Advertisement
১১ মে ২০২৪

গ্রাহক পেলেন একশোয় অন্তত ষাট! আর ব্যাঙ্ক মেরেকেটে চল্লিশ

জনতা ৬০, ব্যাঙ্ক ৪০। নোটবদল পর্বের প্রথম দিনে এই হল সংক্ষিপ্ত স্কোর কার্ড। যেখানে গ্রাহক সসম্মানে উতরোলেও ব্যাঙ্ক পাশ করেছে টেনেটুনে!

নোট বদলের লম্বা লাইন সল্টলেকের ব্যাঙ্কে। বৃহস্পতিবার স্নেহাশিস ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।

নোট বদলের লম্বা লাইন সল্টলেকের ব্যাঙ্কে। বৃহস্পতিবার স্নেহাশিস ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৪
Share: Save:

জনতা ৬০, ব্যাঙ্ক ৪০। নোটবদল পর্বের প্রথম দিনে এই হল সংক্ষিপ্ত স্কোর কার্ড। যেখানে গ্রাহক সসম্মানে উতরোলেও ব্যাঙ্ক পাশ করেছে টেনেটুনে!

পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট বাতিল হওয়ার পরে ব্যাঙ্ক প্রথম খুলেছিল বৃহস্পতিবার। বাতিল নোট জমা ও নতুন ব্যবস্থায় টাকা তোলার প্রথম দিনে কী হবে, তা ভেবে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষেরা যথেষ্ট উদ্বেগে ছিলেন। এমনকী, গোলমালের আশঙ্কায় বুধবার রাজ্য পুলিশের ডিজি ও কলকাতার পুলিশ কমিশনারের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাঁরা। কর্তাদের বক্তব্য ছিল, কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঠেকাতে পুলিশ যেন তৎপর থাকে।

তবে এ দিন দেখা গেল, যাঁদের নিয়ে ব্যাঙ্ককর্তাদের দুর্ভাবনা, সেই গ্রাহকেরাই ওঁদের চিন্তা দূর করে দিলেন। প্রত্যাশিত ভাবেই এ দিন ভোর থেকে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সামনে লম্বা লাইন পড়েছিল। অনেক ব্যাঙ্কে টাকা এসেছে দেরিতে। কোথাও টাকা তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে গিয়েছে। কোথাও চলেছে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পালা। তবু মানুষ ধৈর্য্য হারাননি। সামান্য কিছু খুচখাচ গোলমাল ছাড়া কোথাও তেমন অশান্তির খবর নেই। বস্তুত যে অশান্তির আশঙ্কায় ব্যাঙ্ককর্তারা কাঁটা হয়ে ছিলেন, গ্রাহকেরাই তাতে জল ঢেলে দিনের শেষে হাসি ফুটিয়ে গিয়েছেন তাঁদের মুখে।

এবং ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষের আশ্বাস, বৃহস্পতিবার যে সব ভুলত্রুটি ধরা পড়েছে, সেগুলো শুধরে নেওয়ার চেষ্টায় ত্রুটি হবে না। ‘‘অনেক ক্ষেত্রে সত্যিই আমাদের ত্রুটি ছিল। কিন্তু গ্রাহকেরা অসম্ভব ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েছেন।’’— বলছেন বিবাদী বাগের এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার। পাশাপাশি ব্যাঙ্ককর্তারা জানাচ্ছেন, সোমবার গুরু নানকের জন্মদিন উপলক্ষ্যে ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকলেও মানুষের সমস্যা হবে না। কারণ, শনিবার (সেকেন্ড স্যাটারডে) ও রবিবার ব্যাঙ্ক খোলা থাকছে। উপরন্তু আজ, শুক্রবার থেকে অনেক এটিএমে টাকা পাওয়া যেতে পারে। অন্তত বিভিন্ন ব্যাঙ্কের কর্তৃপক্ষের কথায় তারই আভাস।

সেটা হলে ব্যাঙ্কের উপরে চাপ কিছুটা হলেও কমবে বলে কর্তারা আশাবাদী। মঙ্গলবার অবশ্য দিল্লি জানিয়েছিল, বৃহস্পতিবার কিছু কিছু এটিএম কাজ শুরু করবে। কিন্তু এ দিন রাজ্যের কোথাও কোনও এটিএমে টাকা তোলা যায়নি। গাড়ি এসে কয়েকটি এটিএম থেকে পুরনো নোট নিয়ে গিয়েছে, কোনও এটিএমে টাকা ভরে গিয়েছে। ব্যাঙ্কিং মহলের মতে, ব্রাঞ্চ লাগোয়া এটিএমগুলোই চালু করার চেষ্টা হবে প্রথমে। সমস্ত এটিএম পুরোমাত্রায় স্বাভাবিক কাজ শুরু করতে বেশ ক’দিন লাগবে বলে এই মহলের অনুমান।

এ দিন ডাকঘরেও পুরনো নোট জমা ও বদলের কথা ছিল। কোনও পোস্ট অফিসে অল্প সময়ে টাকা শেষ, কোথাও টাকা পাল্টানো যায়নি। তবে পরিস্থিতি কোথাওই হাতের বাইরে যায়নি। ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্কেলের চিফ পোস্ট মাস্টার জেনারেল (সিপিএমজি) অরুন্ধতী ঘোষ বলেন, ‘‘আমাদের কাছে যতক্ষণ টাকা ছিল, দিয়েছি। নগদের জন্য আমরা স্টেট ব্যাঙ্কের (এসবিআই) উপরে নির্ভরশীল।’’ সিপিএমজি’র হিসেবে, কলকাতার বিভিন্ন ডাকঘরে সকালের কয়েক ঘণ্টায় প্রায় ৬০-৭০ লক্ষ টাকার বাতিল নোট বদল হয়েছে। জমাও হয়েছে। সিপিএমজি রাতে জানান, এ দিন গোটা রাজ্যের পোস্ট অফিসে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার পুরনো নোট বদলানো হয়েছে। নগদের জোগান কি কিছুটা বাধা পেয়েছে?

মাথায় রাখুন

• নোট বদল ও অ্যাকাউন্টে টাকা জমা— দু’ক্ষেত্রেই সচিত্র পরিচয়পত্র চাইছে অনেক ব্যাঙ্ক। তা সঙ্গে রাখুন। বেশি সংখ্যায় তা ফোটোকপি করিয়ে রাখাই সুবিধাজনক

• এই তালিকায় আছে প্যান কার্ড, আধার কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ভোটার আইডি কার্ড, পাসপোর্ট, এনরেগা কার্ড, সরকারি কর্মীদের পরিচয়পত্র

• ফোটোকপিতে লিখুন তা জমা দেওয়ার কারণ (নোট বদল বা টাকা জমা)। ছবির গা ঘেঁষে সই করতেও ভুলবেন না। যাতে তা অন্য কেউ ব্যবহার করতে না পারেন

• আজ সম্ভবত খুলছে ব্যাঙ্কের শাখা লাগোয়া এটিএমগুলি। বাকিগুলিও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খোলার চেষ্টা করছে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক

এসবিআইয়ের ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্কেলের চিফ জেনারেল ম্যানেজার পার্থপ্রতিম সেনগুপ্তের ব্যাখ্যা, ‘‘টাকা এসেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে। যেখানে সরবরাহ ঠিকঠাক ছিল, সেখানকার ডাকঘরেও পর্যাপ্ত টাকা গিয়েছে। পার্থবাবুর আশ্বাস, ‘‘রিজার্ভ ব্যাঙ্ক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। দু’-এক দিনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’’ আঞ্চলিক রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সূত্রের ভরসা— এ দিন সন্ধে থেকে টাকার জোগান বাড়ানো হয়েছে।

অন্য দিকে দু’হাজার টাকার নতুন নোট পেয়ে চিন্তায় পড়েছেন অনেকে। বুঝে উঠতে পারছেন না, কী ভাবে ভাঙানো যাবে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক তাঁদের বলছে, আতঙ্কিত হবেন না। দিল্লির যুক্তি— বাজারে একশোর নোট যথেষ্ট। পাঁচশোর নতুন নোটও আসছে। এসবিআইয়ের চেয়ারপার্সন অরুন্ধতী ভট্টাচার্য মনে করেন, অনেক ক্ষেত্রে দু’হাজারি নোট ভাঙানোরই দরকার পড়বে না। ‘‘কারণ, এখন যে কোনও সংসারে মুদি দোকানের মাসকাবারি বিলই দু’হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়।’’— মন্তব্য তাঁর।

তবে সংশয়, অপেক্ষা, বা হতাশা সত্ত্বেও এ দিন আমজনতা যে ভাবে ধৈর্যের নমুনা দেখিয়েছেন, বিভিন্ন ব্যাঙ্কের উঁচু মহল তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ‘জনগণেশের’ এই মনোভাবকেই দু’হাত তুলে স্বাগত জানাচ্ছেন ব্যাঙ্ককর্তারা। ওঁদের উপলব্ধি, ‘‘কাস্টমার সহযোগিতা না-করলে ব্যাপারটা চলতই না।’’

আজ দ্বিতীয় দিনের পরীক্ষায় ব্যাঙ্ক কতটা সম্মান রাখতে পারে, গ্রাহক তা দেখার অপেক্ষায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

modi Bank People Money Exchange
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE