Advertisement
E-Paper

দলিত দুর্গে ঝড়, ঠেকাতে মরিয়া মোদী

দলিত-দুর্গে আচমকা তুফান কাঁপিয়ে দিচ্ছে বিজেপিকে। উত্তরপ্রদেশে যাঁদের সমর্থন পেতে দু’বছর ধরে যাবতীয় চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন অমিত শাহ, তাঁরাই বেঁকে বসেছেন। তাই ঘর সামলাতে এখন মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৬ ০৩:৪৫
বিজেপির বিরুদ্ধে বিএসপির বিক্ষোভ। বৃহস্পতিবার লখনউয়ে। ছবি: এপি।

বিজেপির বিরুদ্ধে বিএসপির বিক্ষোভ। বৃহস্পতিবার লখনউয়ে। ছবি: এপি।

দলিত-দুর্গে আচমকা তুফান কাঁপিয়ে দিচ্ছে বিজেপিকে। উত্তরপ্রদেশে যাঁদের সমর্থন পেতে দু’বছর ধরে যাবতীয় চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন অমিত শাহ, তাঁরাই বেঁকে বসেছেন। তাই ঘর সামলাতে এখন মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহরা।

লোকসভা ভোটে উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব পেয়েছিলেন অমিত শাহ। রীতিমতো পরিকল্পনা করে দলিত নেত্রী মায়াবতীর রাজনৈতিক ভিত নড়িয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। সেখানে হিন্দু ভোটের ভাগাভাগি আটকে দলিত ও উচ্চবর্ণের ভোটকে বিজেপির ঝুলিতে নিয়ে আসাই ছিল তাঁর প্রধান কৌশল। ফলও মিলেছিল। রাজ্যের ৮০টি লোকসভা আসনের ৭২টিতেই জিতেছিল বিজেপি। মায়াবতী ফিরেছিলেন শূন্য হাতে। কিন্তু সেই দলিত-দুর্গ আচমকাই কেঁপে উঠেছে। বিজেপি নেতা দয়াশঙ্কর সিংহ দলিত নেত্রী মায়াবতীর বিরুদ্ধে যে কুকথা বলেছেন, তাতে উত্তরপ্রদেশের দলিতদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলেই আশঙ্কা করছেন দলের শীর্ষ নেতারা।

রোহিত ভেমুলা কাণ্ডের পরে গুজরাতের উনায় দলিত নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে। ফলে এমনিতেই প্রবল সমস্যায় দিন কাটছে বিজেপির। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো নতুন সঙ্কট এসেছে উত্তরপ্রদেশে। তা-ও আবার এমন সময়ে যখন বিধানসভা ভোটের উত্তেজনা শুরু হয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে তাই নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহকেই ফের মাঠে নামতে হচ্ছে। শুক্রবার উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরে জনসভা করতে যাচ্ছেন মোদী। যেখানে দলিতদের হাজির করে মন জয়ের চেষ্টা হবে। আগামী সপ্তাহে অমিত শাহও আগরায় জনসভা করবেন। দলিতদের কাছে পৌঁছনোই তাঁর লক্ষ্য।

উত্তরপ্রদেশে দলিত ভোট-ব্যাঙ্ক ধরে রাখতে মোদী-অমিত শাহের এই উদ্বেগের যথেষ্ট কারণও রয়েছে। কেননা, লোকসভায় ভাল ফল করার পরেও মায়াবতীর দলিত ভোটব্যাঙ্ক নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া গিয়েছে ভেবে হাত গুটিয়ে বসে থাকেননি অমিত। এর পরে লখনউয়ের কুর্সি দখল করতে স্বামীপ্রসাদ মৌর্য্যর মতো মায়াবতীর দলের বড় নেতাদের ভাঙিয়ে আনা, সমর্থন তৈরি করতে দলিতদের বাড়িতে গিয়েও খাওয়াদাওয়াও করেছেন অমিত।

উত্তরপ্রদেশের ভোটের ঠিক ছয় মাস আগে, এই গোটা প্রচেষ্টায় জল ঢেলে দিলেন দয়াশঙ্কর। গত কাল তিনি মায়াবতীর বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে টিকিট দেওয়ার অভিযোগ তুলে তাঁকে যৌনকর্মীর সঙ্গে তুলনা করেন। বিজেপি প্রথমে তাঁকে শুধু সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নিলেও পরে চাপের মুখে বহিষ্কার করেছে। অরুণ জেটলি থেকে রাজনাথ সিংহ, কলরাজ মিশ্রের মতো নেতারা এ জন্য রীতিমতো ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু বিজেপি নেতারা মনে করছেন, দয়াশঙ্কর রীতিমতো হাতে করে মায়াবতীকে ঘুরে দাঁড়ানোর মঞ্চ তৈরি করে দিয়েছেন। দলিতদের নিয়ে নানা ঘটনাকে হাতিয়ার করে পুরনো ভোটব্যাঙ্ক মজবুত করতে মাঠে নেমে পড়েছেন মায়াবতী। নতুন করে রাজনৈতিক অক্সিজেন পেয়ে গিয়ে বিএসপি নেত্রী আজ মন্তব্য করেছেন, ‘‘দলিতরা আমাকে দেবীর মতো শ্রদ্ধা করেন।’’ মোদী জমানায় দলিতদের উপর নির্যাতন বাড়ছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন তিনি।

বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন, ভেমুলার আত্মহত্যায় মোদী সরকারের বিরুদ্ধে দলিতদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি করেছিল। লখনউয়ের অম্বেডকর বিশ্ববিদ্যালয়ে রোহিত সম্পর্কে মোদীর আবেগঘন মন্তব্যে সেই ক্ষোভ কমে। তবে ক্রমশই সরকারের মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি দলিত-বিরোধী মুখ হয়ে উঠেছিলেন। তাঁকে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক থেকে সরানোয় কাজ হয়েছিল। দলিত নেতা কেশবপ্রসাদ মৌর্য্যকে উত্তরপ্রদেশের রাজ্য সভাপতি করা হয়। কিন্তু সব ভেস্তে দিলেন সদ্য-প্রাক্তন সহ-সভাপতি দয়াশঙ্কর। এ সবের মধ্যেই আজ মোদীর ‘গুজরাত মডেল’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেস নেতা আহমেদ পটেল। কটাক্ষ করেছেন গুজরাতে দলিত নিগ্রহে মোদীর নীরবতা নিয়েও।

দয়াশঙ্করকে বিজেপি প্রথমে সাসপেন্ড করেছিল। কেন বহিষ্কার করা হচ্ছে না, তা নিয়ে রাজনাথ সিংহ, কলরাজ মিশ্ররা ক্ষোভ জানান। ঘরে-বাইরে চাপের মুখে বুধবার রাতে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু দয়াশঙ্কর উচ্চবর্ণের ঠাকুর নেতা। ফলে ঠাকুর নেতাদের মধ্যে কী ভাবে অসন্তোষ সামাল দেওয়া হবে, তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে। মায়াবতী প্রশ্ন তুলেছেন, বিজেপি দয়াশঙ্করের বিরুদ্ধে এফআইআর করল না কেন? অখিলেশ-সরকার অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে তফসিলি জাতি নির্যাতন আইনে মামলা করেছে। তবে তাঁকে এখনও গ্রেফতার করেনি পুলিশ।

Modi dalit gujrat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy