Advertisement
২১ মে ২০২৪
স্বস্তি উড়িয়ে টানা লড়াই

গ্রেনেড-গুলি ধোঁয়াশায় রুদ্ধ পাঠানকোট

শনিবার ভোর রাত থেকে শুরু হয়েছিল। ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে রবিবার গভীর রাতেও ঘন ঘন বোমা-গুলির শব্দে থেকে থেকেই কেঁপে উঠেছে পাঠানকোট বিমানঘাঁটি! ভিতরে ও বাইরে!

যুদ্ধ জারি। পাঠানকোটের বায়ুসেনা ঘাঁটির সামনে দুই জওয়ান। রবিবার। ছবি: এপি

যুদ্ধ জারি। পাঠানকোটের বায়ুসেনা ঘাঁটির সামনে দুই জওয়ান। রবিবার। ছবি: এপি

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৬ ০৪:০৬
Share: Save:

শনিবার ভোর রাত থেকে শুরু হয়েছিল। ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে রবিবার গভীর রাতেও ঘন ঘন বোমা-গুলির শব্দে থেকে থেকেই কেঁপে উঠেছে পাঠানকোট বিমানঘাঁটি! ভিতরে ও বাইরে!

প্রায় দু’দিন ধরে সেনা অভিযানের পরেও সব জঙ্গি খতম হয়েছে কি না, সেই প্রশ্নটাই এখন সবচেয়ে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। যে কারণে রবিবার সন্ধ্যায় খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজীব মহর্ষিকে সাংবাদিক বৈঠক করে বলতে হয়েছে, ‘অপারেশন এখনও জারি রয়েছে। চলবে কাল সকাল পর্যন্ত।’ অর্থাৎ জঙ্গি-নিকেশ নিয়ে ধোঁয়াশা বহাল পূর্ণমাত্রায়!

ধোঁয়াশার সূত্রপাত শনিবার রাতে। পাঠানকোট বায়ুসেনা ঘাঁটিতে নিরাপত্তাবাহিনীর হাতে পাঁচ জঙ্গি খতম হয়েছে বলে রাতে টুইটারে লেখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। কিন্তু রাত একটু বাড়তেই সেই টুইট মুছে দেওয়া হয়! সূত্রের খবর, তখনই বোঝা গিয়েছিল, হামলা চালাতে আসা সব জঙ্গিকে নিকেশ করা যায়নি। তবে রাতের অন্ধকারে ক্ষয়ক্ষতি বাড়ার আশঙ্কায় সাময়িক ভাবে অভিযানে রাশ টানা হয়েছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েও এমন ধোঁয়াশা তৈরি করায় আজ কড়া সমালোচনার মুখে পড়েন রাজনাথ।

সকাল থেকে জোর কদমে অভিযানে নামে সেনাবাহিনীও। এলাকা ঘিরে নতুন করে তল্লাশি শুরু হয়। তখনই প্রথম বিপত্তি! সূত্রের খবর, কাল গুলির লড়াইয়ে হত এক জঙ্গির দেহ থেকে গ্রেনেড নিয়ে নষ্ট করতে গিয়ে হঠাৎ বিস্ফোরণে মারা যান এনএসজি-র বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াডের লেফটেন্যান্ট কর্নেল নিরঞ্জন। আহত আরও চার জওয়ান। মন্ত্রকের বক্তব্য, জঙ্গিদের পাতা ফাঁদে পা দিয়েই ওই বিস্ফোরণ। সব মিলিয়ে এই অপারেশনে সাত জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে। নিরঞ্জন ছাড়া বাকি ছ’জন বায়ুসেনা। আহত কুড়ি জন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, গ্রেনেড বিস্ফোরণের কিছু পরেই ফের গুলির শব্দে কেঁপে ওঠে বায়ুসেনা ঘাঁটি। জওয়ানদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়, কোথায় শত্রু লুকিয়ে রয়েছে। রাজীব মহর্ষি পরে বলেন, ‘‘দু’টি জায়গা থেকে গুলি আসছে দেখেই মোটামুটি বোঝা যায় যে, আরও দু’জন জঙ্গি লুকিয়ে রয়েছে।’’ ফের শুরু হয় গুলির লড়াই। সন্ধ্যায় বাহিনীর পক্ষে জানানো হয়, এক জঙ্গি খতম হয়েছে। আর দ্বিতীয় জঙ্গি এখনও লুকিয়ে আছে না ধরা পড়েছে না নিকেশ হয়েছে, সে বিষয়ে মুখে কুলুপ সরকারের। রাতে একটি সূত্রে খবর মেলে, ওই জঙ্গিকে আটক করেছেন জওয়ানেরা। সরকারি সূত্রে অবশ্য রাত পর্যন্ত খবরটি স্বীকার করা হয়নি। অর্থাৎ আরও এক দফা সংশয়!

প্রশ্নবাণ সামাল দিতেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মহর্ষি, সঙ্গে এয়ার মার্শাল অনিল খোসলা। প্রথম থেকেই তাঁদের দাবি, জঙ্গিরা টেকনিক্যাল এরিয়ার কোনও ক্ষতি করতে পারেনি। এটা নিরাপত্তাবাহিনীর বড় সাফল্য।

সরকার যাই বলুক, পাঠানকোটের হামলা কিন্তু একাধিক প্রশ্ন তুলছে।

প্রথমত- পুলিশ সুপারের গাড়ি ছিনতাই ও বায়ুঘাঁটিতে হামলার মধ্যে ব্যবধান প্রায় এক দিনের। এবং শুক্রবার দুপুর থেকেই বিষয়টি দেখার দায়িত্ব নেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। তা সত্ত্বেও কেন হামলার আগে ধরা গেল না জঙ্গিদের? কেন এসপির গাড়ির খোঁজ মিলল না দীর্ঘক্ষণ? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আঙুল অবশ্য পঞ্জাব পুলিশের গোয়েন্দাদের দিকে।

দ্বিতীয়ত-পাঠানকোটে ঢুকেছে জেনেও কেন সেনাঘাঁটিতে ঢোকার আগেই জঙ্গিদের থামানো গেল না? কেন এড়ানো গেল না এত মৃত্যু? এয়ার মার্শালের দাবি, ‘‘আক্রমণ পাঠানকোটের কোথায় হবে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্য ছিল না।’’ সূত্রের দাবি, বায়ুসেনা ঘাঁটির সীমানা-পাঁচিল ৫০০ মিটার ভাঙা রয়েছে। জঙ্গিরা ওই অংশটিই ব্যবহার করেছিল। আর মৃত্যু? মহর্ষির দাবি, ‘‘লড়াই হলে ক্ষয়ক্ষতি হবেই!’’

তৃতীয়ত-থার্মাল ইমেজিং ও ড্রোনের মাধ্যমে জঙ্গিরা যে ঘাঁটির ভিতরে ঢুকেছে, সেটা জানার পরেও তাদের নিকেশ করতে কেন এত সময় লাগল? খোসলার দাবি, ‘‘রাতে জঙ্গি আর সেনার পার্থক্য করা কঠিন। জঙ্গিরা যেখান দিয়ে ঢোকে, সে দিকে জঙ্গল। তাই স্পষ্ট ছবিও মেলেনি।’’

চতুর্থত- ধোঁয়াশা জঙ্গি সংখ্যা নিয়েও। পুলিশ সুপার সালবিন্দর সিংহ জঙ্গিদের কবল থেকে মুক্তি পেয়ে জানিয়েছিলেন, সেনা পোশাকে ছ’জন জঙ্গি রয়েছে। তা হলে গত কাল চার জঙ্গির মৃত্যুর খবর পেতেই কেন বলা হল অপারেশন শেষ? মহর্ষির জবাব, ‘‘অভিযান শেষ হয়েছিল, এমন তথ্য সঠিক নয়। আমরা জেনেছিলাম, জঙ্গিদের সংখ্যা ৪ থেকে ৬-এর মধ্যে। চার জনের মৃতদেহ হাতে পেয়ে বাকিদের খোঁজ শুরু হয়। তখনই আরও দু’জনের কথা জানতে পারি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE