মধ্যমণি: নীতি আয়োগের পরিচালন পর্ষদের বৈঠকে নরেন্দ্র মোদী। রবিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই
দলকে বলেছেন। আমলাদের বলেছেন। ২০২২-এ, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে তাঁর স্বপ্নের ‘নতুন ভারত’ গড়তে এ বারে বিরোধী দলের মুখ্যমন্ত্রীদেরও ডাক দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
উত্তরপ্রদেশে বিপুল জয়ের পরেই প্রধানমন্ত্রীর মুখে ২০২২ সালের ‘নতুন ভারত’ গড়ার কথা প্রথম শোনা গিয়েছিল। সেই সময় রাজধানীর অলিন্দে এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। অনেকেই বলতে থাকেন, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে জয় নিয়ে কি তা হলে নিশ্চিত মোদী? সে কারণেই ২০২২-এর ‘রোডম্যাপ’ বানিয়ে এখন থেকে স্বপ্ন ফিরি করছেন? আজ নীতি আয়োগের পরিচালন পর্ষদের বৈঠকে দলমত নির্বিশেষে সব মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সেই স্বপ্নই সামনে আনলেন মোদী। বারবার বললেন, সকলের মিলিত ‘টিম ইন্ডিয়া’ই পারে ২০২২-এর স্বপ্নপূরণ করতে। মোদী অবশ্য এখানেই থেমে থাকেননি। নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান অরবিন্দ পানাগড়িয়াকে দিয়ে আগামী ৩ বছরের অ্যাকশন প্ল্যান, ৭ বছরের রণনীতি আর ১৫ বছরের ভিশনও পেশ করালেন বৈঠকে।
প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসার আগে থেকে তো বটেই, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেও গোড়ার দিকে কিছু দিন যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো মেনে চলার কথা বলতেন মোদী। কিন্তু দিন যত গড়িয়েছে, ততই ক্ষমতা নিজের হাতে কেন্দ্রীভূত করার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। বিরোধীরা বারবার সরব হয়েছেন। সামনে বড় কোনও নির্বাচন নেই। এমনই একটি সময় মোদী সব মুখ্যমন্ত্রীকে পাশে টেনে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগটি সুকৌশলে মেরামত করতে চাইলেন। বোঝাতে চাইলেন, যে কেন্দ্র-রাজ্য সুসম্পর্কের কথা বলে তিনি ইনিংস শুরু করেছিলেন, আজও সেখানেই রয়েছেন।
এ দিন নীতি আয়োগের বৈঠকে নিজের প্রারম্ভিক বক্তৃতায় মোদী শুরুই করলেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর অভিজ্ঞতা তুলে ধরে। বললেন, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি নিশ্চিত, সব মুখ্যমন্ত্রীর সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই গড়ে উঠতে পারে ‘নতুন ভারত’। আর সেটাই যে তাঁর স্বপ্ন, তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন বারেবারে।
আরও পড়ুন:নীতি আয়োগের বৈঠকে এলেনই না মমতা, তবু মূল্যায়ন রাজ্যের
মোদী মুখে সকলকে নিয়ে চলার কথা বললেও আজ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বৈঠকে না এসে বুঝিয়ে দিয়েছেন, মোদী-জমানায় কেন্দ্র যে ভাবে রাজ্যের ঘাড়ে সব দায় চাপিয়ে দিচ্ছে, সেটি তাঁর না-পসন্দ। অরবিন্দ কেজরীবাল দিল্লিতে থাকলেও এই বৈঠকে আসেননি। নীতীশ কুমার, নবীন পট্টনায়ক, অমরেন্দ্র সিংহ, মানিক সরকারের মতো বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীরা অবশ্য এসেছিলেন। কিন্তু তাঁদের অনেকেই আজ সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেন যে, আঞ্চলিক বৈষম্য যে হারে বাড়ছে, তাতে রাজ্যগুলিকেই খেসারত দিতে হচ্ছে। বিহার, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীরাও বঞ্চনার কথা তোলেন।
সমাপ্তি বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী আঞ্চলিক বৈষম্যের বিষয়টি মেনে নেন। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক মুখ্যমন্ত্রীই আঞ্চলিক বৈষ্যমের কথা তুলেছেন। আমি এই বিষয়ে একমত। জাতীয় স্তরে ও রাজ্যগুলির মধ্যে বিষয়টিকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিবেচনা করা হবে।’’ কেন্দ্র যে সব কিছু একতরফা ভাবে চাপিয়ে দিচ্ছে না, তা বোঝাতে একগুচ্ছ প্রকল্পের উল্লেখ করে মোদীর দাবি, রাজ্যের মত নিয়েই তিনি ওই সব প্রকল্প করেছেন।
এই বৈঠক শেষ হওয়ার পরে দিল্লিতে দলের সদর দফতরে বিজেপি-শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মোদী। লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি কী ভাবে কেন্দ্রের প্রকল্পগুলি তৃণমূল স্তর পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারে, তা নিয়ে বিশদে কথা হয়। বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, উত্তরপ্রদেশের ভোট দেখিয়ে দিয়েছে, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে গরিবরা দু’হাত তুলে মোদীকে ভোট দিয়েছেন। ফলে কেন্দ্রের প্রকল্প যত নিচু তলায় পৌঁছবে, ততই ভোটে জেতা সহজ হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy