Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বেজিংকে পেতে বুদ্ধ শরণে প্রণব

বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি। কমিউনিস্ট রাষ্ট্র চিনের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রশ্নে আজ বুদ্ধ-কূটনীতিকে সামনে নিয়ে এল ভারত। চিন সভ্যতার অন্যতম প্রতীক, প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরনো হুয়ালিন মন্দিরে গিয়ে আজ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ভারতীয় রাষ্ট্রপতি। ভারত-চিন সাংস্কৃতিক যোগাযোগকে গুরুত্ব দিতে একটি বিশেষ বৌদ্ধমূর্তিও তিনি স্থাপন করেন মন্দির চত্বরে। তাঁর সফরের বেশ কিছু দিন আগে থেকেই চার ফুট উচ্চতার এবং ৪০ কিলোগ্রাম ওজনের এই মূর্তিটি তৈরির কাজ চলছিল বলে জানা গিয়েছে।

হুয়ালিন মন্দিরে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

হুয়ালিন মন্দিরে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

অগ্নি রায়
গুয়ানঝাও শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৬ ০৩:২১
Share: Save:

বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি।

কমিউনিস্ট রাষ্ট্র চিনের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রশ্নে আজ বুদ্ধ-কূটনীতিকে সামনে নিয়ে এল ভারত। চিন সভ্যতার অন্যতম প্রতীক, প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরনো হুয়ালিন মন্দিরে গিয়ে আজ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ভারতীয় রাষ্ট্রপতি। ভারত-চিন সাংস্কৃতিক যোগাযোগকে গুরুত্ব দিতে একটি বিশেষ বৌদ্ধমূর্তিও তিনি স্থাপন করেন মন্দির চত্বরে। তাঁর সফরের বেশ কিছু দিন আগে থেকেই চার ফুট উচ্চতার এবং ৪০ কিলোগ্রাম ওজনের এই মূর্তিটি তৈরির কাজ চলছিল বলে জানা গিয়েছে।

কথিত, ষষ্ঠ শতকে ভারত থেকে বিশ্বের এই প্রান্তে এসেছিলেন বৌদ্ধ ভিক্ষু বোধিধর্ম। গুয়ানঝাওয়ের মানুষকে শেখাতে শুরু করেছিলেন আত্মরক্ষার্থে ব্যবহৃত প্রাচীন মার্শাল আর্ট— কুংফু। ধীরে ধীরে এখানে মন্দিরটি গড়ে ওঠে। এখান থেকেই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে বৌদ্ধধর্মের প্রসার ও চর্চা। ১৯৬৬-৭৬ সালের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয় হুয়ালিন। সম্রাট অশোকের নামাঙ্কিত একটি প্যাগোডা ভেঙে দেওয়া হয়। আর আজ এই মন্দির এ দেশের বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের কাছে খুব পবিত্র স্থান।

আজ রাষ্ট্রপতির হুয়ালিন সফর এবং চিনের কমিউনিস্ট পার্টির
সেক্রেটারি হু চুয়ানহুয়ার সঙ্গে তাঁর বৈঠক, এই দু’টি কর্মসূচি সেরে বেজিংয়ের বিমান ধরেন প্রণববাবু। তার আগে সফরসঙ্গী বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর বলেন, “আজ রাষ্ট্রপতি এবং চিনের কমিউনিস্ট পার্টির সেক্রেটারির মধ্যে আলোচনায় আর্থিক নীতি, কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কথা হয়েছে দু’দেশের সাংস্কৃতিক যোগাযোগে আরও মজবুত করা নিয়েও।’’

বুদ্ধের শরণাপন্ন হয়ে ইন্দো-চিন সম্পর্কে নতুন ঢেউ আনার চেষ্টা কিন্তু এই প্রথম নয়। ২০০৫ সালে দু’দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব স্থির করেন, চিনের লুয়ুযাঙ্গ শহরে সুপ্রাচীন হোয়াইট হর্স বৌদ্ধ মঠে মধ্যপ্রদেশের সাঁচি স্তূপের ধাঁচে একটি স্তূপ নির্মাণ করবে ভারত। ২০১০-এর মে মাসে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিল এসে বৌদ্ধস্তূপটির উদ্বোধন করেন। খ্রিস্টের জন্মের ৬৮ বছর আগে মিং রাজত্বের সময় ভারত থেকে আসা দুই ভিক্ষু— ধর্মারত্ন ও কাশ্যপ মাতঙ্গের বসবাসের জন্য এই মঠটি তৈরি হয়েছিল। পি ভি নরসিংহ রাও থেকে অটলবিহারী বাজপেয়ী— ভারতের প্রধানমন্ত্রীরা বিভিন্ন সময়ে এসে এখানে শ্রদ্ধা জানিয়ে গিয়েছেন।

আজ চিনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব এই ঐতিহ্য যে শুধু সংরক্ষণ করছে তাই-ই নয়, তাকে কাজে লাগাচ্ছে নিজের দেশের সাংস্কৃতিক বিপণন, পর্যটক টানা এবং কূটনৈতিক অস্ত্র হিসেবেও। আজ গুয়ানদং রাজ্যের গভর্নর একটি মূর্তি উপহার দিয়েছেন প্রণববাবুকে সেটি বুদ্ধের নয়। ইনি সউ
জিং— চিনের আয়ুর দেবতা, হাতে পিচ ফল। চিনে পিচ ফল আয়ুর প্রতীক।

এ দিন প্রাচীন সমুদ্র যোগাযোগের কথাও তুলে ধরেছেন রাষ্ট্রপতি। ভারত-চিন বাণিজ্য মঞ্চে দাঁড়িয়ে আজ তিনি বলেন, “ভারত এবং চিনের মধ্যে আজ যে আর্থিক যোগাযোগ রয়েছে তার গোড়াপত্তন হয়েছিল সুদূর অতীতে। হান সাম্রাজ্যের সময়কার গ্রন্থ হান সু-এ আমরা দেখতে পাই এই গুয়ানদং ও কাঞ্চিপুরমের মধ্যে সরাসরি সমুদ্র যোগাযোগ ছিল। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রেও চিনে সিল্কের উল্লেখ রয়েছে।” ইতিহাস ও ধর্মীয় যোগাযোগের বাতাবরণ তৈরি করার পরে সরাসরি তিনি বলেন, “ভারতীয় পণ্যের জন্য চিনের বাজার আরও খোলা হোক এটাই দেখতে চাই আমরা। বিশেষ করে তথ্য প্রযুক্তি, ওষুধ শিল্প, কৃষিপণ্যের মত ক্ষেত্রে যেখানে ভারতীয়দের শ্রেষ্ঠত্ব সহজাত।” জবাবে চিনা কাউন্সিল ফর প্রোমোশন অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রে়ড-এর চেয়ারম্যান জিয়াং জেঙ্গুই জানান, ভারতীয় পণ্যকে চিনের বাজারে আরও বেশি জায়গা দেওয়ার জন্য সক্রিয় রফতানি নীতি গঠনের কথা ভাবছে বেজিং।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

president usa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE