশের সরকারি পরিষেবা অ-হিন্দুরা পায়।’’ এমনকী অমিত টেনে আনেন গো-মাংসের রাজনীতির কথা। জানান, ‘‘ক্ষমতায় এলে বিজেপি রাজ্যের সমস্ত কসাইখানা বন্ধ করে দেবে।’’ লোকসভা ভোটে মেরুকরণের রাজনীতির মধ্য দিয়ে উত্তরপ্রদেশে ঝড় তুলেছিল বিজেপি। আর এ বার বিধানসভা ভোটের তিন দফা কেটে যাওয়ার পরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক থেকে নোট বাতিল কিংবা উন্নয়ন— কোনও অস্ত্রই যখন ঠিক ভাবে কাজ করছে না, তখন আবার সেই পুরনো পথেই ফিরে আসা। সঙ্ঘের কথায়, শিকড়ের কাছে ফেরা! বিজেপি এখন মনে করছে, উগ্র হিন্দুত্ব দিয়ে হতাশ কর্মীদেরও চাঙ্গা করা যাবে। তবে মোদী-অমিত শাহকে মেরুকরণের পথে নামতে দেখে রাহুল-অখিলেশ পাল্টা কৌশল নিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, বিজেপির ফাঁদে পা দেওয়া চলবে না। তাই প্রধানমন্ত্রীর গতকালের মন্তব্য নিয়ে গুলাম নবি আজাদ নির্বাচন কমিশনে নালিশ জানাতে চাইলেও রাহুল তাঁকে নিরস্ত করেছেন।

পাঁচ রাজ্যের ভোটের দিকে তাকিয়ে একের পরে এক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মোদী। কখনও সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করে ৫৬ ইঞ্চি ছাতি ফুলিয়েছেন। কখনও নোট বাতিলে গরিরের উপকারের কথা বলে গলা ফাটিয়েছেন। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের মাটি যে অন্য কথা বলছে, সেটা বুঝতে পারছেন বিজেপির শীর্ষ নেতারা। গঙ্গা-যমুনার এই সঙ্গম শহরে বিজেপির সঙ্কটের ছবিটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এই এলাকায় ১২টি বিধানসভা কেন্দ্র তিনটি লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে। ইলাহাবাদ গঙ্গা-অধ্যুষিত ও যমুনা-অধ্যুষিত অঞ্চলে বিভক্ত। যমুনা এলাকার সঙ্ঘ ও বিজেপির কর্মীরা ভোটের প্রচার করছেন না, একদম বসে গিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ— আড়াই বছরে কেন্দ্র শুধু গঙ্গা অধ্যুষিত এলাকার উন্নয়ন নিয়েই ভেবেছে! বিজেপি সাংসদ, বিড়ি ব্যবসায়ী শ্যামাচরণ সিংহ পর্যন্ত ক্ষুব্ধ, প্রচারে বেরোচ্ছেন না। আর মোদীর চিন্তার বড় কারণ, গরিব মানুষ নোট নাকচের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানাচ্ছেন। সঙ্ঘের অভিযোগ, মোদী ওবিসি রাজনীতি করতে গিয়ে ব্রাহ্মণ রাজপুত ভূমিহারদের থেকে দূরে সরে গিয়েছেন। তাদের ভোট বিজেপি থেকে ফের কংগ্রেসে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

আরও পড়ুন: ‘গাধা’র প্রচার ছাড়ুন, আর্জি অমিতাভকে

ইলাহাবাদের আনন্দভবন থেকে আগামিকাল রাহুল-অখিলেশের রোড শো শুরু হবে। মতিলাল-জওহরলাল নেহরু থেকে শুরু করে গাঁধী পরিবারের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এই বাড়িটি। ভোটের প্রচার করতে এসে রাহুল থাকবেন এরই লাগোয়া স্বরাজ ভবনে। জোটের মোকাবিলায় অমিত শাহও আগামিকাল ইলাহাবাদে পাল্টা রোড শো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। উদ্বিগ্ন জেলাশাসক সঞ্জয় কুমার আইন-শৃঙ্খলার কথা ভেবে সেই সভার অনুমতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু অখিলেশ জেলাশাসককে অনুমতি দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু দলের কর্মীদের অখিলেশ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘বিজেপি আক্রমণাত্মক হলেও আমরা হিংসার পথে যাব না।’’ রাহুল আজ ইলাহাবাদের পোঁরাওতে এসেছিলেন সভা করতে। এখানকার কংগ্রেস প্রার্থী রামকৃপাল সিংহ দু’বারের সিপিএম বিধায়ক ছিলেন। এ বার যোগ দিয়েছেন কংগ্রেসে। এ গ্রামে উচ্চবর্ণের পণ্ডিত ও নিম্ন বর্গের কুর্মি-দলিতদের বিবাদ পুরনো। লাল পতাকা হাতে নিয়ে রামকৃপাল নিম্ন বর্গের ভোট পেতেন। বিজেপি এ বারও চেষ্টা করছে উচ্চবর্ণের ভোট পেতে। সপা-র প্রার্থী রাজমণি কোল নিম্ন বর্গের। রামকৃপালকে হারাতে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু অখিলেশ অনেক বুঝিয়ে তাঁকে সেই যুদ্ধ থেকে বিরত করেছেন।

এই মুহূর্তে একটি বিষয় স্পষ্ট— সপা, বিএসপি— দুই দলের ভোটব্যাঙ্ক এখনও অটুট। নীল শাড়ি পড়া মহিলাদের নিয়ে গ্রামগুলিতে মায়াবতী দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। অখিলেশও দিনে এক ডজন সভা করছেন। স্ত্রী ডিম্পলও উন্নয়ন নিয়ে অখিলেশের স্বপ্নের কথা তুলে ধরছেন। তবে বিজেপি বা কংগ্রেস— দিল্লি থেকে উত্তরপ্রদেশকে নিয়ন্ত্রণ করার অবস্থায় নেই। কিন্তু ৪০৩টি আসনের জেতা-হারার উপরে দিল্লির রাজনীতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।

Polarization Narendra Modi নরেন্দ্র মোদী
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy