কেউ গাধা বললে রেগে ওঠার কিছু নেই। বরং যে বলছে তাকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। কারণ, গুজরাতের কচ্ছে থাকা বুনো গাধারা গাধাকুলের সম্মান বাড়িয়েছে। কচ্ছের বুনো গাধা অভয়ারণ্য বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে গুজরাতের সাফল্যের মস্ত বড় নজির। গুজরাত সরকারের বিজ্ঞাপনে এমনটাই বলে থাকেন অমিতাভ বচ্চন।
নরেন্দ্র মোদীর রাজ্যের ওই বিজ্ঞাপন নিয়ে কটাক্ষ করতে গিয়ে গুজরাতের গাধাকে উত্তরপ্রদেশ ভোটের ময়দানে টেনে আনলেন অখিলেশ যাদব। সেই সঙ্গে অমিতাভ বচ্চনকেও। ‘গুজরাতের গাধা’দের বিজ্ঞাপন না করার অনুরোধ করে। অনেকের মতে, অখিলেশ নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের দিকে আঙুল তুলেছেন। তবে এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে সমাজবাদী শিবির।
রায়বরেলীর এক সভায় অখিলেশ বলেন, ‘‘আরে, আজকাল গাধার বিজ্ঞাপন দেখা যায়। আপনারাই বলুন, গাধার কখনও বিজ্ঞাপন হয়? এই শতাব্দীর সবচেয়ে বড় মহানায়কের কাছে আমার অনুরোধ, গাধাদের বিজ্ঞাপন করবেন না।’’
আরও পড়ুন:
অন্য অস্ত্র অকেজো, ভরসা মেরুকরণই
ভারতের রাজনৈতিক লড়াইয়ে জীবজন্তুকে নিয়ে টানাটানি নতুন নয়। মোদীর বিক্রমের কথা বলতে গিয়ে সিংহ আর বাঘের কথা এসেছে। মোদী জমানায় গো-রক্ষার নামে বাড়াবাড়ি নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। বিহারের ভোটে বিজেপি হারার পরে কার্টুনে দেখা গিয়েছে গরু হাঁফ ছেড়ে বলছে, ‘‘যাক স্বস্তি পেলাম।’’ কংগ্রেস-সমাজবাদী জোটের সাংবাদিক বৈঠকে রাহুল গাঁধীকে পাশে বসিয়ে সম্প্রতি অখিলেশই বলেছেন, ‘‘মায়াবতীজিকে এই জোটে স্থান দেব কী করে? উনি বড় বেশি জায়গা নেন। দেখছেন না ওঁর দলের প্রতীক চিহ্ন হাতি।’’ কিন্তু কেউ কাউকে গাধা বলেছেন, এমন কথা স্মরণ করতে পারছেন না প্রবীণ রাজনীতিকরাও। একদা সমাজবাদী পার্টির ঘনিষ্ঠ ছিলেন অমিতাভ। তাঁর স্ত্রী জয়া এখনও সেই দলের সাংসদ। কিন্তু অমিতাভ এখন গুজরাতের বিজেপি সরকারের বিজ্ঞাপনে অন্যতম মুখ। অখিলেশ তাঁকে এই বিতর্কে টেনে আনায় বিষয়টির রাজনৈতিক তাৎপর্য বেড়েছে বলে ধারণা অনেকের।
একদা বচ্চন পরিবারের বন্ধু ও সমাজবাদী পার্টির প্রাক্তন নেতা অমর সিংহের কথায়, ‘‘অনেকেই ভুলে যান যে মোদী এখন দেশের প্রধানমন্ত্রী। সেটা কারও পছন্দ নাও হতে পারে। কিন্তু তাতে বাস্তবটা বদলায় না।’’ বিজেপি নেতা বেঙ্কাইয়া নায়ডুর মতে, ‘‘অখিলেশ হতাশ হয়ে এ সব কথা বলছেন। তিনি গুজরাতের জনতাকে অপমান করেছেন।’’ অবশ্য অন্য শিবিরের মতে, মোদী নিজেই এমন আক্রমণের পথ খুলে দিয়েছেন। তিনি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে উদ্দেশ করে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। কাল উত্তরপ্রদেশের ফতেপুরে সরাসরি সাম্প্রদায়িক তাস খেলেছেন। এ বার আক্রমণে বিরোধীরাও সেই ধরনেরই ভাষা প্রয়োগ করছেন বলে ধারণা এক প্রবীণ রাজনীতিকের। তবে অখিলেশ যে ভাবে ঘুরিয়ে নাক দেখিয়েছেন তারও তারিফ করছেন অনেকে। তাঁদের মতে, এমন পরোক্ষ আক্রমণের জবাব দেওয়াও মুশকিল। বিতর্ক হলেও আইনি ঝামেলায় পড়ার ভয় থাকে না বিশেষ।
আর গাধা? এক নেতার কথায়, ‘‘আরে মশাই, গাধারা খারাপ নয়। তাদের নিয়ে যারা টানাটানি করে তারাই আসলে গাধা।’’