Advertisement
০১ মে ২০২৪
জেএনইউ-এর তদন্ত

দেশবিরোধী স্লোগান দেয় বহিরাগতরাই

আফজল গুরুর সমর্থনে গত ৯ ফেব্রুয়ারি জেএনইউ চত্বরে দেশ বিরোধী কার্যকলাপ হয়েছিল। ওই ঘটনার জন্য দায়ী ছিল বেশ কিছু বহিরাগত, মুখ ঢাকা ব্যক্তি। তারাই পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলে স্লোগান দিয়েছিল। ঘটনার তদন্তে গঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ সদস্যের কমিটি আজ এ কথা জানিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৬ ০৩:০৫
Share: Save:

আফজল গুরুর সমর্থনে গত ৯ ফেব্রুয়ারি জেএনইউ চত্বরে দেশ বিরোধী কার্যকলাপ হয়েছিল। ওই ঘটনার জন্য দায়ী ছিল বেশ কিছু বহিরাগত, মুখ ঢাকা ব্যক্তি। তারাই পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলে স্লোগান দিয়েছিল। ঘটনার তদন্তে গঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ সদস্যের কমিটি আজ এ কথা জানিয়েছে। যাকে নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক, সেই ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমার সম্পর্কে কমিটির বক্তব্য, অনুষ্ঠান শুরুর অনেক পরে তিনি এসেছিলেন। তবে কানহাইয়া দেশবিরোধী স্লোগান দিয়েছেন, তার প্রমাণ নেই। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই অনুষ্ঠানের পক্ষেই ছিলেন তিনি।

সংসদে হামলাকারী আফজল গুরুর সমর্থনে ৯ ফেব্রুয়ারি একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় জেএনইউ চত্বরে। অভিযোগ সেখানে ভারত বিরোধী স্লোগান ওঠে। রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেফতার হন জেএনইউয়ের ছাত্র সংসদের সভাপতি কানহাইয়া কুমার, উমর খালিদ ও অর্নিবাণ ভট্টাচার্যরা। কানহাইয়া জামিন পেলেও বাকি দু’জন জেলে ।

ওই ঘটনায় ছাত্রদেরই পরোক্ষে দায়ী করা হয়েছে রিপোর্টে। বলা হয়েছে, দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, ছাত্রদের সাহায্যেই বহিরাগতরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে পেরেছিল। শোনা গিয়েছিল, পাকিস্তান জিন্দাবাদ-এর মতো স্লোগান। রিপোর্ট বলছে, মুজিব গাট্টো ও মহঃ কাদির নামে দু’জন ছাত্রকে বহিরাগতদের খুব কাছাকাছি দেখা গিয়েছে। সূত্রের খবর, উমর ঘনিষ্ঠ ওই দুই ছাত্রের প্রশ্রয়ে সে দিন বহিরাগতরা ভিতরে ঢুকেছিল। এই ঘটনার পরে বিজেপির অভিযোগ ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ভারতকে টুকরো টুকরো করে দাও’-এর মতো স্লোগানও শোনা গিয়েছে। রিপোর্টে এ নিয়ে অবশ্য উচ্চবাচ্য করা হয়নি। রিপোর্টকে মোট পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। অনুষ্ঠান, শোভাযাত্রা, স্লোগান, প্রশাসনিক গাফিলতি ও সুপারিশ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাকেশ ভাটনাগরের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের কমিটির রিপোর্টে সমালোচিত ছাত্র উমর খালিদের ভূমিকা। বলা হয়েছে, অনুমতি বাতিলের সিদ্ধান্ত জানানো হলে খালিদ বলেছিলেন, অনুষ্ঠান তারা করবেনই। নিরাপত্তারক্ষীরা যা করার করুক। কর্তৃপক্ষের অনুষ্ঠান বাতিল করার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন কানহাইয়াও। তদন্ত কমিটি মনে করেছে, ছাত্রদের এই মনোভাব অবাধ্যতা ছাড়া আর কিছু নয়।

নিরাপত্তা কর্মীদের দিকেও আঙুল তোলা হয়েছে। প্রশ্ন তোলা হয়েছে, বহিরাগতদের জমায়েত সত্ত্বেও তারা কেন ব্যবস্থা নেয়নি। ওই অনুষ্ঠানের অনুমতি চাওয়ার পরে কেন বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হল না, প্রশ্ন তা নিয়েও। এ ক্ষেত্রে সমালোচিত হয়েছে ডিন অফ স্টুডেন্টস-র ভূমিকাও। অনুষ্ঠানের অনুমতি বাতিলের বিষয়টি নিয়ে তিনি ই-মেল করার পরিবর্তে মুখ্য নিরাপত্তা আধিকারিকের মোবাইলে এসএমএস করে ছেড়ে দিয়েছিলেন। এই গা-ছাড়া মনোভাবের উল্লেখ রয়েছে তদন্ত রিপোর্টে।

রিপোর্টে ছাত্র ইউনিয়নের মনোভাবেরও সমালোচনা করা হয়েছে। ছাত্রদের রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলা উচিত ছিল বলেই মনে করছে কমিটি। তাঁদের মতে, এমন তো ঘটেইনি, উল্টে অনুষ্ঠানের পক্ষে ও বিপক্ষে থাকা শিবির সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। শুরু থেকেই কানহাইয়া, উমর খালিদরা অনুষ্ঠানের পক্ষে ছিলেন। বিপক্ষে ছিলেন বিজেপি সমর্থিত এভিবিপি-র ছাত্র নেতারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই সংগঠনের ছাত্র নেতা সৌরভ শর্মা সে দিনের অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে থাকলেও রিপোর্টে তার ভূমিকারও সমালোচনা করা হয়েছে। যে ভাবে তিনি রাস্তা অবরোধ করেছিলেন, তাতে আইন ভঙ্গ হয়েছে মনে করে তাঁকেও নোটিস পাঠিয়েছে কমিটি।

রিপোর্টটিতে ২১ জনকে অভিযুক্ত দেখানো হলেও সে ক্ষেত্রে কী সুপারিশ করা হয়েছে তা অভিযুক্তদের জানানো হয়নি। সূত্রের খবর, ঘটনার জন্য কানহাইয়া-সহ পাঁচ জনকে বহিষ্কােরর সুপারিশ করা হয়েছে। যদিও এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। কানহাইয়াদের শো-কজ করা হয়েছে। জবাব মেলার পরেই বিশ্ববিদ্যালয় পরের পদক্ষেপ করবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE